গুলশানের অত্যাধুনিক ভবনে যেভাবে আগুন লাগে

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট
প্রকাশ: ২ years ago

রাজধানীর গুলশান-২-এ অত্যাধুনিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। ২২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ ৯, নারী ১২ ও একজন নবজাতক। তাদের ভবনের ছাদ ও তলা থেকে উদ্ধার করা হয়।

এমন অত্যাধুনিক একটি ভবনে কীভাবে আগুন লাগলো এবং সেখানকার অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা কেমন ছিল তা নিয়ে মানুষের প্রশ্ন মুখে মুখে।

বৈদ্যুতিক তার (ডাকলাইন) থেকেই এই আগুন লেগেছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা।

তিনি জানান, ওই ভবনের চারতলায় ডাকলাইনে প্রথমে আগুন লাগে। কিন্তু ১২ তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে বিশাল বহুল ডেকেরেশনের কারণে আগুন ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আর ওই অত্যাধুনিক ভবনে আগুন নেভানোর তেমন কোনো সরঞ্জামাদি (ইক্যুপমেন্ট) পাওয়া যায়নি। যাও আছে, সেটা কোনো কাজে আসেনি।

পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে গুলশান-২ নম্বরের ১০৪ নম্বর সড়কে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টাপাশে ২/এ হোল্ডিংয়ের জাকির মোশাররফ স্কাইলেন নামে ১৩ তলা অত্যাধুনিক ভবনে আগুন লাগে। সম্মিলিত বাহিনীর প্রায় চার ঘণ্টা চেষ্টায় রাত ১১টার পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৯ ইউনিট, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা কাজ করেন।

ভবনের ভেতরে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করা বারিধারা ফায়ার স্টেশনের একজন কর্মী জানান, ভবনের চারতলার বৈদ্যুতিক তার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। এতে পুরো ভবনে ধোঁয়া ছেয়ে যায়, সিঁড়ি ব্যবহার করে কেউ নামতে পারেনি। আর আগুন তাড়াতাড়ি ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে ১১ ও ১২ তলায় ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি জানান, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা চারতলা থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিতে নিতে ওপরে ওঠে‌। পরে এসব ফ্লোরে আর আগুন ধরেনি। তবে ভবনের দুটি ফ্লোরে আগুন ছড়িয়ে পড়ার কারণ হচ্ছে অতিমাত্রায় ডেকেরেশন। এ ছাড়া অত্যাধুনিক ভবন হওয়া শর্তেও ফায়ার সরঞ্জামাদি খুবই কম। আর যাও আছে, সেটা বৈদ্যুতিকের শত শত তারের পাশ দিয়ে দেওয়া। এতে আগুনে ওই সব ফায়ার সরঞ্জামাদি আগেই পুড়ে যায়। এ ছাড়া ওই ভবনের সামনে ছাড়া কোনও রাস্তা না থাকায় অন্য ভবনের ওপর দিয়ে ভেহিক্যাল দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়।

বৃহত্তর ঢাকা জেলার ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, অত্যাধুনিক ভবনের ডুপ্লেক্স ফ্লাটের অতিরিক্ত ডেকরেশনের কারণে আগুনের এই ভয়াবহতা। আমরা চার তলা থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিতে নিতে উপরে দিকে উঠেছি। এ সময় আমাদের আরেকটি ইউনিট ফ্ল্যাট থেকে মানুষদের উদ্ধার করেছে।

ভবন নির্মাণের আগে ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া স্টাকচার (আগুন নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) আছে কি না, জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা বলেন, ওটা পায়নি। ওটাকে হাইড্রেন লাইন ভবনে নেই। তবে সিগন্যাল বালফ আছে। এ ছাড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে বাসার যেই আলাদা সেফটি ট্যাংক থাকে, সেটাই পানি নেই। আমরা পানি দিলে ওরা কাজ করবে। কিন্তু ভবনের কাপ্তাইয়েন (পানির লাইন) দিয়ে কাজ করবো সেই সুযোগ নেই।

ভবনে সাইড ইক্যুইপমেন্ট ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাইড ইকুইপমেন্ট যা ছিল কাজ করেনি। এ ছাড়া যথেষ্ট ইকুইপমেন্টও নাই ভবনে। আর ফায়ার ইকুইপমেন্ট ভবনের যেখানে লাগানো, সেখানে লাগানোর কোনও নিয়ম নেই। তারপরও সেখানে লাগানো। এতে ফায়ার ইকুইপমেন্ট কোনও কাজে আসেনি। ডাকলাইনের পাশে হওয়ায় সব পুড়ে গেছে আগেই।

ফায়ার সার্ভিস আরও জানায়, ভবনের চার তলা থেকে শুরু করে ১২ তলা পর্যন্ত ডাকলাইন (মূল বৈদ্যুতিক লাইন) বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ১১ ও ১২ নম্বর ফ্লোর পুরে গেছে। আর ৭ থেকে ১০ তলা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে টাকার পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি জানা যায়নি।

এদিকে, আগুনের ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন।

তিনি বলেন, গুলশানে আগুনের ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।

তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে, ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে। বাকি সদস্যরা হলেন বাহিনীর উপপরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স), ঢাকার সহকারী পরিচালক, গুলশান জোনের উপসহকারী পরিচালক ও স্থানীয় ফায়ার স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।


Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net