চার হাজার কোটি টাকা খরচ করে শেখ মুজিবের ১০ হাজার ম্যুরাল বানানো হয়

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ৩ ঘন্টা আগে
সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণে সরকারের বিশাল অংকের ব্যয়ের পর, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এগুলো ভাঙা শুরু করেছে। ১৫ বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দেশের বিভিন্ন শহর ও অঞ্চলে বঙ্গবন্ধুর ১০ হাজারেরও বেশি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়, যার জন্য ব্যয় হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা।

সরকারি কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, এই ম্যুরাল নির্মাণে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হয় যে, চার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এসব ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও প্রতিকৃতির জন্য প্রধানত স্থানীয় প্রশাসন এবং বিভিন্ন সরকারি মন্ত্রণালয় ছিল দায়ী। বিশেষ করে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের পাশাপাশি প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন দপ্তরও নিজের উদ্যোগে এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে।

কিন্তু, বর্তমান সরকারের পতনের পর, ৫ আগস্টের পর বেশ কিছু ম্যুরাল ও ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়েছে, এবং যেগুলো ভাঙা সম্ভব হয়নি, সেগুলোতে কালি মাখিয়ে বিকৃত করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, অনেক স্থানে সংস্কারের মাধ্যমে এগুলোকে এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে যে, বোঝা যায় না যে সেগুলো আগে ভাস্কর্য বা ম্যুরাল ছিল।

নতুন সরকার এসব স্থাপনাকে অপচয় হিসেবে দেখছে এবং এতে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে বলে মন্তব্য করছে। ২০২১ সালের মার্চে একটি উচ্চ আদালতের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, দেশে বঙ্গবন্ধুর মোট ১,২২০টি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, আরও হাজারো ছোট-বড় ম্যুরাল এবং ভাস্কর্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থাপন করা হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্ত্বাবধানে এসব স্থাপনা নির্মাণে প্রায় কোনো পৃথক প্রকল্পও গৃহীত হয়নি, বরং প্রতিটি দপ্তরের বাজেট থেকেই এই খাতে ব্যয় করা হয়। এসব স্থাপনায় ব্যয় হওয়া অর্থের হিসাব আলাদাভাবে রাখা হয়নি, যাতে প্রকৃত ব্যয়ের পরিমাণ সঠিকভাবে গণনা করা সম্ভব না হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল এবং ভাস্কর্য নির্মাণ শুধু রাজধানী বা শহরগুলিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না; দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা, এমনকি ইউনিয়ন পরিষদগুলোতেও এসব স্থাপনাগুলি নির্মাণের নির্দেশ ছিল। তবে অনেক ক্ষেত্রে, পরিকল্পনা অনুযায়ী সব স্থানে এসব ম্যুরাল বা ভাস্কর্য স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

এছাড়া, সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাথমিক স্কুলগুলিতেও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে, এবং এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির উন্নয়ন কর্মসূচির ফান্ডের টাকা ব্যবহার করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৭০০ এরও বেশি দপ্তরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে, যার প্রতিটির জন্য ৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়, বিমানবন্দর, সড়ক, নদীর তীর এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানেই এসব ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছিল। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যুরাল নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৫০ লাখ টাকা, এবং অন্যান্য ভাস্কর্য ও ম্যুরালের নির্মাণেও বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে।

এদিকে, নতুন সরকারের পক্ষ থেকে এসব অতিরিক্ত ব্যয় এবং অপচয়ের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া হয়েছে, এবং অনেক ম্যুরাল ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। শিগগিরই দেশের অন্যান্য অংশেও এসব স্থাপনাগুলোর পুনর্বিবেচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।