ডিসেম্বরের শেষার্ধে রেমিট্যান্স প্রবাহের ঊর্ধ্বগতি: অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক

:: মেহজাবিন বানু ::
প্রকাশ: ১ বছর আগে

১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে রেমিট্যান্সের একটি বিস্ময়কর সাম্প্রতিক বৃদ্ধি, $১.০৭ বিলিয়ন স্পর্শ করেছে, যা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমর্থনের উপর জোর দেয়। এই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি শুধুমাত্র একটি প্রতিশ্রুতিশীল উত্থানের ইঙ্গিত দেয় না বরং রেমিট্যান্স প্রবাহে একটি স্থিতিস্থাপক প্যাটার্নও উন্মোচন করে। বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিক পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে নেভিগেট করছে, রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রদর্শিত দৃঢ়তা আশার আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে, সামনের সময়ে স্থিতিস্থাপকতা এবং সমৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেয়।

ব্যালেন্স অফ পেমেন্টস (BOP) বিভাগ ও পরিসংখ্যান বিভাগ দ্বারা সরবরাহ করা তথ্য শুধুমাত্র একটি সংখ্যাগত আপডেট নয়; এটি অর্থনৈতিক জীবনীশক্তি এবং টেকসই বৃদ্ধির একটি আখ্যান। ১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্যগুলো একটি বিস্তৃত বিশ্লেষণ প্রবণতা এবং তাদের তাত্পর্য সম্পর্কে গভীরভাবে বোঝার অনুমতি দেয়, বিশেষ করে যখন মাসের প্রথম দিনগুলির সাথে তুলনা করা হয়।

সাম্প্রটিক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে রেমিট্যান্স আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা একটি চমকপ্রদ গল্প । রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি একটি উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক লক্ষণ দেখিয়েছে, যার উদাহরণ জনতা ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলি দ্বারা, ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্সকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নীত করেছে। ইতিমধ্যে, বিশেষায়িত ব্যাঙ্কগুলি, বিশেষ করে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক,ও এই বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রেখেছে, একটি প্রশংসনীয় প্রবৃদ্ধির গতিপথ প্রদর্শন করেছে।

পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকিং খাতে গতিশীলতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ১-১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে রেমিট্যান্স $৪৬১.৮৮ মিলিয়ন থেকে $৯২১.৬৯ মিলিয়নে উন্নীত হয়েছে যা একটি শক্তিশালী আর্থিক ল্যান্ডস্কেপের ইঙ্গিত দেয়। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের অবিচল অগ্রণী অবস্থান, $৩৮৭.৯৩ মিলিয়ন অবদান, এই প্রবৃদ্ধির বিবরণে ব্যাংকগুলির উল্লেখযোগ্য ভূমিকাকে শক্তিশালী করে।

উল্লেখ্য যে, বিগত অর্থবছরে বাংলাদেশ ২১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছিল, যা দেশের অর্থনীতিতে রেমিটেন্সের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা তুলে ধরে।

ডিসেম্বরের শেষার্ধে রেমিট্যান্স প্রবাহের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর বিদেশী কর্মীদের আস্থা ও নির্ভরতা প্রতিফলিত করবে। এই টেকসই প্রবৃদ্ধি বর্ধিত অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন উদ্যোগ এবং জাতির জন্য সুযোগের পথ প্রশস্ত করে।

শুধু তাই নয়, প্রবাসী আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের সপ্তম এবং এই আয় সব থেকে বেশি আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়ে বৈধ চ্যানেলে ২০২৩ সালের শেষে আনুষ্ঠানিক মোট প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ২৩ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক ও নোমাডের মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পরেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে সৌদি আরব থেকে। এ ছাড়া গালফ কো অপারেশন কাউন্সিলভুক্ত (জিসিসি) বেশ কয়েকটি দেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রবাসী আয় আসছে। এর মধ্যে রয়েছে কুয়েত,বাহারাইন, কাতার, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাকসহ বেশ কয়েকটি দেশ । ২০২২ সালে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়প্রাপ্তিতে নেতিবাচক ধারা থাকলেও এ বছরে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, দেশে গত নভেম্বর মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯ দশমিক ৯২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৯৯২ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। ফলে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২৩ সালের শেষে প্রবাসী আয় ২৩ বিলিয়ন থেকে ৩০৭ কোটি ডলার আরও প্রয়োজন, যেটাকে কঠিন বলেই মনে করা হচ্ছে।

প্রবাসী আয়ে অতিরিক্ত প্রণোদনা দেওয়ার ফলে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের আয় পাঠানো বেড়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যে কয়েকটি দেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে তার মধে বাংলাদেশ অন্যতম। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকগুলোতে প্রতিবেশী দেশগুলোকে পেছনে ফেলে সামনের সারিতে বাংলাদেশ।

বর্তমান বিশ্বের অনেক স্বল্পোন্নত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আদর্শ হিসেবে দেখা হচ্ছে বাংলাদেশকে। দেশটি বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছয় শতাংশের ওপরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) বলছে, আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ ২০টি অর্থনীতির একটি হবে বাংলাদেশ। বাজারের আকার, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিভিন্ন খাতে যেমন কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর-২০২৩ দেশের রেমিটেন্স প্রবাহ কিছুটা কমে গেলেও পরবর্তী মাসগুলতে তা আবার বেড়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে গত বছরের (২০২২) একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ (১ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার) কমে ১ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

প্রবাসীরা আগস্ট মাসে প্রায় ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে, যা ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। ফেব্রুয়ারি মাসে এর পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও একধাপ কমে ১ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে, যা গত ৪০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

যাইহোক, গত অক্টোবর মাসে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়ে দাড়াই ১ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার যা গত মাসের থেকে ০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার বেশি। এর পরবর্তী মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ সামান্য কিছুটা কমে হয় ১ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার যা গত বছরের নভেম্বর মাসের তুলনাই প্রাই ২১ শতাংশ বেশি।

এদিক থেকে রেমিটেন্সের এই বৃদ্ধি আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাকে ইঙ্গিত করছে এবং সামনের দিনগুলোতে রেমিটেন্সের প্রবাহকে বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে।

দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও প্রবিদ্ধির হারকে একটি স্থিতিশীল অবস্থাই ধরে রাখতে বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। এ লক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন এবং প্রবাসি আয় ব্রিদ্ধিতে তার সরকারের নানামুখি পদক্ষেপ রেমিটেন্স যোদ্ধাদেরকে আরও বেশি রেমিটেন্স পাঠাতে উদ্ভুদ্ধ করছে। এরমধ্যেই সরকার লিগ্যাল চ্যানেলে টাকা পাঠাতে প্রনদনার পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে।

নানা প্রতিকুলতা ও বৈশ্বিক সংকটের মাঝেও সরকার ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেটের স্টাবিলিটি ধরে রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও দক্ষ জনবল তৈরি, প্রশিক্ষণ প্রদান, লোন প্রদান এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধা প্রদানে বিগত দেড় দশক ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাজ করে যাচ্ছেন।

আমরা বিশ্বাস করি, দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ টেকশই অর্থনীতি নিশ্চিত করবে এবং অচিরেই উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জন করবে।

 

লেখক: মেহজাবিন বানু, গবেষক ও কলামিস্ট।


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।


Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net