পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট:
নয় বছর বয়স পর্যন্ত অন্যসব সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশুদের মতোই দুরন্তপনার মধ্য দিয়ে দিন কাটতো ফারহান সাদিকের। এখন তার বয়স ১১ বছর। এর মাঝে গত দুই বছর ধরে সাদিকের দিন কাটছে জীবন-মৃত্যুর এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে।
দুই বছর হলো লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ঠাকুরগাঁওয়ের শিশু ফারহান সাদিক। সে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার সরকারপাড়া এলাকার দেলওয়ার হোসেনের ছেলে।
সাদিক সরকারপাড়া সমির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তো। কিন্তু এখন আর স্কুল যাওয়া হয় না তার। হয় না পড়তে বসাও। কারণ, সাদিক এখন লড়ছে জীবন বাঁচাতে। আর অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে এই হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতাল ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন বাবা জেলা মটর মালিক সমিতির বুকিং মাস্টার দেলওয়ার হোসেন।
ছেলের রোগের বর্ণনা দিতে গিয়ে দেলওয়ার হোসেন বলেন, দুই বছর আগে সাদিকের প্রথমে খাওয়ার অরুচি এবং কিছু খেলেই বমি হয়ে যেত। এমন অবস্থা দেখে প্রথমে তাকে ঠাকুরগাঁওয়ের শিশু ডাক্তার শাহজাহান নেওয়াজকে দেখানো হয়। এতে অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় আরেক শিশু ডাক্তার ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের সাহিন সাজ্জাদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় সাদিককে।
রোগের সব বর্ণনা শুনে ডাক্তার সাজ্জাদ লিভারের পরীক্ষা করা করায় সাদিকের। এতে লিভার ইনফেকশন জন্ডিস ধরা পড়ে তার। পরে তিনি সাদিককে রংপুরে রেফার্ড করেন। এরপর রংপুরে নেওয়া হয় সাদিককে। সেখানে তাকে দেখানো হয় গ্যাস্ট্রোলিভার ডাক্তার নওসাদকে। এক বছর তারও চিকিৎসা চলেছে। কিন্তু তাতেও কোনো উন্নতি হয়নি। পরে তাকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। সেখানেও বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় সাদিকের। সেখানে জানা যায় তার লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এটা জানার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাদিককে নিয়ে যাই ভারতের হায়দ্রাবাদের এআইজি হাসপাতালে (এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি)। সেখানে ১৫ দিন থাকার পর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা যায় সাদিক লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত।
লিভার সিরোসিস যকৃৎ বা লিভারের দীর্ঘমেয়াদি একটি রোগ। প্রদাহের কারণে লিভারের কোষগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে লিভারের ভেতরের স্বাভাবিক গঠনের পরিবর্তন হয়। এর ভেতরে ফাইব্রোসিস হয়ে লিভার ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে যায় এবং এর কার্যক্ষমতা কমে যায়।
সাদিকের বাবা বলেন, ইতোমধ্যে সাদিকের চিকিৎসা বাবদ ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এই টাকাগুলো বিভিন্নজনের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া। আমি সামান্য একজন মোটর শ্রমিক। যা আয় হয় তাই দিয়ে কোনো মতে সংসার চলে আমার। ডাক্তার বলেছেন সাদিকের লিভার পরিবর্তন করা জরুরি। এজন্য বাংলাদেশি ৪০ লাখ টাকা খরচ হবে। কিন্ত কোথায় পাব এত টাকা?
তিনি বলেন, হায়দ্রাবাদের ডাক্তার বালাজি স্যার বলেছেন লিভার পরিবর্তন করলে ফারহান সাদিক অন্য দশজনের মতো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারবে। ইতোমধ্যে লিভার দেওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়েছে আমার স্ত্রী ফারহান সাদিকের মা বাবলী আক্তার। ডাক্তার আরও বলেছেন, এতে মা ও ছেলের কোনো সমস্যা হবে না। দুজনেই সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে চলা ফেরা করতে পারবে।
দেলওয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে হায়দ্রাবাদের এআইজি হাসপাতালের ডাক্তারের পরামর্শে সাদিকের চিকিৎসা চলছে। শুনেছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েও নাকি লিভার পরিবর্তন করা যায়। তাই বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকায় থেকে এই হাসপাতালে ছেলেকে ভর্তির চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছি না।
ফুটফুটে শিশু সাদিককে বাঁচাতে অনেক টাকা প্রয়োজন। সবাই মিলে উদ্যোগ নিলে ৪০ লাখ টাকা সংগ্রহ করা কোনো ব্যাপারই না। আসুন না সাদিকের জন্য কিছু করি। তার পাশে দাঁড়াই। সাদিককে সহযোগিতা পাঠানো যাবে তার বাবা দেলওয়ার হোসেনের বিকাশ ০১৭১৬-৪১৪৯২৩ নম্বরে। এছাড়া সহযোগিতা পাঠানো যাবে ব্যাংকের মাধ্যমেও। দেলওয়ার হোসেন, হিসাব নং ২৪৪২২, ইসলামি ব্যাংক, ঠাকুরগাও শাখা।