২০২৩ সালে বছর জুড়ে রাজধানীসহ সারাদেশেই ছিল ডেঙ্গু রোগের অপ্রতিরোধ্য আগ্রাসন। শহর কেন্দ্রিক মশাবাহিত এই রোগটি ইতিমধ্যে সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে।
চলতি বছরে ঢাকার বাইরের জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞবৃন্দ।
সাধারণত গ্রীষ্মকালে ডেঙ্গু রোগের মৌসুম হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে সারা বছর জুড়েই ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা গেছে। গত বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দেশের ইতিহাসে অতীতের সকল বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিন বছরে দেশে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু হয়েছে ৮৪৯ জনের। আর শুধু ২০২৩ সালেই মারা গেছেন ১ হাজার ৭০৫ জন।
২০২৩ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৮৪৩ জন। এর মধ্যে ঢাকার মধ্যে ভর্তি রোগী ছিল ৪২২ জন এবং ঢাকার বাইরের রোগী ছিল ৪২১ জন। গত বছর একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল নয় জন।
চলতি বছরের ২২ মার্চ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৬১৬ জন এবং মারা গিয়েছেন ২১ জন। অর্থাৎ চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যু গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ২২ মার্চ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে রয়েছেন ৪৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাহিরে) রয়েছে ৪৩২ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাহিরে) রয়েছেন ২১২ জন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে রয়েছে ২২৫ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে রয়েছে ৩২৫ জন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে তিন জন, খুলনা বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনে বাহিরে) ৯৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনে বাহিরে) ৩০ জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনে বাহিরে) ৩৭ জন, রংপুর বিভাগের (সিটি কর্পোরেশনে বাহিরে) ১৩ জন, সিলেট বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনে বাহিরে) ছয় জন রয়েছেন। এ তথ্য থেকে বোঝা যায় এবছর সিটি কর্পোরেশনের বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
চলতি বছরের ডেঙ্গুর সংক্রমণ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, এবছর ডেঙ্গুর পূর্বাভাস যদি জানতে চান, তাহলে আমরা যেটা দেখছি, বিভিন্ন জায়গায় মাঠ পর্যায়ের তথ্য থেকে যেটা জানা যাচ্ছে, ঢাকার বাইরে কিছু কিছু জেলাতে ডেঙ্গু বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকটি জেলায় এডিস মশার ঘনত্ব আমরা বেশি পাচ্ছি। চট্টগ্রাম, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর, চাঁদপুর, এসব জেলায় এডিস মশার ঘনত্ব বেশি পাচ্ছি। যদি আমরা সঠিকভাবে আগাম ব্যবস্থা নিতে পারি, তাহলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকবে। আর যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারি, তাহলে হয়তো ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে এমনকি উপজেলা পর্যায়েও এবারে ডেঙ্গু বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের কিছু উপজেলা পর্যায়ে এবার ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিতে পারে, বলেই মনে হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে এখন পর্যন্ত এডিস মশার ঘনত্ব ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। কিন্তু এটা যখন ২০ শতাংশের উপরে ওঠে, তখন ডেঙ্গু বেড়ে যায়। এখনো তো সেভাবে বৃষ্টিপাত শুরুই হয়নি, এখনই যেহেতু ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে, বৃষ্টিপাত বাড়লে এই ঘনত্ব ২০ শতাংশের উপরে উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এজন্য আমরা আগাম সতর্ক করার চেষ্টা করছি, যেন সবাই মিলে সঠিকভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে কাজ করে।
এ কীটতত্ত্ববিদ আরও বলেন, সারাদেশেই এখন বৃষ্টিপাত হচ্ছে, বৃষ্টি হলে এডিস মশা বাড়বে। এডিস মশা বাড়লে ডেঙ্গু বাড়বে। বৃষ্টি হলে বিভিন্ন জায়গায় থাকা ছোট বড় পাত্রে যে পানি জমা হবে, সেগুলো যদি আমরা সঠিকভাবে পরিষ্কার না করি, সেসব জায়গায় এডিস মশার প্রজনন বাড়বে। এডিস মশার প্রজনন বাড়লে ডেঙ্গুও বাড়বে। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম।
অতীতের বছরগুলোতে শহরের বাসা বাড়িতে আবাসিক ধরনের মশা (এডিস ইজিপটাই) ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটালেও, বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের বুনো মশাও (এডিস এলবোপিকটাস) ডেঙ্গুর বাহক হিসেবে কাজ করছে। গত কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটলেও যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ না করায় ডেঙ্গু ভয়াবহ হয়ে উঠেছে বলেও মত বিশেষজ্ঞদের।
[প্রিয় পাঠক, পাবলিক রিঅ্যাকশনের প্রায় প্রতিটি বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। আপনার অনুভূতির কথা আমাদের লিখে পাঠান। ছবিসহ মেইল করুন opinion2mail@gmail.com এই ঠিকানায়। যে কোনো খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। পাঠকের লেখা আমাদের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।]