পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট:
‘দলিলাদি যার, জমি তার’ এই ভাবনা থেকেই ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের খসড়া তৈরি করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে দলিলাদি বলতে যথাযথ নিবন্ধন দলিল, খতিয়ানসহ আনুষঙ্গিক নথিপত্রকে বোঝানো হয়েছে। এর ফলে সঠিক কাগজপত্র ছাড়া কেবল দখল করে জমির মালিকানা দাবির দিন শেষ হচ্ছে।
এ বিষয়ে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ প্রণয়ন করছে সরকার। ইতোমধ্যে খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। এ আইনের আওতায় অবৈধ ভূমি দখলকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে উপযুক্ত শাস্তি ও জরিমানার ব্যবস্থা থাকবে।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানা গেছে, আদালতে এখন যত মামলা রয়েছে তার ৭০ শতাংশ জমি সংক্রান্ত। যার বেশিরভাগই জমির দখল বিষয়ক মামলা। আর এসব মামলা চলতে থাকে বছরের পর বছর। নিষ্পত্তি হওয়ার হারও উল্লেখযোগ্য নয়। নতুন আইনে ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান সহজে হয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
শুধু দখলের ভিত্তিতে জমির মালিকানা লাভের বিধান আর থাকছে না। ১৮৮৫ সালে প্রণীত দখল স্বত্ব আইনটি সম্প্রতি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় আশা করছে, জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই আইনটি পাসের জন্য সংসদে তোলা সম্ভব হবে।
দখল স্বত্ব আইন অনুযায়ী, কোনো সম্পদ ১২ বছর পর্যন্ত নিজের দখলে রাখতে পারলেই সেই সম্পদের মালিকানা দাবি করা যায়। আইনটি পরিবর্তন হলে জমির মালিকানা নির্ধারণ হবে দলিলের ভিত্তিতে। অর্থাৎ যার নামে দলিল থাকবে তিনিই হবেন ওই ভূমির মালিক।
বিদ্যমান আইনের অজুহাতে প্রচুর সরকারি সম্পত্তি বেদখল হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। ব্যক্তিমালিকানার অনেক সম্পত্তি নিয়েও বিরোধ গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। এর বাইরেও জমির দখল নিয়ে সহিংসতার কারণে মামলা-মোকদ্দমা নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
আইনটিতে পরিবর্তন এলে দেওয়ানি মামলার একটি বড় অংশই কমে আসবে বলে মনে করছে সরকার। নতুন আইনটির নাম রাখা হয়েছে ‘ভূমির ব্যবহার স্বত্ব গ্রহণ আইন, ২০২০’।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (আইন) খলিলুর রহমান বলেন, মূলত মালিকানা না থাকলে জমি নিজের থাকবে না। জোর করে দখল করে রাখা যাবে না -এগুলো রোধ করার জন্যই আইনটি করা হচ্ছে।
তিনি জানান, যার সঠিক কাগজপত্র আছে, মালিকানার হক আছে, জমির মালিকানা তারই। কাগজপত্র ছাড়া জমি দখলে রাখার দিন শেষ হচ্ছে।
যেক্ষেত্রে মালিকানা দাবির জন্য দুই বা তার বেশি পক্ষ হবে সেক্ষেত্রে সমাধান কী হবে -জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আগে মূল মালিক কে, তা শনাক্ত করতে হবে। বিষয়টি সমাধানের জন্য আইনি ব্যবস্থা রয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ আইনের প্রাথমিক খসড়া তৈরি করে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের মতামত চায় মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে এক হাজারের বেশি মতামত পাওয়া গেছে। এসব মতামত সমন্বয় করছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (আইন-১) আবুল কালাম তালুকদার বলেন, ভূমির ক্ষেত্রে যদি কোনও অপরাধ সংগঠিত হয় সে ক্ষেত্রে মামলা দীর্ঘদিন পেন্ডিং থাকে। এক্ষেত্রে মানুষের পরিশ্রম এবং ব্যয় বাড়ে। সরকারি সেবার প্রতি মানুষের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এজন্য যাতে মানুষকে দ্রুত সেবা দেওয়া যায় সেজন্যই এ আইন।
‘আপনি একটি অভিযোগ করলেন, আমার কাগজপত্র আছে; কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখে যদি বোঝা যায় সবকিছু ঠিক আছে তাহলে সহজেই সমাধান করা যাবে। এক্ষেত্রে হয়তো আগে যেটা দশ বছর লাগতো সেটা এখন এক বছর বা ক্ষেত্র বিশেষ ইনস্ট্যান্টলিও সমাধান হতে পারে। মোটকথা হচ্ছে জমি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে লম্বা সময়ের পরিবর্তে কম সময়ে আনাই এ আইনের লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, ‘আইনটির প্রাথমিক খসড়া এখন আমাদের কাছেই আছে। আমরা এটা নিয়ে আরও কাজ করছি। আমরা বিভিন্ন জনের মতামত নিয়েছি। এসব মতামত সমন্বয় করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। এরপর তারা যাচাই-বাছাই শেষে যদি অনুমোদন করে পরবর্তী ধাপে আইন মন্ত্রণালয় রয়েছে, এরপর জাতীয় সংসদে আইনটি পাস হবে। পাস হওয়ার পর এ আইন কার্যকর হবে।’
উপসচিব বলেন, ‘মানুষ যাতে সরকারি নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে কম সময়ের মধ্যে তাদের সমস্যার সমাধান পান, সেটিই আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আইনটি পাস হলে ভূমি সংক্রান্ত অনেক সমস্যা দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি।’
এ বিষয়ে সচিবালয়ে একটি সভা শেষে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, প্রকৃত মালিকদের স্বত্ব ও দখলভোগ নিশ্চিত করা, অবৈধভাবে ভূমির দখল রোধ এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধ প্রতিরোধ ও দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিত করা ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
তিনি আরও বলেন, নাগরিকের কল্যাণের জন্যই আইন তৈরি করা হয়। মূল্যবান ভূ-সম্পদের রক্ষা করার প্রথম দায়িত্ব আমাদের নিজেদের। এজন্য সংশ্লিষ্ট আইন সম্পর্কেও আমাদের সবার স্বচ্ছ ধারণা থাকা উচিত। দেশের নাগরিকরা যেন আইন-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির তথ্য সঠিকভাবে পান সেজন্যও কাজ করে যেতে হবে।