পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। সিলেট অঞ্চলের অনেক মনীষী আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিশিষ্টতা দিয়েছেন। বিশেষ করে হাসন রাজার গান, শাহ আব্দুল করিমের গান — ওনাদের সৃষ্টিশীল কর্ম মানুষের মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। এর কারণ সম্ভবত এসব গুণীজন একাধারে গান রচনা, সুরারোপ, সংগীত চর্চায় আত্মনিবেদিত ছিলেন। সে কারণে তাঁদের সৃষ্টি অনন্য এবং অমর হয়ে আছে।
তিনি বলেন, শুধু সিলেট অঞ্চলের নয়, আমাদের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, সাহিত্যিক মীর মোশাররফ হোসেন এরকম অনেক গুণীজন তাঁদের অনন্য সৃষ্টি রেখে গেছেন। এদের মতো করে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চায় মনোনিবেশ করলে আমাদের সংস্কৃতি আরো সমৃদ্ধ হবে, আরও বৈচিত্র্যময় হবে।
শুক্রবার (২১ জুলাই, ২০২৩) সকাল ১১টায় সিলেট শহরের পূর্ব শাহী ঈদগাহস্থ একাডেমি মিলনায়তনে জেলা পর্যায়ে শিল্প-সংস্কৃতিতে সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সিলেট জেলার ৫ গুণী শিল্পীকে ‘জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা পদক ২০২২’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আজ যারা শিল্পকলার বিভিন্ন শাখায় অবদানের জন্য সম্মাননা পেলেন এবং আগামীতে যারা পাবেন তাঁরা এসব সৃষ্টিশীল কাজে আরও বেশি মনোনিবেশ করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার আমাদের সংস্কৃতি চর্চায় সবধরনের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে। জেলা, উপজেলা পর্যায়ে শিল্পকলার নিয়মিত কর্মকান্ডে আয়োজনে সরকারি ব্যবস্থাপনা পূর্বের চেয়ে এখন অনেক বাড়ানো হয়েছে। গুণীজনদের কাজের সরকারি স্বীকৃতি হিসেবে শিল্পকলা একাডেমির সম্মাননা সংস্কৃতি কর্মীদের উৎসাহিত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্যকারীদের বয়কট করতে গণমাধ্যমকে আহবান জানান।
এসময় তিনি বলেন, পৃথিবীর আর কোথাও অ্যাক্টিভিস্ট রাষ্ট্রদূতরা দলবেঁধে মন্তব্য করে বেড়ায়না বিদেশিদের মন্তব্য গণমাধ্যম অতিপ্রচার করার কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলে তারা মজা পায়। তারা নিজেদেরকে এ দেশের সম্রাট মনে করে।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৪০ জন মারা যাওয়া নিয়ে একটি দেশও কথা বলেনি। আমাদের দেশে কে কী করল, সঙ্গে সঙ্গেই চিৎকার। এটা অভ্যন্তরীণ বিষয়ের ওপর হস্তক্ষেপ, যা জেনেভা কনভেনশনের ধারে কাছেও নেই। বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ বলে তারা এটা করে।
অনুষ্ঠানে সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমানের সভাপতিত্বে আবৃত্তিশিল্পী রোহেনা সুলতানার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সম্মাননাপ্রাপ্ত গুণীশিল্পীগণের পক্ষে অনুভূতি জ্ঞাপন করেন মিহিরকান্ডি চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে জেলা কালচারাল অফিসার অসিত বরণ দাশ গুপ্তে স্বাগত বক্তব্যে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন -অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাক ও সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান।
জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা ২০২২ পদক প্রাপ্ত গুণীশিল্পীরা হলেন – মিহিরকান্তিচৌধুরী (লোকসংস্কৃতি), পূর্ণিমা দত্ত রায় (কণ্ঠসংগীত), চম্পক সরকার (নাট্যকলা), জ্যোতি ভট্টাচার্য্য (আবৃত্তি) ও মোঃ মিনু মিয়া (যন্ত্রসংগীত)।
সম্মাননা প্রদান আয়োজনের শুরুতেই পপি দাসের সহপরিচালনায় ‘আলো আমার আলো, ওগো আলোয় ভুবন ভরা’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা। অনুষ্ঠানে ৫টি ক্যাটাগরিতে ৫ গুণীশিল্পীর হাতে সম্মাননা পদক, সম্মাননা চেক, সনদপত্র ও উত্তরীয় তুলে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।
সিলেট/ অমিতা সিনহা/ ২১ জুলাই ২০২৩।