জমি বিক্রি করে মনোনয়ন ফরম কিনলেন গ্রাম পুলিশ

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ১ বছর আগে
লালপুর ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশ এসকেন আলী। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ২০ বছর আগে থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখছিলেন নাটোরের লালপুর উপজেলার লালপুর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ মো. এসকেন আলী।

সেই স্বপ্ন পূরণে তিনি আড়াই লাখ টাকায় ১ কাঠা জমি বিক্রি করে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে জেলার লালপুর উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন এসকেন আলী। এখন পর্যন্ত ভোট সংক্রান্ত বিষয়ে ৩৬ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে তার।

বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দিনগত রাতে লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার শামীমা সুলতানা এসকেন আলীর মনোনয়ন ফরম উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এসকেন আলী উপজেলার বালিতিতা ইসলামপুর গ্রামের মৃত আকবর আলী মণ্ডলের ছেলে। তিনি বর্তমানে লালপুর ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশ হিসেবে কর্মরত।

জানা গেছে, আগেও দুইবার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) পদে প্রতিদ্বন্দিতা করেছেন এসকেন আলী। কিন্তু সেসব নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেননি।

এদিকে জমি বিক্রি করে গ্রাম পুলিশের সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম কেনার খবরে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। চায়ের স্টল থেকে শুরু করে সর্বত্রই এখন আলোচনার বিষয় এসকেন আলী।

কেউ কেউ বিষয়টিকে হাস্যকর বলে অবহিত করলেও অনেকে এসকেন আলীর সাহসিকতার প্রশংসা করছেন।

নির্বাচন এলে শুধু ভোটার নয়; প্রার্থী হওয়ার খুব ইচ্ছে হয় বলে জানালেন গ্রাম পুলিশ এসকেন আলী।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এ স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেন, দেশে যখন নির্বাচন আসে তখন আমার খুব ভালো লাগে এবং নির্বাচনে প্রার্থী হতেও ইচ্ছে হয় খুব। তাই আগেও দুইবার মেম্বার পদে দাঁড়িয়েছিলাম। বিজয়ী হতে পারিনি। তবে একবার তৃতীয় হয়েছিলাম।

তিনি জানালেন, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করে সকলের দোয়া চেয়ে পোস্টারও ছাপিয়েছিলেন। কিন্তু সেই বছর আর্থিক সংকটের জন্য ভোট করতে পারেননি। তবে এবার সেই সংকট এড়াতে জমি বিক্রি করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

এসকেন আলী আরও বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলাম। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণে বাড়ির পাশের ১ কাঠা জমি আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। সেই টাকা দিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহসহ ভোট সংক্রান্ত বিষয়ে এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে।

তিনি জানান, এবারের নির্বাচনে অনেকে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। কাজেই নির্বাচন করতে তার কোনো সমস্যা হবে না।

নির্বাচন বিষয়ে কেমন আশাবাদী প্রশ্নে এসকেন আলী বলেন, ২৭ বছর ধরে গ্রাম পুলিশের চাকরি করছি। এই সময়ে বিনা স্বার্থে অনেক মানুষের উপকার করেছি। তাদের কাছে ভোট চাইলে তারা অবশ্যই ভোট দেবেন। এছাড়া এই আসনে মোট ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদ আছে। সেখানকার গ্রাম পুলিশদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ ও সর্ম্পক আছে। তারাও সবাই আমার জন্য কাজ করবেন ইনশা আল্লাহ। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব ও কোন্দল আছে। এ কারণে অনেকে বিরক্ত হয়ে আমাকে ভোট দেবেন এবং আমার হয়ে কাজ করবেন।

এদিকে লালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, বিষয়টি লোকমুখে শুনে প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফোন করে তাকে গ্রাম পুলিশ এসকেন আলীর মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের তথ্যের সত্যতা জানান। ঘটনাটি শুনে তিনি রীতিমতো বিস্মিত।

এ প্রসঙ্গে লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা সুলতানা বলেন, বুধবার দুপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এক গ্রাম পুলিশ মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

সরকারি (গ্রাম পুলিশ) চাকরি করলে নির্বাচনে বাধ্যবাধকতা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, মনোনয়ন ফরম যাচাই-বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং অফিসার বিষয়গুলো দেখবেন। আইনবিধি অনুযায়ী ত্রুটিযুক্ত হলে সেগুলো বাতিল হয়ে যাবে।

বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা ও ভাবা হচ্ছে বলেন জানান তিনি।