ছাত্রের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত ও খুন। শিক্ষকের অপমানে ছাত্রের আত্মহত্যা। এমন খবর প্রায় শোনা যায়। কখনো কখনো পত্রিকার পাতাতে চোখ আটকে যায় এমন শিরোনামে। প্রতিবাদে মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ ও র্যালি হয়। ঘটনার প্রতিবাদে অন্যায়কারীরা কি ভয় পাচ্ছে, না সমাজ থেকে অন্যায়-অপরাধ কমে গেছে? বাড়ছে না কমছে সে বিষয়ে আমি যাব না। কারণ আমার কাছে কোনো তথ্য-উপাত্ত নাই। যারা সমাজবিজ্ঞানী এ বিষয়ে গবেষণা করেন তারা ভালো বলতে পারবেন।
পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
আমরা শিক্ষককে পিতার মতো সম্মান ও শ্রদ্ধা করতাম। শিক্ষক ছিলেন আমাদের আদর্শ। শিক্ষকরাও আমাদের সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। শিক্ষকের কাছে আমরাও ছিলাম গর্বের। ছাত্রের হাতে শিক্ষক অপমানিত-অপদস্ত। আবার শিক্ষকের কাছে ছাত্র অপমানিত। এমন ঘটনায় মূল কারণ ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি । কেন এই দূরত্ব নিজের উপলব্ধি থেকে বের করার চেষ্টা করলাম। আমার উপলব্ধির সাথে আপনাদের দ্বিমত থাকতেই পারে। আবার কেউ কেউ হয়তো একমত হবেন। যা হোক ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে অবনতির কতিপয় কয়েকটি কারণ তুলে ধরলাম-
▪কতিপয় শিক্ষক-
• ছাত্রদের শ্রেণি বৈষম্য করে হেয় করে অপমানজনক কথা বলেন
• শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে আন্তরিক না হয়ে ছাত্রদের ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য করেন। না পড়লে পরীক্ষার খাতায় কম নম্বর দিয়ে ছাত্রের মনোবল ভেঙে দেন
• শিক্ষকের কোনো অনৈতিক কাজ, থিসিস জালিয়াতি, গবেষণাপত্র নকলের প্রমাণে শিক্ষকের প্রতি ছাত্রের আস্থা নষ্ট
• দুর্বল নৈতিকতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, ছাত্রদের মতামতকে অবমূল্যায়ন ও পক্ষপাতিত্ব করেন
• অনেক সময় ক্লাসে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে আলোচনা করেন
• ছাত্রদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সমর্থনের পরিবর্তে উল্টো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেন
• দলীয় লেজুড়ভিত্তিক শিক্ষক রাজনীতি করেন
• বড় পদ ও বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা আদায়ে ছাত্রনেতাদের ব্যবহার করেন
▪কতিপয় ছাত্র-
• শিক্ষকের প্রতি অকারণে উত্তেজিত হয়ে অশোভন ভাষা ব্যবহার ও আচরণ করে
• তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষকের ওপর হামলা করে
• এক শ্রেণির শিক্ষকদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে অন্য শিক্ষককে অপসারণে আন্দোলন করে
• অযাচিতভাবে শিক্ষককে কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে
• শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেয়
• প্রতিহিংসা, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ছাত্র রাজনীতি করে
▪শাস্তির নিষেধাজ্ঞা –
• ছাত্র ক্লাসে পড়া ঠিকমতো বলতে না পারলে এমনকি শিক্ষকের সাথে অসদাচরণ করলেও বেত্রাঘাতের শাস্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারি
• শাস্তি দিলে কতিপয় অভিভাবক শিক্ষকের ওপর হামলা ও শরীরে হাত তোলা
• সন্তানের অন্যায় আচরণে শাসন না করে বরং তার মূল্যবোধকে ধবংস করা
▪কতিপয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি –
• রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি নন এমন অযোগ্যদের সভাপতি ও সদস্য করা
• অশিক্ষিত, আধা শিক্ষিত, অযোগ্য কমিটি দিয়ে বছরের পর বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা
• শিক্ষক নিয়োগে দলীয়করণ, অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করা
• কমিটি কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়া
▪অযোগ্য নেতৃত্ব-
• শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় অযোগ্যদের হাতে নেতৃত্ব থাকায় ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে মূল্যবোধের অবনতি ঘটছে। যোগ্য নেতৃত্বই দিতে পারে একটি সভ্য ও সুন্দর আত্মমর্যাদাপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা।
▪পরিশেষে-
• ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে ছাত্রকে শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং শিক্ষককে ছাত্রের প্রতি স্নেহশীল হতে হবে। তবেই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক দৃঢ় হবে। সেইসাথে শিক্ষাব্যবস্থার বুনিয়াদকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাবে।
লেখক: মো. নবী আলম; উন্নয়ন কর্মী ও সাংবাদিক।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।
গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।
Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net