দিবসের বেড়াজাল মুক্ত হোক ‘মা’

::
প্রকাশ: ১ বছর আগে

প্রতি বছর মে মাসের ২য় রোববার ‘মা’ দিবস পালিত হয় সারা বিশ্বে। একটি বিশেষ দিবসে ‘মা’-কে বেঁধে রাখা হবে কেনো? হ্যাঁ দিবস থাকা দোষের নয়, কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এটি একটি প্রথা বা অনুষ্ঠান সর্বস্ব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯০৭ সালের ১২ মে প্রথমবার আমেরিকার ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রাফটন শহরে ‘মাদার্স ডে’ বা মা দিবস পালিত হয়। ভার্জিনিয়ায় অ্যান নামে এক শান্তিবাদী সমাজকর্মী ছিলেন। তিনি নারী অধিকার নিয়ে কাজ করতেন। তিনি ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অ্যানের একটি মেয়ে ছিল, যার নাম আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস। একদিন ছোট মেয়ের সামনেই অ্যান হাত জোড় করে বলেছিলেন ‘আমি প্রার্থনা করি, একদিন কেউ না কেউ, কোনো মায়েদের জন্য একটা দিন উৎসর্গ করুক। কারণ তারা প্রতিদিন মনুষ্যত্বের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে চলেছেন। এটি তাদের অধিকার। মায়ের সেই প্রার্থনা হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায় অ্যানার। অ্যানের মৃত্যুর দিনটিকে সারাবিশ্বের প্রতিটি মায়ের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন তিনি। তার পর থেকে মায়েদের প্রতি সম্মানে পালিত হয়ে আসছে ‘মা’ দিবস। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উন্ড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা দিবস’ ঘোষণা করেন।

পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

মা স্নেহের ধন, পরম মমতার আকর। মাকে ঘিরে লেখা হয়েছে হাজারও কবিতা, গল্প-উপন্যাস। মাকে নিয়ে লেখা বিশ্বসেরা উপন্যাস লিখেছেন ম্যাক্সিম গোর্কি, মানিক বন্দোপাধ্যায় লিখেছেন ‘জননী’, শরৎচন্দ্র লিখেছেন বিন্দুর ছেলে ও রামের সুমতি, রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ‘গোরা, শওকত ওসমান ‘জননী’ ও আনিসুল হক লিখেছেন ‘মা’ উপন্যাস। এছাড়াও মা কেন্দ্রীক অসংখ্য লেখার মধ্যে রয়েছে হুমায়ুন আহমেদের ‘জ্যোৎসনা ও জননীর গল্প’ জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি’ ইত্যাদি। ‘লা মাদ্রে’ লিখেছেন ইতালিয় লেখক ‘গ্রেজিয়া দেলেদ্দা’। তিনি এ উপন্যাস লিখে ১৯২৬ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ‘জননী’ বইটি লিখেছেন ‘রিংকি ভট্টাচার্য’। তিনি তার এ বইতে মাতৃত্বকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। শুধু মায়েদের জন্যই নয়, পিতা ও সন্তানদের জন্যও বইটি বেশ উপযোগী। ‘মাদার ইন্ডিয়া’ বইটি লিখেছেন ‘গায়ত্রী চ্যাটার্জি’। এটি মায়েদের কেন্দ্র করে লেখা অনেক স্পর্শকাতর ও ট্র্যাজিডি সমৃদ্ধ একটি বই।

হিন্দু ধর্মে মায়ের স্থান অনেক উঁচুতে। চন্ডীতে স্তব মন্ত্রে বলা হয়েছে, “যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা”। শুধু তাই নয়, বলা হয়েছে, ‘সহস্র পিতা অপেক্ষা মাতা সম্মানার্হা।’ খ্রিস্ট ধর্মেও ‘মা’কে দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান। এমনকি যিশু নিজেও জন্মেছেন এক মহিয়সী মায়ের গর্ভে। মানবতার ধর্ম ইসলাম মায়ের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। পবিত্র কুরআনের অন্তত পনেরো জায়গায় পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে, দেওয়া হয়েছে মাকে সম্মানের উচ্চাসন। আর একাধিক হাদিসের সারকথা হলো, মায়ের সেবা-শুশ্রƒষা দ্বারা জান্নাতের হকদার হওয়া যায়। মায়ের সন্তুষ্টি দুনিয়ার সাফল্য ও আখিরাতের মুক্তির কারণ। নবী করিম (সা.) মায়ের মর্যাদা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।’ নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তারা (পিতা-মাতা) উভয়েই তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম।’ অর্থাৎ তাদের আনুগত্য ও সেবাযতœ (মানুষকে) জান্নাতে নিয়ে যায় এবং তাদের সঙ্গে বেয়াদবি ও তাদের অসন্তুষ্টি জাহান্নামে পৌঁছে দেয়।

একথা বলতে দ্বিধা নেই, সমাজের অনেকেই খুব ঘটা করে বছরের একটি দিনকে মা দিবস হিসেবে পালন করেন। দুর্ভাগ্যবশত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এ মায়েরা শেষ বয়সে অনেকটা অযত্ন-অবহেলায় কিংবা কোনো বৃদ্ধাশ্রমে জীবন-যাপন করছেন। এমন আচরণ ও লোকদেখানো মনোভাব কাম্য নয়। বরং পিতা-মাতার প্রতি এমন দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে, যা পিতা-মাতার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতাবোধকে প্রতিফলিত করে।

সবশেষে বলতে চাই, আসুন মাকে লোক দেখানো ভালো না বেসে প্রতিদিন মাকে ভালোবাসি। শুধু মাকে কেনো, বাবাকেও। পরিবারের সকলের প্রতি, সমাজের প্রতিটি মানুষের প্রতি স্নেহ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা নিবেদন করি। শান্তির সমাজ বিনির্মানে পরস্পর সহযোগিতার মনোভাব পোষণ করি। বিশেষতঃ মাকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিই। অবহেলা আর অযত্ন যেনো কোনো মা দিন না কাটায় সেদিকে নজর রাখি। নিজের মায়ের পাশাপাশি, অসহায় মায়েদেরও খোঁজ রাখি। বৃদ্ধাশ্রমে যেনো কোনো মাকে আর রাত কাটাতে না হয় সে প্রত্যাশা রাখি।

লেখক: বিলাল হোসেন মাহিনী; প্রভাষক, গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা ও পরীক্ষক : ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।


Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net