নির্ধারিত সময়ে অনেকেই বিভিন্ন কারণে রিটার্ন জমা দিতে পারেন না। এ কারণে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অনুযায়ী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এক মাস সময় বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ ২০২০ সালে নভেম্বর মাসজুড়ে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর এরই আদলে সংক্ষিপ্ত পরিসরে হয়েছে আয়কর সেবা। আইন অনুযায়ী ব্যক্তি পর্যায়ের করদাতাদের রিটার্ন দাখিলের সময় ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর। কোম্পানির আয়ের রিটার্ন দাখিলের নির্ধারিত সময়সীমা ১৫ জানুয়ারি। এই সময়ের মধ্যেই আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় নির্ধারণ করে দেওয়া আছে।
নির্ধারিত সময়ে কর পরিশোধ করতে না পারলে কী করবেন করদাতা? পাঠকদের সুবিধার্থে কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো।
সময় বাড়ানোর আবেদন:
নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে করদাতা মোট চার মাস সময় বাড়াতে পারেন। করদাতার সংশ্লিষ্ট সার্কেলের উপ-কর কমিশনার নিজ ক্ষমতাবলে দুই মাস সময় বাড়াতে পারেন। এর চেয়ে বেশি সময়ের প্রয়োজন হলে যুগ্ম কর কমিশনারের অনুমোদনক্রমে তিনি আরও দুই মাস অর্থাৎ মোট চার মাস সময় বাড়াতে পারবেন।
ব্যর্থতার জন্য জরিমানা:
করদাতা যদি যৌক্তিক কারণ ছাড়া রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হন, তাহলে সংশ্লিষ্ট উপ-কর কমিশনার ওই ব্যক্তির সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের ওপর ধার্য করা করের ১০ শতাংশ হারে জরিমানা আরোপ করতে পারবেন। জরিমানার ন্যূনতম পরিমাণ হবে এক হাজার টাকা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জরিমানাসহ কর পরিশোধ না করলে প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা করে অতিরিক্ত জরিমানা আরোপ করা হবে।
আরও পড়ুন: রিটার্ন দাখিলে যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হবে
রিটার্ন দাখিল হলেও অনিয়মের জন্য জরিমানা: রিটার্ন দাখিল করলেও কোনো বেআইনি কাজ করলে তার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে জরিমানার বিধান রয়েছে। যেমন কোনো ব্যক্তি যদি তার আয়কর রিটার্নে অন্য কোনো ব্যক্তির বা জাল করদাতা শনাক্তকরণ (টিআইএন) নম্বর ব্যবহার করেন, তাহলে উপকর কমিশনার ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করতে পারবেন। কোনো ব্যক্তি তার আয়, সম্পদ, দায়, ব্যয় বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করে কর ফাঁকি দিলে বিভিন্ন হারে জরিমানার বিধান রয়েছে।
আপিল করতে পারবেন করদাতা:
কোনো করদাতা আয়কর কর্তৃপক্ষের আদেশে সংক্ষুব্ধ হলে তিনি আপিল করতে পারবেন। এ জন্য আপিল আয়কর কর্তৃপক্ষ রয়েছে। আপিলের জন্য নির্ধারিত ফরম ও পদ্ধতি রয়েছে। আপিল কর্তৃপক্ষ শুনানির জন্য তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করবেন এবং আপিলকারী এবং উপকর কমিশনারকে নোটিশ পাঠাবেন। মামলা নিষ্পত্তির পর আপিল কর্তৃপক্ষ আদেশ জারি করবে এবং বিষয়টি ৩০ দিনের মধ্যে আপিলকারী এবং সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনার ও কমিশনারকে জানাবে।
যদিও কোনো করদাতা ৩০ নভেম্বর বা কর দিবসের পরে রিটার্ন দাখিল করতে না পারলে অন্তত ৬ ধরনের সুবিধা পাবে না। যার মধ্যে রয়েছে—
কর অব্যাহতির সুবিধা প্রাপ্ত হবেন না অর্থাৎ তার যেকোনো ধরনের কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয় করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
কর মুক্ত আয়ের সুবিধা প্রাপ্ত হবেন না অর্থাৎ তার যেকোনো ধরনের কর মুক্ত আয় করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
হ্রাসকৃত হারে কর প্রদানের সুবিধা প্রাপ্ত হবেন না।
কোনো ধরনের বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত সুবিধা প্রাপ্ত হবে না।
আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ১৭৪ অনুযায়ী তাকে অতিরিক্ত কর পরিশোধ করতে হবে।
আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ২৬৬ অনুযায়ী তাকে নির্ধারিত হারে জরিমানা পরিশোধ করতে হবে
আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে আরও যেসব সমস্যায় পড়তে পারেন-
যারা আয়কর রিটার্ন ঠিক সময়ে জমা দেন না তারা পরবর্তীতে কোনো ট্রেড লাইসেন্স করতে পারবেন না। ধরুন, আয়কর ফাঁকি দিচ্ছেন দীর্ঘদিন। হঠাৎ প্রয়োজন হলো বিদেশ যাওয়ার। ভিসা সহজে মিলবে না আপনার। কেননা আয়কর জমা দেওয়ার সব তথ্যই আপনাকে সেখানে দাখিল করতে হবে।
আইন অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি সময়মতো আয়কর রিটার্ন দিতে ব্যর্থ হন, এ ক্ষেত্রে অধ্যাদেশ অনুযায়ী এক হাজার টাকা অথবা আগের বছরের ট্যাক্সের ১০% জরিমানা করা যাবে। এ দুটির ভেতরে যেটি পরিমাণে বেশি সেই অঙ্কটি পেনাল্টি হতে পারে।
কয়েক বছর ধরে যদি কেউ রিটার্ন দাখিল না করেন তাহলে ওই জরিমানা ছাড়াও যতদিন ধরে তিনি রিটার্ন দেননি ওই পুরো সময়ের দিনপ্রতি ৫০ টাকা করে জরিমানা হতে পারে।
পুরোনো করদাতা হলে আগের বছর যে পরিমাণ অর্থ আয়কর হয়েছে সেটিসহ ওই অর্থের ৫০% পর্যন্ত বাড়তি দিতে হতে পারে।
যারা করযোগ্য হওয়ার পরও একেবারেই কর দেন না, তাদের ক্ষেত্রে, তিন ধরনের জরিমানা করা হয়। একটি হলো যে পরিমাণ কর বকেয়া হয়েছে সেটি ছাড়া আরও ২৫% বাড়তি জরিমানা করার বিধান রয়েছে।
যে পরিমাণ কর বকেয়া হয়েছে তার ওপর ২% হারে মাসিক সরল সুদ। যে পরিমাণ কর বকেয়া হয়েছে তার সমপরিমাণ জরিমানা।