তীব্র তাপদাহে ১০ দিনে প্রান্তিক খামারিদের ক্ষতি ২০০ কোটি টাকা

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ৮ মাস আগে

একদিকে মুরগির বাচ্চার সংকট অন্যদিকে ২৮ থেকে ৩০ টাকা উৎপাদন খরচের মুরগির বাচ্চা খামারিরা দ্বিগুণ দামে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় ক্রয় করেছে । ঈদের পর থেকে শুরু হওয়া চলমান তাপপ্রবাহের ফলে হিটস্ট্রোকের কারণে সারা দেশে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ মুরগি মারা যাচ্ছে যার আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের (বিপিএ) পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিপিএ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, এই ভয়ানক পরিস্থিতিতে, ডিম ও মুরগি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য হ্রাস পেয়েছে, ৪ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ।এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে ব্রয়লার মুরগি ও ডিম সরবরাহে সংকট দেখা দিতে পারে।

বিপিএ জানায়, ঈদের পর গত ১০ থেকে ১২ দিনে সারাদেশে ১০ লাখের বেশি ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালী মুরগি মারা গেছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ছিল ব্রয়লার মুরগি এবং ১০-১৫ শতাংশ ছিল লেয়ার মুরগি। এছাড়া সোনালীসহ অন্যান্য মুরগির ০৫ শতাংশ মারা গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২০০ কোটি টাকা। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন চলতে থাকলে খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। ডিম ও মুরগির উৎপাদন কমে যাবে।

এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কর্পোরেট ডিম মুরগি সরবরাহকারী ও তেজগাও ডিম সিন্ডিকেট ডিম ও মুরগির সংকট তৈরি করবে। জুন থেকে তারা দাম বাড়াতে শুরু করবে। আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডিম ও মুরগির দাম মারাত্মক ভাবে বাড়বে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের উচিত পোল্ট্রি খামারিদের রক্ষা করা। যেমন সরকারের পক্ষ থেকে খামারিদের মুরগির বাচ্চা ও পোল্ট্রি ফিডে ভর্তুকি দিয়ে উৎপাদনে ধরে রাখতে হবে এবং সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে হবে যাতে করে বাজারে যাতে সংকট সৃষ্টি না হয়। প্রান্তিক খামারিদের কর্পোরেট কোম্পানির জিম্বি দশা থেকে মুক্তি করে ডিম মুরগির উৎপাদন ঠিক রাখতে মুরগির বাচ্চা ও পোল্ট্রি ফিড বিদেশ থেকে আমদানির অনুমতি দিতে দিলে প্রান্তিক খামারিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে ।

বিপিএ’র সারাদেশের খামারিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মুরগির মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি নরসিংদীতে। এ অঞ্চলে গত ১২ দিনে প্রায় ৩ লাখ, ময়মনসিংহ গাজিপুর অঞ্চলে ২ লাখ, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১ লাখ ৭৫ হাজার, সিলেট অঞ্চলে ৫০ হাজার যশোর ১ লাখ ৫০ হাজার, পাবনা ৫০ হাজার, চুয়াডাঙ্গা ১ লাখ , মুরগি মারা গেছে। কর্পোরেট সিন্ডিকেট তেজগাঁয়ের ডিম সিন্ডিকেট মুরগি সিন্ডিকেট এর কবলে পরে খামারিরা কখনোই ডিম মুরগির ন্যায্য মূল্য পায়না। একের পর এক বিপর্যয় প্রান্তিক মুরগির খামারিদের ওপর পরছে বর্তমানে দেশে ৬০-৬৫ হাজার প্রান্তিক মুরগির খামার রয়েছে। ২০ হাজার খামারি কর্পোরেট গ্রুপের সাথে কন্টাক্ট ফার্মে যুক্ত আছে। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন চলতে থাকলে নতুন করে আবারও বন্ধ হয়ে যাবে ১৫ থেকে ২০ হাজার খামার।

প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারিরা কখনোই ডিম মজুত করতে পারে না। তবে করপোরেট গ্রুপগুলো ও ঢাকা তেরজগাও কাপ্তান বাজার সহ দেশের অধিকাংশ ডিম ব্যবসায়ীরা কোল্ড স্টোরেজের মাধ্যমে ডিম মজুত করা শুরু করেছে। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তারা বেশি দামে ডিম মুরগি বিক্রি করবেন। প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন সোনালী লেয়ার মুরগির চাহিদা ১২০০ টন স্বাভাবিক সময়ে ব্রয়লার সোনালী লেয়ার মুরগির মাংস উৎপাদন হত ৫ হাজার ২০০ টন চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি ছিল। তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাবে তাই মাংসের মুরগি উৎপাদন নেমে আসতে পারে ৪ হাজার টনে । দৈনিক ডিমের চাহিদা ৪ কোটি পিস, যেখানে স্বাভাবিক সময়ে সাড়ে ৪ কোটি পিস ডিম উৎপাদিত হয়, যা চাহিদার চেয়ে বেশি। তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এখন দৈনিক মাত্র ৩ কোটি ৮০ লাখ থেকে ৯০ লাখ পিস ডিম উৎপাদন হচ্ছে। দৈনিক ২০ লাখ ডিমের ঘাটতি রয়েছে।

বিপিএর পক্ষ থেকে পোল্ট্রি খামারিদের তাপপ্রবাহ মোকাবেলায় বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে শেডে সঠিক বায়ু চলাচল নিশ্চিত করা, ধারণ ক্ষমতার মধ্যে কম মুরগি রাখা, পানিতে ভিটামিন-ভিত্তিক জাতিয় ওষুধ ব্যবহার না করা,লেবু এবং আখের গুড় দিয়ে দুপুরে শরবতের ব্যবস্থা করা, মুরগির শরীরে পানি স্প্রে করা, শেডের ছাদে ভেজা পাটের ব্যাগ রাখা এবং নিয়মিত পানি ঢালা, দুপুরের মুরগিকে খাবার খাওয়ানো যাবেনা।