আন্তর্জাতিক শিক্ষাক্রমে পরিচালিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলি দেশের মূলধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে বিবেচিত। এ শিক্ষা কার্যক্রমে প্রধান তিনটি ধারা অব্যাহত রয়েছে; একটি হলো পিয়ারসন এডেক্সেল ( Pearson Edexcel), ক্যামব্রিজ এসেসমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন (CAIE)| এ দুটি ইংল্যান্ড (ইউকে) ভিত্তিক এক্সাম বোর্ড, যার মাধ্যমে সারা বিশ্বে একই সাথে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় ব্রিটিশ কাউন্সিল দ্বারা। আর অন্যটি হলো ইন্টারন্যাশনাল বাকালরিয়েট (International Baccalaureate), যা নিউইয়র্ক ভিত্তিক এক্সাম বোর্ডের মাধ্যমে সকল পরীক্ষা পরিচালিত হয়ে থাকে। ইউকে বা ইউএসএ ভিত্তিক যে শিক্ষা কার্যক্রমই হোক না কেন সকল ক্ষেত্রেই আমাদের জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে অনেকটাই সংগতিহীন। বিদেশী লেখকের লিখিত বই এ শিক্ষা কার্যক্রমে পড়ানো হয়। পরিক্ষার বিষয়, রুটিন, পাঠ্য তালিকা ও পরীক্ষার দিক নির্দেশনাসহ শিক্ষাক্রমের সকল কিছুই উক্ত বোর্ড সমূহ দ্বারা প্রণীত ও বাস্তবায়িত হয়ে থাকে।
২০১৮ সালের একটি পরিসংখানে দেখা যায়, দেশের সকল ধারার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের হার ছিলো তখন মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশ এবং বর্তমানে এর হার বেড়ে দাড়িয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশে। সুতরাং ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা এখন বাংলাদেশের তিনটি মূল শিক্ষাধারার মধ্যে সর্বজনবিদিত একটি শিক্ষাধারা। ব্যানবেইসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশ শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক স্বিকৃতি প্রাপ্ত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশত। (সূত্র: বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যাসোসিয়েশন) সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন জানায়, দেশে প্রায় দুই হাজার ইংরেজি মাধ্যমের কিন্ডারগার্টেন স্কুল আছে, যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ। তবে, সংখ্যার দিক বিবেচনায় বাংলাদেশে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের পরিমান অনেক থাকলেও শিক্ষার গুণগত মান ও প্রযুক্তি দক্ষতা উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে, এমন স্কুলের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল বাংলাদেশের হাতেগোনা কয়েকটি সেরা আধুনিক স্কুলের মধ্যে অন্যতম একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, চেইন স্কুল ধারায় প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের একটি সেরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। ঢাকার ধানমণ্ডি, সোবহানবাগ ও উত্তরাসহ এ প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলি শাখা ঢাকের বাহিরে অবস্থিত। এটির বেশ কয়েকটি ইংলিশ ভার্সন শাখাও রয়েছে। ড্যাফোডিল ফ্যামিলির সম্মানীত চেয়ারম্যান ডক্টর সবুর খান এর নিবিড় পর্যবেক্ষণে পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে আধুনিক শিক্ষা উপকরণ প্রয়োগ করা হয়।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলটি ব্রিটিশ কাউন্সিল পার্টনার স্কুলের তালিকাভুক্ত এবং পিয়ারসন-এডেক্সেল ও ক্যামব্রিজ পরীক্ষা বোর্ড অধিভুক্ত একটি সেরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। পরীক্ষা যোগ্যতার মানদন্ডে এখানকার শিক্ষার্থীদেরকে আই জি সি এস ই , ও’লেভেল, আই এ এল এবং এ’লেভেল পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। প্রতি বছর এ স্কুল থেকে চার শতাধিক শিক্ষার্থী উক্ত পরীক্ষা যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হয়ে থাকে।ড্যাফোডিল ফ্যামিলির সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ স্কুলটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এখানকার উন্নত কারিকুলাম এবং শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক শিখন-শিক্ষণ কার্যক্রম। স্কুলের পড়া স্কুলেই শেষ করতে এমনভাবে ক্লাস রুটিন তৈরি করা হয়, যেন শিক্ষকগণ নির্দিষ্ট সময়ে তাদের সিলেবাস শেষ করে প্রকৃত শিখনফল নিশ্চিত করতে পারেন। স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে কারিকুলাম ও সিলেবাস সম্পর্কে আপডেট রাখতে, ব্রিটিশ কাউন্সিল কর্তৃক সরবরাহকৃত সকল বই সংগ্রহের পাশাপাশি পেশাগত উন্নয়নের জন্য তাদের শিক্ষণ-প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালও সংগ্রহ করা হয়।
এখানকার শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ শিক্ষার্থীদেরকে পুস্তকনির্ভর পঠন-পাঠন প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আধুনিক প্যাডাগোজিক পদ্ধতি অবলম্বন করে পাঠদান করে থাকেন। শিক্ষার্থীরা যেন তাদের বাসায় অতিরিক্ত পড়ার বোঝা না নিতে পারে, সেজন্য শিক্ষকরা ক্লাসের পড়া ক্লাসেই সম্পন্ন করে দিয়ে থাকেন। হোমওয়ার্ক বলতে শুধু রিভিশন ও হাতের লেখা চর্চা দেয়া হয়ে থাকে। ক্রিয়াকলাপ ভিত্তিক শিক্ষা যেমন; প্রজেক্ট ওয়ার্ক, এসাইনমেন্ট, দলীয়কাজ, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, স্পোর্টস এক্টিভিটিজ, ল্যাবভিত্তিক চর্চাসহ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান নিশ্চিত করে থাকেন।
প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা এ স্কুলটি সেরা হওয়ার আরেকটি বিশেষ কারণ। অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে শ্রেণিভিত্তিক মেধা মূল্যায়ন সাপেক্ষে সুসজ্জিত ল্যাবে কম্পিউটার শিক্ষা প্রদান করা হয়। মাই ই-কিডস ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের আরেকটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান, যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বয়স ভেদে নানামুখী প্রোগ্রাম শেখানো হয়, যেমন; ই- টাইনি টট, ই- টায়রো, ই-প্রাইম ইত্যাদি। এছাড়াও ই-ইন্টারমিডিয়ারি ও মাই ই-এক্সপার্ট প্রোগ্রাম সমূহ রয়েছে যেখানে মিড লেভেল ও উচ্চতর লেভেলের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করতে পারে।
সাইন্স বা বিজ্ঞান, টেকনোলজি বা প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশল, আর্টস বা কলা এবং ম্যাথম্যাটিকস বা গণিত এ পাঁচটি বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞানের সমন্বয়ে স্টীম শিক্ষা সন্নিবেশিত। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে এ স্টিম শিক্ষাধারা চালু রয়েছে। এ শিক্ষা নিশ্চিত করতে অত্র স্কুলে একটি আধুনিক সরঞ্জামাদি দ্বারা সুসজ্জিত একটি স্টিম ল্যাব রয়েছে, যা বাংলাদেশে প্রথম ল্যাব হিসাবে স্বিকৃত। দৈনন্দিন শিক্ষাক্রমের পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীরা রুটিন মাফিক স্টীম ল্যাবে গিয়ে তাদের পছন্দমতো ব্যাবহারিক শিক্ষা গ্রহন করে থাকে। এতে অল্প বয়সেই তারা বিজ্ঞানধর্মী জ্ঞানের আবহ গ্রহন করতে পারে। এছাড়া পদার্থ, রসায়ন ও জীববিদ্যার পৃথক পৃথক ল্যাবে ছাত্র-ছাত্রীরা অতিরিক্ত সময়ে বা রুটিন মোতাবেক নিয়মিত গবেষণা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে থাকে।
ডিজিটাল বাংলাদেশে আধুনিক চাহিদা বাস্তবায়নে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল বিস্তৃত পরিসরে তথ্য প্রযুক্তির চর্চা করে থাকে। পর্যাপ্ত কম্পিউটারের সরবরাহ থাকায় এ স্কুলের আই সি টি ল্যাব বা তথ্য-প্রযুক্তি বিজ্ঞানাগার বেশ সমৃদ্ধশালী। এ ল্যাবে জন প্রতি একটি করে কম্পিউটার ব্যাবহারের সুযোগ রয়েছে। ঢাকা শহরে আয়োজিত বিভিন্ন আই সি টি কার্নিভ্যাল এ অংশগ্রহণ করে এ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা কৃতিত্বের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শ্রেনিকক্ষে অডিও-ভিজুয়াল পদ্ধতিতে পাঠদান আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে আরেক ধাপ অগ্রসরমান। ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানকে প্রানবন্ত ও হৃদয়গ্রাহী করতে এ জাতীয় উদ্যোগ শিক্ষার্থীদেরকে স্কুলমুখী করে তোলে। শ্রেণি কক্ষে স্মার্ট বোর্ড স্থাপন বাংলাদেশে যেন অনেকটা স্বপ্নের মত। স্মার্ট বোর্ড শুধু একঘেয়েমিতা দুর করেনা বরং এটি পাঠগ্রহণে ছাত্র ছাত্রীদের বেশ প্রাণোচ্ছল ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলে এবং শিক্ষকদের পাঠদানেও অনেক সহজ সাবলীল করে তোলে। ফলে শিক্ষক-ছাত্রের মাঝে পাঠোদ্ধারের আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং শ্রেণি কাজ ও বাড়ির কাজ খাতায় তুলতে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য স্পষ্ট ও সহজ হয়ে যায়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদেরকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জ্ঞান চর্চার সুযোগ রয়েছে অত্র স্কুলে। রোবটিক্স, আইওটি শিক্ষা, আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার জ্ঞান ও নানাবিধ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সফট ওয়ার ও এপ্স ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রযুক্তিগত বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে থাকে। প্রতিবছর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আয়োজিত বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করে অত্র স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা কৃতিত্ব অর্জন করে থাকে।
এছাড়াও, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল দেশীয় সংস্কৃতির আবহ ঠিক রেখে আন্তর্জাতিক নানা রকমের ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে, যা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলির নিয়মিত কার্যকলাপের মধ্যে একটি অভিজাত ধারা। বাঙ্গালী শিল্প-সাহিত্য, কৃষ্টি-কালচার, সভ্যতা-জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেম চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে এ স্কুলটি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল সমূহের মধ্যে এক অনন্য অবস্থান সৃষ্টি করেছে। এটি এডেক্সেল ও ক্যামব্রিজ কারিকুলামে পরিচালিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল হিসাবে এখানকার শিক্ষার গুণগত মান, তথ্য-প্রযুক্তির আবশ্যকীয় প্রয়োগ ও শিক্ষার্থীদের স্মার্ট পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহন প্রতিষ্ঠানটিকে সুনাম-সুখ্যাতির একটি উচ্চ মাত্রায় পৌছে দিয়েছে।
লেখক: ড. মো. মাহমুদুল হাছান: এডুকেটর, প্রিন্সিপাল ও প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ স্মার্ট এডুকেশন নেটওয়ার্ক (বিডিসেন)