পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক:
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার সন্ত্রাস বিরোধ আইনের মামলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. মো. শফিকুর রহমানের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালত শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।
যাত্রাবাড়ী থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন সাব-ইন্সপেক্টর মাহমুদুর রহমান রিমান্ডের এ তথ্য জানান।
এর আগে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক মো. আবুল বাসার শফিকুর রহমানকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
শফিকুর রহমানের পক্ষে আব্দুর রাজ্জাক, কামাল উদ্দিন প্রমুখ আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে তারা বলেন, নির্বাচনের আগে বিরোধীদলগুলো আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামও প্রস্তুত। ঠিক তখনই তাকে গ্রেপ্তার করা হলো। উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বয়স্ক, অসুস্থ বিবেচনায় তার জামিন চান আইনজীবীরা।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু জামিনের বিরোধিতা করে রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন।
এদিন বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পৌনে চারটার দিকে এজলাসে তোলা হয়। রিমান্ড শুনানিকালে তিনি আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।
শফিকুর রহমানকে আদালতে হাজির করাকে কেন্দ্র করে বাড়ানো হয় নিরাপত্তা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) একটি টিম সোমবার তাকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে, এ মামলায় শফিকুর রহমানের ছেলে রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহসহ দুই জনকে তিন দফা রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সিটিটিসি প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, ছেলের জড়ানো, ছেলেসহ জড়িতদের হিজরতে ব্যয়ভার বহনের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হবে।
আসাদুজ্জামান জানান, ৯ নভেম্বর জামায়াত আমীরের ছেলে ডা. রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার আগে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’য় জড়িয়ে ট্রেনিং ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য সিলেট থেকে হিজরত করা ৩ জঙ্গি সদস্যকে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডা. রাফাতকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাফাত আগে ছাত্র শিবির করতেন। যাদের আমরা গ্রেপ্তার করেছি তারা সকলেই ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ট্রেনিং ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য হিজরত করেছিলেন। তারা প্রত্যেকেই শিবিরের সাথী ছিলেন। সহযোগী আরিফও শিবিরের সাথী ছিল। নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’য় যোগ দেওয়ার আগে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছেন। নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র দাওয়াত পেয়ে দলসহ যুক্ত হোন।
পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, রাফাতের নেতৃত্বেই সর্বপ্রথম ১১ জন সিলেট থেকে বান্দরবানে হিজরত করেন। সেখানে কুকিচিনে নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। ডা. রাফাতের মতো বড় সহযোগী ও সংগঠক তাহহিয়াত। জামায়াত আমীর তার ছেলে রাফাত নতুন জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়েছেন, এটা জেনেও সমর্থন দিয়ে গেছেন। ছেলে পরে সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হোন। নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’য় জড়ানো অনেকেই শিবিরের সাথী, কর্মী ছিলেন। তাদের হিজরতের খরচও দিয়েছেন জামায়াত আমীর।
তিনি বলেন, এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাবা জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে, সম্মতিক্রমেই ২০২১ সালের জুন মাসে বান্দরবান থেকে ফিরে আসেন তিনি। শফিকুর রহমানের সিলেটের বাসায় বিভিন্ন সময় জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করতো রাফাত। ১১ জনসহ ছেলে যে হিজরত করেছেন এর সবই জানতেন জামায়াত আমীর। ক্ষেত্রে বিশেষে তিনি সহযোগিতাও করেছেন। হিজরতের যাবতীয় ব্যয়ভারও তিনি বহন করেছিলেন। ছেলেসহ ১১ জনকে ডা. শফিকুর রহমান খরচ দিয়ে কুকিচিনে পাঠিয়েছিলেন।
‘ডাক্তার শাকের নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয় কয়েকদিন আগে। যিনি নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র দাওয়াতি শাখার প্রধান ছিলেন। সংগঠন থেকে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক অনেক সহযোগিতাই তারা পেতেন। রাফাতের সঙ্গে হিজরত করেছেন, তারাও জামায়াতের ছাত্র সংগঠন শিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সঙ্গে জামায়াতের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ও সমর্থন ছিল কিনা তা জানতে এবং এই মামলায় জামায়াত আমীরের সরাসরি সম্পৃক্ততার কারণেই তাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। পুলিশ বাহিনীর গ্রেপ্তারের এড়াতে ছেলেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করেছেন জামায়াত আমীর। আরও কয়েকজনকে তিনি সহযোগিতা করেছেন।’