নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ইরানে বিক্ষোভ চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে বিক্ষোভের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে।
এসবের মধ্যে টপলেস এক প্রতিবাদী নারীর ভিডিও ফেসবুকে ও টুইটারে ভাইরাল হয়েছে। এটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ইরানে হিজাববিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে। আসলে এটি নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামের একটি প্রতিবাদ সমাবেশের ভিডিও, ইরানের নয়।
ক্লিপটি চলতি বছরের ৬ অক্টোবর ফেসবুকে শেয়ার হয়।
ফুটেজে দেখা যায়, টপলেস এক নারী একটি সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছেন। এ সময় উপস্থিত জনতা শাহ শাসনামলের পারস্যের পতাকা নাড়ছে। ভিডিওটিতে কুর্দি পতাকার নড়াচড়াও দেখা যায়।
ভিডিওটিতে ইংরেজি ক্যাপশনের লেখা: ‘হিজাববিরোধী বিক্ষোভ এখন ইরানে টপলেস বিক্ষোভে পরিণত হয়েছে… হিজাব খুলে ফেলে থেকে শুরু করে হিজাব ছুঁড়ে ফেলা, হিজাব পোড়ানো, হিজাব দিয়ে জুতা পরিষ্কার পর্যন্ত করা হচ্ছে।’
কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।
পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই ২২ বছরের মাহসা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। সেদিন হাসপাতালের সামনে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইরানে।
নারীরা হিজাব খুলে, পুড়িয়ে প্রতিবাদ করছেন। অনেকে নিজেদের চুল কেটে বিক্ষোভে সংহতি জানাচ্ছেন। সবচেয়ে অবাক বিষয় হচ্ছে, হিজাববিরোধী বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছে স্কুলছাত্রীরাও।
এএফপি বলছে, দেশজুড়ে বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে অন্তত ১২২ জন নিহত হয়েছেন।
ক্লিপটি ফেসবুক এবং টুইটারে শেয়ার হয়েছে; যেখানে এটি ৯ হাজার বারের বেশি দেখা হয়েছে। যাইহোক, ভিডিওর দাবি সম্পূর্ণ ভুয়া।
আমস্টারডামে বিক্ষোভ
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক ফার্সি ভাষার সংবাদ পরিষেবা রেডিও জামানেহ-এর অফিসিয়াল টুইটারে ২০২২ সালের ১ অক্টোবর আসল ভিডিওটি প্রকাশ হয়েছিল। গুগলে একটি বিপরীত চিত্র অনুসন্ধানে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ফার্সি ভাষায় করা টুইটে বিক্ষোভকারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, টপলেস নারীটি ইরানি মানবাধিকারকর্মী নিলুফার ফৌলাদি। এটি বলছে, ইরানে বাধ্যতামূলক হিজাব এবং মাহসা আমিনিকে হত্যার প্রতিবাদে আমস্টারডামে হওয়া একটি সমাবেশে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। এই সমাবেশটি হয়েছিল চলতি বছরের ১ অক্টোবর।
রেডিও জামানেহ বলছে, হিজাববিরোধী অন্য একটি প্রতিবাদে অংশ নেয়ার দায়ে ২০১৮ সালে নিলুফার ফৌলাদিকে গ্রেপ্তার করেছিল ইরান সরকার। পরে তিনি ইরান ছেড়ে চলে যান।
রেডিও জামানেহের শেয়ার করা ক্লিপে প্রতিবাদ স্থলের কাছে একটি ভবনে ‘মাদাম তুসো’ লেখা দেখা গেছে। মাদাম তুসো হলো মোমের কাজের জাদুঘরের একটি চেইন; যা বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের মোমের প্রতিলিপি প্রদর্শনের জন্য পরিচিত।
লেখাটি ব্যবহার করে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে, সমাবেশের স্থানটি আমস্টারডামের ড্যাম স্কোয়ারের।
প্রতিবাদ ক্লিপে (বাঁয়ে) আমস্টারডামে মাদাম তুসো সাইনের একটি স্ক্রিনশট তুলনা এবং একই অবস্থানে (ডানদিকে) দেখা একটি গুগল স্ট্রিট ভিউ চিত্র রয়েছে।
ভয়েস অফ আমেরিকার (ভিওএ) ফার্সি সার্ভিসও আমস্টারডামে একই প্রতিবাদের একটি ক্লিপ ভিন্ন কোণ থেকে পোস্ট করেছে। ভিওএ টুইটে বলেছে, বিক্ষোভটি আমস্টারডামে হয়েছিল।
রেডিও জামানেহ ফাউলাদির একটি ভিডিও পোস্ট করেছে, যেখানে তিনি ডাচ রাজধানীতে তার প্রতিবাদ নিয়ে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমস্টারডামের সমাবেশে আমি যা করেছি, তা ছিল মাথার স্কার্ফ পোড়ানো বা চুল কাটার মতো এক ধরণের প্রতিবাদ। এর মানে এই নয় যে সব নারীর নগ্ন হয়ে প্রতিবাদ করা উচিত।’