দুপুরে গ্রেপ্তার, বিকেলে জামিন, রাতে মুক্ত

::
প্রকাশ: ২ years ago
কারাগারে যাওয়ার পথে মাহিয়া মাহি। ছবি: সংগৃহীত

কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। রাত পৌণে ৮টায় তিনি কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন।

এর আগে জামিন না-মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর সাড়ে তিন ঘণ্টা পর মাহিয়া মাহিকে জামিন দেন আদালত। বিকেলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেন মাহির জামিন মঞ্জুর করেন।

প্রেগনেন্সি ও সেলিব্রেটি বিবেচনায় আদালত এ আদেশ দিয়েছেন বলে জানান মাহির আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনোয়ার শাহাদাত সরকার। তিনি বলেন, তার মক্কেল আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই মামলা হওয়ার পরও দেশে চলে এসেছেন।

পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

এর আগে দুপুরে পুলিশের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. ইকবাল হোসেন তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে মাহিকে গাজীপুর জেলা কারাগারে নেয়া হয়।

এর আগে গতকাল বেলা ১২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে, আদালত রিমান্ড না মঞ্জুর জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেয়। এই মামলায় আরেক আসামি তার স্বামী রাকিব সরকার পলাতক রয়েছেন। গাজীপুর মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

একাধিক প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, শনিবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে মাহিয়া মাহি সউদী আরব থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এরআগে ওমরাহ পালন করতে যাওয়া মাহি সৌদি আরবের মক্কা শহর থেকে গত শুক্রবার ভোরে ফেসবুক লাইভে আসেন। লাইভে তার স্বামী রকিব সরকারের গাড়ির শোরুমে ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগ করেন।

ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্ব পাশে ‘সনিরাজ কার প্যালেস’ নামে তার স্বামীর একটি গাড়ির শোরুম রয়েছে। সেই শোরুমে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীরা তার শোরুমের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা শোরুমের বিভিন্ন আসবাব, দরজা-জানালার কাচ, টেবিল-চেয়ার ভাঙচুর করেছে। শোরুমের সাইনবোর্ডও খুলে ফেলেছে। দুর্বৃত্তরা তার অফিসকক্ষ তছনছ করে টাকাপয়সা লুট করে নিয়ে গেছে। ইসমাইল হোসেন ওরফে লাদেন ও মামুন সরকারের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন মাহি।

লাইভে তিনি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে ‘ঘুষ’ নেয়ার অভিযোগ তোলেন মাহি। পরে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযোগে মাহিয়া মাহি ও রকিব সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে পুলিশ।

গত শুক্রবার রাতে বাসন থানার এসআই রোকন মিয়া বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় মাহিয়া মাহির বিরুদ্ধে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করা, আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর লক্ষ্যে মিথ্যাচার, বানোয়াট, আক্রমনাত্মক, কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর তথ্যপ্রচারের অভিযোগ করা হয়। এর আগে বাসন থানায় ইসমাইল হোসেন নামে এক ব্যক্তি চাঁদা দাবি ও মারধরের অভিযোগ এনে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম গত শনিবার দুপুরে তার নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি পুলিশের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ করেছেন, মিথ্যা বলে মানুষের সহানুভূতি নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অথচ মাহী বা তার স্বামী জমিজমা সংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে আমার কাছে আসেননি। যাদের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেছেন, তাদেরও আমি চিনি না। ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

তিনি আরো বলেন, গত শুক্রবার ভোরে বিষয়টি জানার সাথে সাথেই সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দু’পক্ষই পালিয়ে যায়। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটে। ইসমাইল হোসেনসহ তার পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে আহত ইসমাইল বাদী হয়ে ২৮ জনের বিরুদ্ধে বাসন থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।

মাহীর ফেসবুক লাইভের পর সংবাদ সম্মেলন করেন স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, রকিব সরকার তার প্রায় সোয়া ১১ শতাংশ জমি দখল করে গাড়ির শো-রুম করেছেন। সরকারের বিভিন্ন দফতরে তিনি এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন, বিষয়টি মীমাংসার জন্য দফায় দফায় চেষ্টাও করা হয়। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে নতুন কিছু গাড়ি রকিব সরকারের লোকজন ওই শো-রুমে উঠাতে থাকে। তিনি আরো বলেন, এমন খবর পেয়ে আমিসহ কয়েকজন সেখানে হাজির হই। এ সময় রকিব সরকারের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা নিজেরাই নিজেদের শো-রুম ভাঙচুর করেছে। ওই জমি রকিব সরকারের নয়। তিনি আরো বলেন, জমি ছেড়ে দেয়ার শর্তে রাকিব সরকার আমার কাছে এক কোটি টাকা দাবি করেছিলেন। যেখানে এক কোটি টাকা দিলে সমস্যা সমাধান হয়, সেখানে কেন আমি পুলিশকে দেড় কোটি টাকা দেব? পুলিশ আমার পক্ষে থাকলে আজ কেন আমি মার খেলাম? মেট্টোপলিটন পুলিশকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই রকিব সরকার তার স্ত্রী চিত্রনায়িকা মাহিকে ব্যবহার করছেন।


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।


Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net