দেবী সরস্বতীর রঙ সাদা কেন, বাহন কেন হাঁস?

::
প্রকাশ: ২ years ago

পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট:
হিন্দুধর্ম অনুসারে জ্ঞান, বিদ্যা, শিল্পকলা ও সঙ্গীতের আরাধ্যা দেবী হলেন সরস্বতী। আজ সারাদেশে পালিত হবে সরস্বতী পুজা।

শুক্ল বর্ণ বা সাদা ভালো গুণের প্রতীক। ‘’তত্র সত্ত্বং নির্মলাত্বাৎ’ অর্থাৎ সত্ত্ব, তম ও রজোগুণের মধ্যে সত্ত্বগুণ অতি পবিত্র গুণ। সাদা রঙ স্বচ্ছতা, সত্ত্ব গুণ, নির্মলতার প্রতীক। ‘’সত্ত্বাৎ সংজায়তে জ্ঞানং’’ অর্থাৎ সত্ত্বগুণ থেকে জ্ঞান লাভ হয়। তাই দেবী জ্ঞানময়ী সর্বশুক্লা। জ্ঞানে গুণান্বিত বলেই গায়ের রঙ শুক্লবর্ণ অর্থাৎ দোষহীনা পবিত্রতার মূর্তি। আর জ্ঞান দান করেন বলেই তিনি জ্ঞানদায়িনী। দেবীর এই শুভ্রমূর্তি নিষ্কলুষ চরিত্রের প্রতীক। এটা প্রত্যেক ছেলেমেয়েকে নিষ্কলুষ নির্মল চরিত্রের অধিকারী হওয়ার শিক্ষা দেয়।

ছাত্রবস্থা থেকেই শিক্ষার্থীদের নিজেকে তার সকল কর্ম, চিন্তা, চেতনায় নিষ্কলুষ রাখতে হবে। এটা মনে রেখে মায়ের প্রতিমা শ্বেত শুভ্র মাতৃরূপী সনাতনী ধর্মীয় রীতি নীতি মেনেই করা উচিত।

সরস্বতী সম্পর্কে পুরাণে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। শ্বেতপদ্মের ওপর এই আসীন এই দেবীর বাহন শ্বেতহংস, তিনি নিজেও শ্বেতবর্ণা। তার একহাতে বীণা ও অন্য হাতে পুস্তক। জেনে নিন কেন সরস্বতী শ্বেতবর্ণা, কেন তার হাতে বীণা থাকে?

সরস্বতী কেন শুক্লবর্ণা?
পরমব্রহ্ম বা ঈশ্বরের সৃষ্টিকারী রূপের নাম ব্রহ্মা আর ব্রহ্মার নারী শক্তির নাম সরস্বতী। ব্রহ্মার মুখগহ্বর থেকে সৃষ্টি হয় দেবী সরস্বতীর। দেবী সরস্বতীর শুভ্রমূর্তি তাঁর নিষ্কলুষ চরিত্রের প্রতীক। শুক্ল বর্ণ মানে সাদা হল ভালো গুণের প্রতীক। এটা এই শিক্ষা দেয় যে, প্রত্যেক ছেলে ও মেয়েকে হতে হবে নিষ্কলুষ নির্মল চরিত্রের অধিকারী। জ্ঞানময়ী সর্বশুক্লা দেবী শ্রী শ্রী সরস্বতী সর্ব জ্ঞানে গুণান্বিত বলে তার গায়ের রঙ শুক্লবর্ণ অর্থাৎ দোষহীনা। পবিত্রতার মূর্তি আর জ্ঞানদান করেন বলে তিনি জ্ঞানদায়িনী।

 

সরস্বতীর সঙ্গে রাজহাঁস থাকে কেন?
জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর বাহন রাজহংস। কারণ হাঁস অসারকে ফেলে সার গ্রহণ করে। রাজহাসেঁর মধ্যে এমন ক্ষমতা আছে যে, এক পাত্রে থাকা জল মিশ্রিত দুধের থেকে সে শুধুমাত্র দুধ শুষে নিতে পারে। সরস্বতী যেহেতু শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট পূজা, সেই প্রেক্ষাপটে এটা বলা যেতে পারে যে, রাজহাসেঁর এই তথ্য শিক্ষার্থীদের এই শিক্ষা দেয় যে, সমাজে ভালো মন্দ সব কিছুই থাকবে, তার মধ্যে থেকে তোমাদের শুধু ভালোটুকু শুষে নিতে হবে।

 

সরস্বতীর হাতে বীণা থাকে কেন?
দেবী সরস্বতীর হাতে বীণা থাকে। সেই কারণে তাঁর আরও এক নাম বীণাপাণি, কারণ পাণি শব্দের অর্থ হাত। বীণার ঝংকারে উঠে আসে ধ্বনি বা নাদ। বিদ্যার দেবী সরস্বতীর ভক্তরা সাধনার দ্বারা সিদ্ধিলাভ করলে বীণার ধ্বনি শুনতে পায়। বীণার সুর অত্যন্ত মধুর। তাই বিদ্যার্থীদেরও মুখ নিঃসৃত বাক্যও যেন মধুর ও সঙ্গীতময় হয়। হিন্দু ধর্ম হলো নাচ, গান সমৃদ্ধ শিল্পকলার ধর্ম, যা সামাজিক বাস্তবতাকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করে। কারণ, প্রত্যেক মানুষই কোনও না কোনও প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। প্রকৃতির ধর্ম হিসেবে হিন্দুধর্ম এই সামাজিক বাস্তবতাকে স্বীকার করে, এই কারণেই দেবী সরস্বতীর হাতের বীণা হচ্ছে সেই শিল্পকলার প্রতীক।

 

সরস্বতীর হাতে পুস্তক থাকে কেন?
পুস্তক হলো জ্ঞানের ভাণ্ডার বা জ্ঞানের বাস হলো পুস্তকে। যেহেতু সরস্বতী হল জ্ঞানের দেবী, তাই তার হাতে থাকে পুস্তক বা পূজায় পাঠ্যপুস্তক দিতে হয়।

 

সরস্বতীর দুই হাত না চার হাত?
বর্তমানে দেবী সরস্বতীকে দুই হাত বিশিষ্ট দেখা গেলেও দেবী সরস্বতীর মূল মূর্তি আসলে চার হাত বিশিষ্ট, এরকম ছবি আপনারা অনেকে জায়গায় দেখলেও দেখে থাকতে পারেন, সরস্বতীর মূল থিমের সাথে এই চার হাত–ই মানানসই; কারণ হলো- পড়াশুনার পাশাপাশি কেউ যদি নাচ গান বা অন্য যে কোনো শিল্পকলায় এক্সপার্ট হতে চায়, তাকে দুই হাতের শক্তি ও ব্যস্ততা নিয়ে কাজ করলে চলবে না, তাকে চার হাতের শক্তি ও ব্যস্ততা নিয়ে কাজ করত হবে।

 

সরস্বতীর আসন, রাজহাঁস, না পদ্মফুল?
অনেক কাঠামোতে দেখা যায়, সরস্বতী দেবী হাঁসের উপর বসে আছে আবার কোনো কাঠামোয় দেখা যায় পদ্মফুলের উপর; পদ্মফুলের উপ সরস্বতীর আসন–ই সঠিক আসন। এর কারণ- পূর্ণ প্রস্ফুটিত পদ্মফুল হলো সফল ও সমৃদ্ধ জীবনের প্রতীক; এই কারণেই লেখা হয়েছে- “ফুলের মতো গড়বো মোরা মোদের এই জীবন” এই ধরণের কবিতা। এককথায় ফুলের বিকাশের সাথে মানুষের জীবনের বিকাশকে তুলনা করা হয়েছে। পূর্ণ বিকশিত একটি পদ্মফুলের উপর সরস্বতীর বসে থাকার মানে হলো- সরস্বতীর আদর্শকে লালন করে নিজের জীবনকে বিকশিত করতে পারলে সেই জীবনও ফুলের মতোই পবিত্র, সুন্দর, বিকশিত ও সমৃদ্ধ হবে।

 

সরস্বতী কেন মাতৃ মূর্তি?
স্বয়ং ঈশ্বর হলেও সরস্বতী নারী মূর্তি অর্থাৎ মাতৃমূর্তি, এর কারণ হলো- পিতার চেয়ে মায়ের কাছে কোনো কথা বলা সহজ বা কোনো কিছু চাওয়া সহজ। সরস্বতীর পূজারীরা যেহেতু সাধারণভাবে শিশু বা বালক-বালিকা অর্থাৎ শিক্ষার্থী, তাই তারা যাতে সহজে নিজের মনের কথা নিজের মনের আকুতি, দেবী মায়ের কাছে জানাতে পারে, এজন্যই সরস্বতীকে কল্পনা করা হয়েছে মাতৃরূপে।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ‘আমাদের ভারত’-এ উল্লেখ করা হয়েছে, বৌদ্ধ মতবাদ যেহেতু সনাতন ধর্ম থেকে উদ্ভূত, সেই কারণেই হোক বা হিন্দুদের জ্ঞান অর্জনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখেই হোক, বৌদ্ধরাও সরস্বতী পূজা করে।


Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। আপনিও লিখুন।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net