গত কয়েক বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কোরবানিদাতারা। ক্রেতার অভাবে অনেকে তাদের চামড়া নিয়ে অপেক্ষায় থাকছেন। ক্রেতাদের যেন কোনো আগ্রহই নেই চামড়ার প্রতি।
মাঝারি আকারের ছাগলের চামড়া দশ-বিশ টাকায় এবং গরুর চামড়া চারশ থেকে পাঁচশ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ চিত্র চাটমোহরের এগারো ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার। ঈদের দিন বৃহস্পতিবার চাটমোহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় এ চিত্র।
চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর-ছোট শালিখা সমাজের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান জানান, ‘এবার আমাদের সমাজের ছোট বড় মিলে ৯০টি ছাগলের চামড়া ২ হাজার ২৫০ টাকায় ও ২৫টি গরুর চামড়া ১৩ হাজার ৭৫০ টাকায় ও একটি মহিষের চামড়া ৫৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। খাশির মাংস এক হাজার টাকা কেজি অথচ একটা চামড়ার দাম মাত্র দশ-বিশ টাকা।’
উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের চরসেনগ্রামের সাইদুল ইসলাম জানান, ‘আমাদের ৯৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি গরুর চামড়া মাত্র ৫শ টাকায় বিক্রি করেছি। গত কয়েক বছর যাবত চামড়ার মূল্য একেবারেই কমে গেছে। এবার ক্রেতাদের চামড়া কেনায় আগ্রহ ছিল না।’
রামনগর গ্রামের বকুল মাস্টার জানান, ‘১৪ হাজার টাকা দামের একটি ছাগলের চামড়া ১০ টাকায় এবং এক লাখ টাকা দামের একটি গরুর চামড়া ৪০০ টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি।’
চাটমোহর পৌর সদরের নতুন বাজার এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী রনজিৎ দাস জানান, ‘সারা বছর চামড়ার ব্যবসা করলেও আমরা ঈদুল আজহার সময় সবচেয়ে বেশি চামড়া কিনি। এবার আমি প্রায় এক হাজারটি খাশির চামড়া এবং ৪০০ গরুর চামড়া কিনেছি। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে আমাদের কাছে চামড়া আসে। আমরা ছাগলের চামড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা এবং গরুর চামড়া ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় কিনে প্রক্রিয়াজাত করছি। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা গ্রাম থেকে চামড়া কিনে আমাদের কাছে বিক্রি করেন আমরা লবণজাত করে নাটোরের মোকামে মাল পাঠাই।’
তিনি আরও জানান, ‘নগদ টাকায় চামড়া কিনতে হয় তাদের। ঈদের সময় শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। অনেক ব্যবসায়ীর টাকা মোকামে দীর্ঘদিন পড়ে থাকে। বিভিন্ন সংকটের কারণে অনেকেই চামড়ার ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।’
চাটমোহর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোখলেছুর রহমান বিদ্যুৎ জানান, ক্রেতাদের আগ্রহ না থাকায় ঈদের দিন চামড়া নিয়ে অনেকেই বিপাকে পড়েন। দশ-বিশ টাকায় খাশির চামড়া এবং চারশ থেকে আটশ টাকায় গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে।
উল্লেখ্য, অনেকে চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। অনেকেই স্থানীয় এতিমখানা, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তাদের চামড়া দান করে দিয়েছেন।
চাটমোহরে মাত্র চার-পাঁচজন চামড়া ব্যবসায়ী চামড়া কিনে প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ করছেন।