নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে সমঝোতার পথে যাচ্ছে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচিব নুরুল হক নুর। আর দলটির শীর্ষ দুই নেতার সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত নিজ-নিজ দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে মতামত দিয়েছে তদন্ত কমিটি। একইসঙ্গে তাদেরকে নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি না করতেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, রেজা কিবরিয়াকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া যেমন গঠনতন্ত্র মোতাবেক হয়নি। তেমনি নুরুল হক নুর ও রাশেদ খানকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া গঠনতন্ত্র মোতাবেক হয়নি। তাই উভয়ই স্ব-স্ব পদে বহাল আছে বলেও মনে করে তদন্ত কমিটি। ফলে, দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক পদে আছেন রেজা কিবরিয়া। আর সদস্য সচিব পদে নুরুল হক নুর।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও তদন্ত কমিটির সদস্য জাকারিয়া পলাশ বলেন, রেজা কিবরিয়াকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া যেমন গঠনতন্ত্র মোতাবেক হয়নি, তেমনি নুরুল হক নুর এবং রাশেদ খানের অব্যাহতিও গঠনতন্ত্র মোতাবেক হয়নি। ফলে, উভয় পক্ষই পূর্বের নিজ-নিজ পদে বহাল আছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে জাকারিয়া পলাশ বলেন, আমরা আমাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে তদন্ত করছি। একদিনে তদন্ত শেষ করা সম্ভব নয়।
সূত্রে জানা গেছে, গতকাল (বুধবার) রাতে রেজা কিবরিয়া ও নুরের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ নিয়ে বৈঠক করেন গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক কমিটি। ওই বৈঠকে যোগ দেন নুরুল হক নুর ও রাশেদ খান। আর বিদেশে অবস্থানরত রেজা কিবরিয়ার সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে, তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে, তারা উভয়পক্ষ চায় সমঝোতার মাধ্যমে দলের অস্থিরতা ও নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব দূর করতে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামানের উদ্যোগে তার অফিসে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বৈঠকে যোগদান করেন নুরুল হক নুর। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কয়েক দিন ধরে চলা অচলাবস্থা নিরসনে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এবং চলমান এ তদন্তে কেউ হস্তক্ষেপ করবে না। পাশাপাশি গত দু’দিন যে বহিষ্কার এবং পাল্টা বহিষ্কারের ধারা চলে আসছে, তা থেকেও বের হয়ে আসবে দুই পক্ষ। একই সঙ্গে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তারা আগের পদেই বহাল থাকবেন।
বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন যুগ্ম আহ্বায়ক জানান, বৈঠকে তোপের মুখে পড়েন গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর। বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে তার কড়া সমালোচনা করেন গণ অধিকার পরিষদের নেতারা। এক পর্যায়ে নুর গত কয়েক দিনের কর্মকাণ্ড নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে কোটা আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, গণঅধিকার পরিষদের মূল সমস্যা ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগ। যেখানে সংগঠনের অস্তিত্বের প্রশ্ন, হাজার হাজার নেতাকর্মীর শ্রম-ঘামের প্রশ্ন সেখানে অবশ্যই উভয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, রেজা কিবরিয়া দলের আহ্বায়ক হিসেবে আমাকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দিতে পারেন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী; কিন্তু নৈতিক জায়গা থেকে আমি এটি সমর্থন করি না এবং সংগঠনের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তই হবে আমার সিদ্ধান্ত। ঠিক তেমনিভাবে রাশেদ খানকে চলতি দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করাকেও যৌক্তিক মনে করি না।
তিনি বলেন, ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যকে আমি সমর্থন করি না। শ্রম, ঘাম, রক্তের বিনিময়ে এই সংগঠন এ জন্য তৈরি করিনি যে, যে কেউ চাইলে এই সংগঠনকে বিক্রি করে দিতে পারে। এই সংগঠন প্রতিটি নেতাকর্মীর। সংগঠনে কোনো ধরনের কালিমা লেপন করতে দেওয়া হবে না। যার যার জায়গা থেকে স্বচ্ছ এবং সহনশীল আচরণ করতে হবে।
বৈঠকে অনুপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে রাশেদ খান যে বার্তা পাঠান তাতে লেখা রয়েছে, মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত পজিটিভ। ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। আশা করি, দু-এক দিনের মধ্যে সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান হবে।
প্রসঙ্গত, রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের পাল্টাপাল্টি অব্যাহতি পর ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে গণঅধিকার পরিষদ।