চিনির বিকল্প স্টিভিয়া

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ৭ মাস আগে

চিনির সংকট পূরণে লালমনিরহাটে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হচ্ছে স্টিভিয়া। প্রতি কেজি স্টিভিয়া গাছের পাতার গুঁড়া ৩০/৩৫ কেজি চিনির কাজ করবে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুখবরও বটে।

জানা গেছে, উৎপাদনের তুলনায় দেশে চিনির চাহিদা ব্যাপক থাকায় দামও প্রচুর। একে দাম বেশি, তার ওপর চিনি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। চিনি বেশি খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের সমস্যা বাড়ায়। এ কারণে চিনির বিকল্প হিসেবে স্টিভিয়া চাষাবাদ হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। সেই স্টিভিয়া পরীক্ষামূলকভাবে চাষাবাদ করে সফল হয়েছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী জীবন কৃষ্ণ রায়। মাত্র ১৭টি স্টিভিয়া চারা দিয়ে প্রকল্প শুরুর আট মাসেই শতাধিক চারা করেছেন তার বাগানে। এখন পরিকল্পনা বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের।

উপ-সহকারী প্রকৌশলী জীবন কৃষ্ণ রায় লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের সোনারহাট এলাকার ভূপেন্দ্রনাথ রায়ের ছেলে। তিনি আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। চাকরির ফাঁকে ছুটির দিনে স্টিভিয়া বাগান পরিচর্যা করেন তিনি।

জীবন কৃষ্ণ রায় জানান, চাকরি জীবনের একটা প্রশিক্ষণে গিয়ে স্টিভিয়া সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা শুনে বাড়িতে স্টিভিয়ার গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করেন জীবন। এরপর ইউটিউব দেখে অনলাইনে অর্ডার করে এর ১৭টি চারা সংগ্রহ করে বাগানে রোপণ করেন। মাত্র আট মাসের ব্যবধানে তার বাগানে শতাধিক চারা হয়েছে। গাছের গোড়া থেকে গজিয়ে ওঠা নতুন গাছ থেকে স্টিভিয়ার চারা সংগ্রহ করতে হয়। একটু নিড়ানি, জৈব সার আর পরিমিত পানি সেচ দিলেই গাছ বেড়ে ওঠে। প্রতিটি গাছ জন্মানোর মাত্র তিন মাস পর থেকে পাতা ও ডাল সংগ্রহ করা হয়। এরপর এসব পাতা ও ডাল রোদে শুকিয়ে গুঁড়া করতে হয়। সেই গুঁড়া সামান্য পানিতে দিলে তা চিনির চেয়েও বেশি মিষ্টি লাগে। এর কাঁচা পাতা পানিতে দিয়ে গরম করলে সে পানিও চিনির মতো মিষ্টি হয়।

তিনি আরও বলেন, এ কাঁচা পাতা পানিতে দিয়ে গরম করে তাতে চা পাতা দিলে দারুন স্বাদ পাওয়া যায়। যারা চায়ে চিনি খেতে পছন্দ করেন, কিন্তু অসুস্থ হওয়ার ভয়ে চিনি ছাড়াই চা পান করেন, তারা অনায়াসে চিনির পরিবর্তে স্টিভিয়ার কাঁচা পাতা বা গুঁড়া দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন। স্টিভিয়ার পাতা অত্যন্ত ওষুধি গুণ সম্পন্ন, তাই এটি চিনির মতো ক্ষতিকর নয় বরং উপকারী। আবার স্বাদেও চিনির চেয়ে মিষ্টি। এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত সেবন করলে স্টিভিয়ার পাতা মানবদেহে কোলেস্টেরল এবং ইনসুলিন ও গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

স্টিভিয়ার গুঁড়া দিয়ে ফিরনি-পায়েসসহ নানা ধরনের মিষ্টান্ন তৈরি করা সম্ভব। স্টিভিয়ার প্রতি কেজি গুঁড়া ৩০/৩৫ কেজি চিনির কাজ করে। স্টিভিয়ার গুঁড়া বাজারজাত করা যায়। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি স্টিভিয়ার গুঁড়া বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকায়, যোগ করেন তিনি।

জীবন কৃষ্ণ রায় আরও জানান, তার বাগানে উৎপাদিত স্টিভিয়ার গুঁড়া রংপুর ডায়াবেটিস সমিতির সদস্যদের জন্য পাঠানো হয়। তারা স্টিভিয়ার গুঁড়া দিয়ে চা পান করে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে উল্লেখযোগ্য ভালো রিপোর্ট পেয়েছেন। ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে তার বাগানের স্টিভিয়ার চাহিদা বাড়ছে। তাদের চাহিদা বিবেচনায় বাগানের পাতা ও ডাল সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে তা গুঁড়া করে সরবরাহ করছেন তিনি। এ প্রজেক্টটি পরীক্ষামূলকভাবে করে বেশ সফল হয়ে এখন বাণিজ্যিকভাবে স্টিভিয়া চাষাবাদের পরিকল্পনা করেছেন তিনি। স্থানীয় অনেকেই দেখতে এসে তার বাগান থেকে চারা সংগ্রহ করছেন। এটি বারান্দায় বা বাড়ির উঠানে আবার ছাদে টবেও চাষাবাদ করা সম্ভব। এ কারণে টবেও চারা তৈরি করা হচ্ছে।

স্টিভিয়ার পাতা চিবিয়ে খেলে মুখে মিষ্টির স্বাদ দীর্ঘ সময় থেকে যায়। শিশুরা এ গাছকে চকলেট গাছ, কেউ চিনি গাছ আবার কেউ এটিকে মধু গাছ বলেও চেনে। তবে এটি স্টিভিয়া নামে সারা বিশ্বে পরিচিত। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি বেশ চাহিদার একটি গাছ। এটি চিনির স্বাদ দিলেও ডায়াবেটিস রোগীর কোনো ক্ষতি করে না।

স্থানীয় ইকবাল হোসেন বলেন, স্টিভিয়ার পাতা চিনির চেয়েও মিষ্টি শুনে জীবন কৃষ্ণ দাদার বাগানে এসেছি স্বাদ নিতে। সত্যিই চিনির বিকল্প এটি। আমি খেয়ে একটি চারা নিয়েছি, বাড়িতে লাগাব। এটি আমাদের চিনির চাপ কমাতে সাহাস্য করবে।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল কাদির গণি বলেন, স্টিভিয়ার পাতায় মিষ্টি স্বাদ মিললেও তা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সেবনযোগ্য। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা স্টিভিয়া ব্যবহার করে থাকেন।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. সাইখুল আরেফীন বলেন, আমি নিজেও স্টিভিয়ার পাতা খেয়েছি। যা চিনির বিকল্প একটি ফসল। বিণিজ্যিকভাবে চাষ করার আগে এটির ব্যবহার সম্পর্কে জনগণকে জানাতে হবে। স্টিভিয়া চিনি জাতীয় খাদ্য হলেও এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সেববযোগ্য। এটির চাষাবাদ বাড়লে চিনির ঘাটতি পূরণে বেশ সহায়ক হবে।