নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রমআইনে চলমান মামলাটি স্থগিত চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া বিশ্বনেতাদের খোলা চিঠির প্রতিবাদ জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ৫১০ আইনজীবী। সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ বিবৃতি তুলে ধরেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের সদস্যদের লেখা খোলাচিঠি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। চিঠিতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে চলমান মামলাগুলোর বিচার প্রক্রিয়া স্থগিতের আহ্বান জানানো হয়, যা দেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর স্পষ্ট হুমকি হিসেবে আমরা বিবেচনা করছি।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ার ওপর এ ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আইনের শাসন ও বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সবাই সমান। যেকোনো সভ্য দেশে কেউ অপরাধ করলে সে দেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে- এটাই স্বতঃসিদ্ধ। আমরা ড. ইউনূসের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করেছি, তার প্রতিষ্ঠানের ভুক্তভোগী শ্রমিকরাই দেশের প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। এ খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরকারী বিদেশি নাগরিকরা ভুক্তভোগী শ্রমিকদের স্বার্থকে পাশ কাটিয়ে অন্যায়ভাবে ড. ইউনূসের স্বার্থ রক্ষায় বিবৃতি প্রদান করেছেন যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত।
‘বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায়ের আলোকে মামলার কার্যক্রম চলমান থাকার আদেশের পর বিদেশি সুশীল নাগরিকরা ড. ইউনূসের মামলার কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ করে অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ করেছেন এবং এই অনুরোধ বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি তাদের অসম্মান প্রদর্শন করারও শামিল, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়’, বলেন আইনজীবীরা।
৫১০ আইনজীবীর মতে, স্বাধীন বিচারব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী বা সরকার কোনো মামলা প্রত্যাহার, স্থগিত বা বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার আইনগত কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া, বাংলাদেশ আইএলও এবং জাতিসংঘের বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসংক্রান্ত দলিলের অনুস্বাক্ষরকারী হিসেবে এ সংক্রান্ত সব অনুশাসন সর্বোচ্চ সম্মান ও গুরুত্ব দিয়ে অনুসরণ করে।
‘সম্মানিত বিদেশি নাগরিকরা বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে ড. ইউনূসের পক্ষে তাদের দেওয়া বিবৃতি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় অযাচিত হস্তক্ষেপ করা থেকে নিজেদের নিবৃত রাখবেন,’ বলে বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করা হয়।