কোরবানি ঈদের বাকি আর মাত্র দুইদিন। স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এরই মধ্যে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন নগরবাসী। ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। ট্রেনে জায়গা সংকুলান না হলেও যে কোনো মূল্যে বাড়ি ফিরতে চান সবাই। উপায় না পেয়ে দরজায় ঝুলেও ট্রেনের সঙ্গে স্টেশন ছাড়ছেন অনেকে।
শনিবার (১৫ জুন) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দেখা যায়, স্টেশনের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছে পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস। ট্রেন থামার পর যাত্রীরা একে একে আসতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই যাত্রীতে পরিপূর্ণ হয়ে যায় বগি। এরপরও আসতে থাকেন যাত্রীরা। বগিতে জায়গা না পেয়ে ট্রেনের টয়লেটের সামনে, দুই বগির মাঝখানে ও দরজায় অবস্থান নেন অনেকেই।
ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে দরজায় ঝুলতে থাকেন অনেকেই। সকাল ১০টা ১৮ মিনিটে স্টেশন ছেড়ে যায় একতা এক্সপ্রেস। এসময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের দরজায় ঝুলে থাকতে দেখা যায় অনেক যাত্রীকে। কেউ কেউ দরজায় ঝুলে থাকার জায়গাও না পেয়ে নিরাশ হয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করতে থাকেন পরের ট্রেনের জন্য।
এমনই একজন মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, যদি ঝুলে যাওয়ার একটু জায়গা পেতাম তাও ট্রেনে উঠে পড়তাম। এখন কী করবো ভাবছি, বাড়ি তো যেতেই হবে। আগে তো মানুষ ট্রেনের ছাদে উঠেও বাড়ি যেত। কিন্তু এবার নিরাপত্তাকর্মীরা ট্রেনের ছাদে অবস্থান নেওয়ায় কোনো যাত্রী ছাদে উঠতে পারেননি।
আজ ঢাকা ছাড়ছে ৬৯টি ট্রেন:
এদিকে, ঈদযাত্রায় যাত্রীদের ঘরে ফেরাতে নিয়মিত ট্রেনের পাশাপাশি স্পেশাল ট্রেন চালু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঈদযাত্রার চতুর্থদিনে সবমিলিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ২টি স্পেশাল ট্রেনসহ মোট ৬৯ ট্রেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছেড়ে যাবে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, এবার ট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে ১২ জুন থেকে। গত তিন দিনে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যেসব ট্রেন আমরা পরিচালনা করেছি সেসব ট্রেনের যাত্রীরা নিজ নিজ গন্তব্যে নিরাপদে এবং ভোগান্তি ছাড়ায় পৌঁছাতে পেরেছেন। আজ সকাল থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেন ঢাকা ছেড়ে গেছে। সব ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে স্টেশন ত্যাগ করেছে। যাত্রীরা আমাদের ব্যবস্থাপনায় বেশ খুশি। এবার বিনা টিকিটে ভ্রমণের প্রবণতা একটু কম দেখেছি, যাত্রীরা সচেতন হয়েছেন।
মাসুদ সারওয়ার বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী, জিআরপি, ডিএমপি, র্যাব এবং দেশের অন্যসব বাহিনী সম্মিলিতভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুন্দর, ভোগান্তিহীন ও নিরাপদ ঈদযাত্রা উপহার দিতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সিডিউল বিপর্যয় হয়নি। রেলওয়ের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের সব পর্যায়ের মনিটরিং টিম কাজ করছে।
তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় আমাদের ট্রেন সংখ্যা অপ্রতুল। আমরা ৩৩ হাজার ৫০০ আন্তঃনগরের টিকিট বিক্রি করতে পেরেছি, এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের ছিল না। কিন্তু এই ৩৩ হাজার ৫০০ টিকিটের বিপরীতে চাহিদা ছিল ব্যাপক। প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়তে চেয়েছিল এই আন্তঃনগর ট্রেনে। বেশিরভাগ যাত্রী হয়তো অনলাইনে টিকিট কাটতে পারেননি। এখন এসব টিকিটের যে ব্যাপক চাহিদা, এটাকে পুঁজি করে এক শ্রেণির প্রতারক চক্র টিকিট প্রিন্ট করে, এডিট করে বিভিন্নভাবে অনেককে প্রতারিত করেছে। তাদেরকে ধরেছে র্যাব।
তিনি আরও বলেন, রোববার আমাদের ঈদযাত্রা শেষ হবে। শেষদিন পর্যন্ত যাতে সবকিছু স্বাভাবিক থাকে এবং সুন্দরভাবে যাত্রীরা তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে- সে লক্ষ্যে সব কার্যক্রম সম্পন্ন রয়েছে। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় ও সহযোগিতায় আমরা সুন্দর একটি ঈদযাত্রা উপহার দিতে পেরেছি।