পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি ও সমাবর্তন আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে ডিনদের সঙ্গে নিজের দপ্তরে বসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। কীভাবে অনুষ্ঠান করা যায়, সেটি নিয়েই হচ্ছিল নানা কথা। গত বৃহস্পতিবার (০৩ নভেম্বর) সকালে এই সভাটি হয়েছিল। তবে অভ্যন্তরীণ সভা হওয়ায় এতদিন সেখানে কী আলোচনা হয়েছিল, তা সেভাবে প্রকাশ্যে আসেনি।
সভা সূত্রে জানা গেছে, এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী উপাচার্যকে সমাবর্তনের আগে সিন্ডিকেটের ডিন ক্যাটাগরির নির্বাচন দেয়ার অনুরোধ জানাতেই বদলে যায় সভার পরিবেশ। কথা-পাল্টা কথা চলার সময় নিজের আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ক্ষুব্ধ উপাচার্য শাসাতে শুরু করেন নিজামীকে। একপর্যায়ে বলে ওঠেন ‘চুপ বেয়াদব, একদম চুপ। বের হয়ে যান।’
এ ঘটনায় পরে হেলাল উদ্দিন নিজামী গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন। সেখান তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন। পুরো কর্তৃপক্ষ দুর্নীতিতে জড়িত। শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে সবকিছুতেই অনিয়ম হচ্ছে। কিন্তু উপাচার্য এসব রুখতে চান না। এর প্রমাণ হচ্ছে সিন্ডিকেট নির্বাচন না দেওয়া। আমি শুধু নির্বাচন কবে হবে, এটি জানতে চেয়েছিলাম। এতে উপাচার্য অশোভন আচরণ করেছেন। অশালীন কথা বলেছেন।’
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সভার বিষয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয়ায় ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন হেলাল উদ্দিন নিজামীকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে (শোকজ) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, তার ওই বক্তব্যে উপাচার্যের মানহানি হয়েছে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিয়ে প্রথম আলো পত্রিকায় বক্তব্য দিয়েছিলেন ডিন হেলাল উদ্দিন নিজামী।
গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসানের সই করা এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। মঙ্গলবার সকালে এই চিঠি হেলাল উদ্দিন নিজামীর কার্যালয়ে পৌঁছেছে। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ঢালাওভাবে প্রমাণ ছাড়া এ ধরনের মন্তব্য ভিত্তিহীন এ মন্তব্যর যথাযথ প্রমাণ ও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আর হেলাল উদ্দিন নিজামী জানান, তিনি চিঠির উত্তর তৈরি করছেন। এ বিষয়ে পরে মন্তব্য করবেন।
গত বৃহস্পতিবারের সভার ১ ঘণ্টা ২৯ মিনিটের একটি অডিও ক্লিপ গণমাধ্যমে হাতে এসেছে। সেই অডিও ক্লিপে উপাচার্য-ডিনের বাগ্বিতণ্ডার বিস্তারিত শোনা যায়। অডিও ক্লিপটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আলোচনার একপর্যায়ে হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস বা সমাবর্তন করব, অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনই রক্ষা করছি না।
তিনি বলেন, ‘অনেক সিন্ডিকেট সদস্যের পদ খালি। সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নেই। আমরা ডিনরা আছি। অথচ ডিনরা সিন্ডিকেট সদস্য হতে পারবে না।’ তখন উপাচার্য বলেন, ‘আমাকে সময় দিন।’ হেলাল উদ্দিন জানতে চান, ম্যাডাম আর কতদিন সময় দেব। সমাবর্তনের আগে সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচন না দিলে আমি অনুষ্ঠানে আসব না।
ডিনের এ কথাতেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন উপাচার্য। বলতে থাকেন, ‘আমি সিন্ডিকেট নির্বাচন করব না। সমাবর্তন করব না। আপনি যান।’ কথা-পাল্টা কথার একপর্যায়ে ডিনকে বেয়াদব উল্লেখ করে উপাচার্য টেবিল চাপড়ে বলতে থাকেন, ‘বেয়াদব, চুপ, একদম চুপ। বের হয়ে যান।’ সেটি শুনে হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, ‘আপা আপনি সীমা লঙ্ঘন করবেন না। আপনি গায়ের জোরে সবকিছু করে যাবেন, আইন মানবেন না। নিজের মতো করে সিন্ডিকেটে সবকিছু পাস করিয়ে নেবেন, তা তো হতে পারে না।’
এভাবে দুজনের বাগবিতণ্ডা চলতে থাকে ৫-৬ মিনিট ধরে। এতেই মূলত পণ্ড হয়ে যায় সভা। সভাকক্ষ ছেড়ে চলে যান উপাচার্য। দুজনের বাগ্বিতণ্ডার সময় সভায় উপস্থিত অন্য সাত ডিন চুপ ছিলেন। পরে হেলাল উদ্দিন নিজামী অন্য ডিনদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাকে এভাবে উপাচার্য বেয়াদব বলে গেলেন। আপনারা কেউ কিছু বললেন না। আপনারা বিচার করুন।’ তখন কয়েকজন তার পক্ষে কথা বলতে শুরু করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ সিন্ডিকেট। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, ১৬ সদস্যের এ পর্ষদের ৮ পদই খালি। আর মেয়াদোত্তীর্ণ সদস্য আছেন আরও দুজন। সিন্ডিকেটে ডিন ক্যাটাগরির পদে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১২ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর। দুই বছর পর পর এ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও আট বছর ধরে এ নির্বাচন হচ্ছে না। সর্বশেষ গত ১২ অক্টোবর সিন্ডিকেটে ডিন ক্যাটাগরির নির্বাচন চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন ৮ অনুষদের ডিন।
সিন্ডিকেটে ডিন ক্যাটাগরিতে নির্বাচন দিতে গত ১২ অক্টোবর উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছেন সব অনুষদের ডিন। কিন্তু চিঠি দেওয়ার ২২ দিন পরও নির্বাচনের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় গত বৃহস্পতিবারের সভায় এ বিষয়ে উপাচার্যের কাছে জানতে চান ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন নিজামী। এ সময় উপাচার্য তার চেয়ার ছেড়ে উঠে ডিনকে শাসাতে থাকেন এবং নির্বাচন দেবেন না বলে জানান।