পাবলিক রিঅ্যাশন ডেস্ক:
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে দশ বছরের এক শিশু ছাত্রকে তিন মাস ধরে বলাৎকার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। উপজেলার রায়পুর ইউনিয়ন ও চরআবাবিল ইউনিয়নের মাঝখানে মিতালি বাজার আলমাদানী মডেল মাদ্রাসার আবাসিক কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিশুর মা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ ঘটনায় উত্তম-মাধ্যম দেওয়ার পর ওই তিন শিক্ষক পলাতক রয়েছেন। এদিকে ওই প্রতিষ্ঠান বন্ধে এবং তিন শিক্ষককে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন শিশুর অভিভাবক ও স্বজনরা।
পলাতক অভিযুক্ত তিন যৌননিপীড়নকারী শিক্ষকরা হলেন, কিশোরগন্জের বাসিন্দা মাওলানা মো. রাহাত হোসেন, সিলেট সুনামগন্জের বাসিন্দা মাওলানা আবু হুরায়রা ও ভোলা সদরের বাসিন্দা মাওলানা আমিরুন ইসলাম।
ভুক্তভোগীর শিশুর মা জানান, তিন বছর আগে হেফজ বিভাগে ভর্তি করান তার ছেলেকে। মাদ্রাসার আবাসিক ভবনেই অন্য শিশুদের সঙ্গে সে থাকত। গত এক সপ্তাহ আগে শিশুটি ছুটিতে বাড়িতে আসলে আর মাদ্রাসায় যেতে চায় না। অনেক চাপ সৃষ্টির পর সে জানায়, তিন শিক্ষক তাকে অনেক দিন ধরে যৌন নির্যাতন করে আসছেন। সে রাতে ঘুমাতে পারে না, তার খুব কষ্ট হয়। তাকে মারধরও করা হয়। আবাসিকের সব ছাত্র যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন ওই তিন শিক্ষক তাদের কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করতেন।
তিনি জানান, একপর্যায়ে শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একদিন টয়লেটে প্রায় ২ ঘণ্টা দরজা বন্ধ করে বসে ছিল। এ ঘটনায় চরমোহনা গ্রামের বাসিন্দা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ মুফতি ইসমাইল হোসেনকে জানালে তিনি অভিযুক্ত শিক্ষকদের কর্মকাণ্ড কমিটির সভাপতিসহ সদস্যদেরকে জানান। আজ মঙ্গলবার পরিচালনা কমিটির সামনেই প্রিন্সিপাল অভিযুক্ত তিন শিক্ষককে জুতাপেটা করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেন। কয়েকদিন আগে প্রিন্সিপাল বাড়িতে এসে শিক্ষকদের কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চেয়ে গেছেন।
শিশুর মা আরও জানান, গত রোববার রাতে শিশুর শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে গতকাল সোমবার রায়পুর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। এ সময় ডাক্তার নজরুল ইসলাম শিশুকে পরীক্ষা করে উন্নত চিকিৎসায় সদর হাসপাতালে পাঠান। আজ মঙ্গলবার সকালে মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছি।
মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ইসমাইল হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘২০১৯ সালে ২১ হাজার টাকা করে ৭টি কক্ষ ভাড়া নিয়েছি। ৬ জন শিক্ষক এবং আবাসিক-অনাবাসিকসহ মোট ১৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। চাকরিতে যোগদানের সময় নিয়ম অনুযায়ী ওই তিন শিক্ষক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা কৌশলে মাদ্রাসার দাপ্তরিক কাগজপত্র রাখার ড্রয়ের থেকে নিজেদের কাগজ সরিয়ে নেন। তাদের ঠিকানা সম্পর্কে তেমন তথ্য মাদ্রাসার কাছে নেই। তাদের বর্তমান অবস্থানও তিনি জানেন না। ডিসেম্বর মাসে ১৫ দিনের জন্য শিক্ষক ও ছাত্রদের ছুটি দেওয়া হয়।’
এ ঘটনায় রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন দাশ বলেন, তিনি সাংবাদিকের মাধ্যমে জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে মাদ্রাসায় পুলিশ পাঠিয়ে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হন। ব্যবস্থা নিতে ওসিকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
রায়পুর থানার ওসি শিপন বড়ুয়া জানান, ইউএনওর কাছ থেকে ঘটনাটি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক সেখানে পুলিশ পাঠাই। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবির হোসেন এ ঘটনার সত্যতা খুঁজে পেয়েছেন। তবে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দিলে আইনিভাবে পদক্ষেপ নেব।