দুই ভাবির সঙ্গে পরকীয়া ছিল রায়হানের, যে কারণে….

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ২ সপ্তাহ আগে
প্রতীকী ছবি

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় দুই ভাবির সঙ্গে পরকীয়া সর্ম্পক ছিল রায়হানের। কিন্তু এক পর্যায়ে বিষয়টি জেনে ফেলে কিশোর মোস্তাকিন। যে কারণে তাকে খুন হতে হয়।

পরকীয়ার ঘটনা দেখে ফেলায় কিশোর মোস্তাকিনকে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার প্রধান আসামি রায়হান উদ্দিন।

রায়হানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাসলিমা আক্তার (২০) ও রোজিনা বেগম (২৮) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত তাসলিমা আক্তার ও রোজিনা বেগমকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের আদালতে ১৬৪ ধারায় মোস্তাকিন হত্যা মামলার প্রধান আসামি রায়হান উদ্দিনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে র‌্যাব-৯ সিলেট ও শায়েস্তাগঞ্জ ক্যাম্পের যৌথ অভিযানিক দল সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর মোস্তাকিন হত্যা মামলার প্রধান আসামি রায়হান উদ্দিনকে (২২) গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর নবীগঞ্জ থানায় রায়হানকে হস্তান্তর করে র‌্যাব। পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে রায়হান। রায়হানের দেয়া তথ্যমতে একটি জমি থেকে তালাচাবি ও রায়হানের বসতঘরের একটি প্যান্ট থেকে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের পুরানগাঁও গ্রামের মৃত জফর মিয়ার ৫ ছেলে। এদের মধ্যে বড় ভাই ফজলু মিয়া দুবাই প্রবাসী, ২য় ভাই সজলু মিয়া ওমান প্রবাসী, ৩য় ভাই সজল মিয়া মৌলভীবাজারের সরকার বাজার এলাকায় একটি ব্রিক ফিল্ডে কাজ করে, চতুর্থ নিহত মোস্তাকিন ও সবার ছোট তামিম।

মোস্তাকিন তার মা ফুলবানু বিবি, ছোট ভাই তামিম ও দুই প্রবাসী বড় ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে একই বাড়িতে বসবাস করতেন। সেজভাই সজল মিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে তাদের বাড়িতে একই গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে ও মামলার প্রধান আসামি রায়হান মিয়ার নিয়মিত যাতায়াত ছিল।

মামলার প্রধান আসামি রায়হান উদ্দিন।

যাতায়াতের সুবাদে মোস্তাকিনের ঘরের ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের পাসওয়ার্ডসহ রাউটারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল রায়হানের হাতে। সজল মিয়া সিলেট কাজে যাওয়ার পরও তাদের বাড়িরে রায়হানের যাতায়াত অব্যাহত ছিল।

আদালতে রায়হান উদ্দিনের দেয়া জবানবন্দির তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, নিহত মোস্তাকিনদের বাড়িতে অবাধ যাতায়াতের সুবাদে প্রথমে মোস্তাকিনের ২য় বড় ভাই ওমান প্রবাসী সজলু মিয়ার স্ত্রী তাছলিমা বেগম ও পরে ১ম বড় ভাই দুবাই প্রবাসী ফজলু মিয়ার স্ত্রী রোজিনা বেগমের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ায় রায়হান। এক পর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হলে প্রায় প্রায় দুই/তিন মাস পূর্বে এ বিষয়ে সালিশ বিচার বসে। শালিসে উভয় পক্ষকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। অভিযুক্ত রায়হানকে মোস্তাকিনদের বাড়িতে আসতে নিষেধ এবং রায়হানকে দ্রুত বিয়ে করানোর জন্য তার পরিবারকে নির্দেশ দেয়া হয়। শালিসের রায় মেনে সম্প্রতি রায়হানকে বিয়েও করায় তার পরিবার। তবে সালিশ ও বিয়ের পরও মোস্তাকিনের বাড়িতে রায়হানের যাতায়াত অব্যাহত ছিল।

গত রবিবার (২৪ নভেম্বর) রাত প্রায় ৮টার দিকে মোস্তাকিনদের বাড়িতে যায় রায়হান উদ্দিন। ঘরে প্রবেশের পর রায়হান উদ্দিন প্রথমে মোস্তাকিনের মেজো ভাবী তাছলিমা বেগমের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ায়। পরে বড় ভাবী রোজিনা বেগমের শয়নকক্ষে যাওয়ার সময় নিহত মোস্তাকিন বিষয়টি দেখে ফেলে। এক পর্যায়ে মোস্তাকিন তাদের বাড়িতে গোপনে রায়হান আসার ঘটনা মা ফুলবানু বিবি বাড়িতে আসলে বলে দিবে বলে রায়হানকে হুমকি দেয়।

ভয় পেয়ে তাসলিমা আক্তার ও রোজিনা বেগমকে নিয়ে মোস্তাকিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে রায়হান। পরিকল্পনা অনুযায়ী স্থানীয় ইমামবাড়ি বাজার হতে ১টি ছুরি ও দুটি তালা কিনে আনে রায়হান। পরে মোস্তাকিনের শয়নকক্ষে প্রবেশ করে মোস্তাকিনের দুই পা তাছলিমা বেগম ও দুই হাত শরীর রোজিনা বেগম চেপে ধরে রাখে। এক পর্যায়ে রায়হান বাম হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে ও ডান হাত দিয়ে মোস্তাকিনের গলা ছুরি দিয়ে জবাই করে মোস্তাকিনকে হত্যা করে।

পূর্ব পরিকল্পনা এ ঘটনার পর নিহত মোস্তাকিনের দুই ভাবী চিৎকার ও কান্না করতে থাকে। এসময় তাদের চিৎকার শোনে আশপাশের মানুষ ছুটে আসে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।

পরে ২৫ নভেম্বর নবীগঞ্জ থানায় ওয়াই-ফাই নিয়ে বিরোধের জের ধরে মোস্তাকিনকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করে রায়হান উদ্দীনসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ফুলবানু বিবি।