আজ সকালে উঠে নাস্তা খেতে গিয়ে নজর পড়ল টেবিলের মাঝখানে বসা মাছিটির ওপর। মনে হলো, একটি তরতাজা জ্যান্ত মাছি শান্ত হয়ে বসে বিশ্রাম নিচ্ছে – যেন এই সোনালি সকালে নিছক আরামে বসে সময় কাটানো ছাড়া তার কোনো খাওয়া নেই, কাজ নেই, তাড়া নেই, ওড়াউড়ি নেই। আপনারা বলতে পারেন, ‘খাবার টেবিলে মাছি বসেছে, এ আবার নতুন কী, এমন ঘটনা সবার ঘরে তো সব সময় লেগেই আছে। আর মাছি বসবে না তো ঈগল পাখি উড়ে এসে আপনার টেবিল জুড়ে বসবে?’ না, তা বসবে না। আপনাদের কথা সবই ঠিক, সবই মানলাম। এটি নিতান্তই একটি তুচ্ছ ও সামান্য ঘটনা, যা হরহামেশা সবাই দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু ব্যাপার হলো, আজ একটি সাধারণ মাছি দেখে হঠাৎ আমার মনে ‘অসাধারণ’ বলব না, তবে কিছু এলোমেলো প্রাসঙ্গিক ভাবনা এসে উঁকিঝুঁকি মারছে। আর তাই আপনাদের সঙ্গে আমার অন্তরের গহিনে লুকিয়ে থাকা দু’টো কথা ভাগাভাগি করে নিতে মনটাও কেন যেন আনচান করে উঠছে। এই মাছির কথায় শেষে আবার ফিরে আসব।
তার আগে, নিত্যদিন মাছি দেখলে আমাদের পরিবারে সাধারণত কী প্রতিক্রিয়া হয়, সে কথা একটু বলে নেই। ঘরের ভেতরে বসা অথবা ওড়াউড়ি অবস্থায় কোনো মাছি দৃষ্টিগোচর হলে – কী গিন্নি, কী আমার মেয়েরা ‘মাছি, মাছি – ধর, ধর, মার, মার’, বলে হৈচৈ চিল্লাচিল্লি শুরু করে দেয়। আর রান্নাঘরে হুলস্থূল যতই বাড়তে থাকে, মাছি দেওয়ানা হয়ে ততই উড়তে থাকে। কোথাও বসতে চায় না, ফলে তাকে বধ করা আমার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মাছি মারতে ব্যর্থতার পারদ যতো উপর দিকে উঠে, ততই আমার মনের মধ্যে রাগ এবং জেদও চেপে বসে। উত্তেজিত দেহ-মনে উপর্যুপরি নিষ্ফল আক্রমণে কোনো ফল ফলে না। আমার এ করুণ দশা দেখে, একদিকে মেয়েরা হাসে এবং বলে, ‘আব্বু, এ কী – তুমি একটা মাছিও মারতে পার না!’ অন্য দিকে মাছিটি তখন শুধু উড়ে না, ভন্ভন্ সুরে গান গেয়ে আমাকে বিদ্রুপও করে! এই বিরক্তি আর হতাশার মাঝে কোনো এক ‘মাছিমারা কেরানির’ কথা আমার মনে পড়ে যায় এবং নিজেকে তাঁর মতনই অসহায় মনে হয়!
‘মাছিমারা কেরানি’ বলে যাঁরা মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে এই তত্ত্বকথা আবিষ্কার করেছেন, তাঁরা কি জানতেন না, ‘মাছি মারা’ কাজটি কত কঠিন! অবশ্যই জানতেন, না জানার তো কোনো কারণ দেখি না। একজন কেরানি যদি মাছি মারতে অপারগ হন তাহলে আপিসের বড় সাহেব কি পারবেন? আমার তো মনে হয়, তিনিও এ কাজে সমানভাবেই ব্যর্থ হবেন। তাহলে বেচারা কেরানির দোষটা কোথায়? এই কঠিন কাজের সাথে কেন একজন কেরানিকে টেনে এনে এভাবে গোটা কেরানিকুলকে অপমান করা হয়? অনেক দিন ধরে, অনেক কোশেশ করেও তার মর্ম উদ্ঘাটন করতে পারিনি। সময় সময় বিজ্ঞজনদেরকেও যে জিজ্ঞেস করিনি, তাও নয়, তবে কারো কাছেই সন্তোষজনক কোনো উত্তর মেলেনি।
আমার বিশ্বাস, এখানে মাছি মারামারিটা মূল বিষয় নয়, আসল ব্যাপার অন্য জায়গায়। আমি আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে জোড়াতালি দিয়ে এই ঘটমান বিষয়ের একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছি। শুনে দেখুন, আপনাদের কাছে কেমন লাগে। আমার ধারণা, ‘মাছিমারা কেরানি’ বলতে অদক্ষ, অনভিজ্ঞ, অথর্ব, আনাড়ি ও সর্বোপরি আহাম্মক কেরানিদের বুঝানো হয়, যাঁরা কোনো একটি কাজ সঠিকভাবে একবারে করতে পারেন না, কাজটি বুঝিয়ে দিলেও সমঝে নিতে জানেন না। যেমন এক আঘাতে মাছি মারা যায় না, তেমনি যে কেরানি একবারে একটি কাজ ঠিকমতো করতে পারেন না, তাঁকেই ‘মাছিমারা কেরানি’ বলে। সুধিগণ, আমার এ বুঝায় যদি কোনো গলত থাকে, তাহলে দয়া করে শুধরে দেবেন, কৃতজ্ঞ থাকব।
সম্প্রতি ‘মাছিমারা কেরানি’-র আরেকটি ব্যাখ্যা পেয়েছি অনুজপ্রতিম সরকার জাবেদ ইকবালের কাছে। এখানে আমি হুবহু তার বয়ানটি তুলে ধরছি: ‘মাছিমারা কেরানি সম্পর্কে একটি গল্প প্রচলিত আছে। গল্পটি এ রকম – অফিসের বড়কর্তা কেরানিকে একটি চিঠি টাইপ করতে দিলেন এবং শাসিয়ে গেলেন, হুবহু যেভাবে আছে সেভাবেই যেন টাইপ করা হয়। কেরানি নির্ভুলভাবে চিঠি টাইপ করলেন। কিন্তু সমস্যা দেখা দিলো চিঠির উপরিভাগে থাকা একটি বিমূর্ত ছবি নিয়ে। এটি কিভাবে টাইপ করা যায়, কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না। গভীরভাবে নিরীক্ষণ করার পর বুঝতে পারলেন, চিঠির উপর একটি মাছি বসেছিল যাকে থাপ্পড় দিয়ে মারা হয়েছে। তিনিও অনেক কষ্ট করে একটি মাছি ধরলেন এবং থাপ্পড় মেরে চিঠির উপর বসিয়ে দিলেন। তৈরি হয়ে গেল বিমূর্ত ছবি! একেই বলে মাছিমারা কেরানি’।
যে ব্যাখ্যাই সঠিক হোক না কেন, ‘মাছি মারা’ কাজটা যে কঠিন, এ ব্যাপারে তো কেউ দ্বিমত পোষণ করবেন না? আপনারা কি কখনো ভেবে দেখেছেন, ‘মাছি মারা’ কেন এতো কঠিন? কারণ, মাছি একেবারে ছোট না হলেও ছোট এবং তার শরীরের পাখনা দু’টো তুলনামূলকভাবে বড় বড়। ফলে উড়ালকালে তার গতি হয় মশা ও একই আকারের অন্য পোকার চেয়ে অনেক বেশি বেগবান। প্রাণী হিসেবে মাছি অত্যন্ত চঞ্চল ও অস্থিরমনা, সতর্ক এবং সচেতন – ইংরেজিতে যাকে বলা যায় ‘রেস্টলেস অ্যান্ড অ্যালার্ট’। তারচেয়েও বড় কথা, মাছির পুরো মাথা জুড়েই থাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন চোখ, সে তার চোখ চারদিকে সমানভাবে ঘোরাতে পারে, যার ফলে – উপরে, সামনে, ডানে, বাঁয়ে, এমন কী পেছনেও কিছু থাকলে সে দেখতে পায়। এই কারণে, ‘মাছি মারা’ সত্যি সত্যি একটি কঠিন কাজ! যে দিক থেকেই আপনি তাকে আক্রমণ করুন না কেন, মাছি আগেই টের পেয়ে উড়াল মারে, আপনাকে অহরহ বোকা বানায়!
অদক্ষ-অনভিজ্ঞ এক কেরানিকে দিয়ে এমন চৌকশ প্রাণীকে মারতে গেলে যে বিপর্যয় হবে, সেটা তো জানা কথা! বাংলার এই সহজিয়া কেরানিদের জন্য আমার বড় মায়া হয়, বড় সহানুভূতি হয়। আমাদের দেশে আমরা কেরানিদের যতটা তুচ্ছ ভাবি এবং তাঁদের নিয়ে যতটা মশকরা করি, পশ্চিমা দেশে একই পেশার মানুষদের ততোটাই সম্মান দেওয়া হয়। তুলনামূলকভাবে আমেরিকার কেরানিরা যে খুব শিক্ষিত, দক্ষ ও বুদ্ধিমান, তা কিন্তু নয়, তবে তাঁরা তাঁদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্বন্ধে একেবারে টনটনা। মার্কিন মুল্লুকে কেরানিদের ‘ক্লার্ক’ না বলে বলা হয় -‘সেক্রেটারি’। একইভাবে ফেডারেল এবং স্টেট গভর্নমেন্টের মন্ত্রীদেরও ‘সেক্রেটারি’ বলে। এ বার বুঝুন, এখানে কেরানিদের ঠাট কত! তাঁদের ক্ষমতা যাই থাকুক, দাপটে তাঁরা আসলেও কোনো সরকারের ‘সেক্রেটারি’-র চেয়ে কোনো অংশে কম নন। শুনবেন এখানকার কেরানিদের দম্ভের কাহিনি? তাহলে একটু ধৈর্য ধরুন, সংক্ষেপে বলছি।
ইউরোপ আমেরিকার যে কোনো আপিসের বড়সাহেব থেকে শুরু করে ঝাড়ুদার পর্যন্ত সবার দৈনন্দিন কার্যতালিকার একেকটি বিস্তৃত ফর্দ থাকে – যাকে বলে ‘জব ডেস্ক্রিপ্শন’। যাঁর যাঁর কাজ তাঁরা ভালো করে জানেন এবং বুঝেন। এর বাইরে আপনি যদি কাউকে কিছু করতে বলেন, তিনি মুখের ওপর বলে দেবেন, ‘আই কান্ট ডু ইট, দিস ইজ নট মাই জব’ – সে আপনি যত বড় বস্ই হোন না কেন। এ কথা অন্যদের বেলা যতটা না প্রযোজ্য, কেরানিদের বেলা তারচেয়ে ঢের বেশি। তারও একটি কারণ আছে, তবে সে আলোচনায় আজকে আর নাই-বা গেলাম। সীমানার বাইরে, কেরানিদের কাছে কেউ কিছু আবদার করলে, অপ্রিয় কথাটি তাঁকে শুনতেই হয়। আমার এ রকম একাধিক অভিজ্ঞতা আছে – কোনোটি হালকা, কোনোটি গুরুগম্ভীর।
একদিনের একটি ঘটনার বয়ান দিলেই আপনারা সহজে বুঝে যাবেন, এ দেশে কেরানিদের বাহাদুরির মাত্রা কতখানি! উনিশশ’ বিরানব্বই সাল – আমি ভিজিটিং প্রফেসার হিসেবে ইস্টার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটি থেকে টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে এসেছি। বছর শেষে আমার চাকরি নবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ‘পেপার-ওয়ার্ক’ যাতে তাড়াতাড়ি শুরু হয়, সে জন্য আমি একদিন ডিনের সাথে দেখা করলাম। ডিন বললেন, ‘তুমি আমার সেক্রেটারিকে বলে যাও, তোমার ‘পার্সোন্যাল ‘অ্যাক্শন-ফরম’ আজকেই তৈরি করতে, আমি বাড়ি যাওয়ার আগে সই করে দিয়ে যাব’। আমি তাঁর সেক্রেটারির সামনে এসে কথাটি এভাবেই পাড়লাম। তিনি কর্কশ স্বরে আমার সওয়ালের জওয়াব দিলেন, ‘তোমার এ কাজ সোমবারের আগে হবে না, ‘পার্সোন্যাল অ্যাকশন ফরম’ শেষ হয়ে গেছে’। আমি ডিনকে গিয়ে কথাটা জানালাম। ডিন এবার তাঁর সেক্রেটারির নাম ধরে ডেকে বললেন, ‘… তুমি কয়েকটি ফরম মেইন ক্যাম্পাস গিয়ে নিয়ে আস না’। ডিনের মুখের ওপর সে দিন তাঁর অধস্তন কর্মচারির জবাব শুনে তো আমি হতবাক! ‘আমি সোমবার মেইন ক্যাম্পাসে যাব, আজ মাত্র বৃহস্পতিবার, এই একটি কাজের জন্য ওখানে একটি বাড়তি ট্রিপ মারতে পারব না’, সেক্রেটারির সাফ জবাব (মেইন ক্যাম্পাস, ডিনের আপিস থেকে মাত্র ১০/১২ মিনিটের পথ)। ডিন তখন হেসে হেসে বললেন, ‘ঠিক আছে, আমিই যাচ্ছি – ‘ফরম’ নিয়ে আসব, আর কী কী কাজ জমা আছে, আমাকে দিতে পার’। পাঠকগণ, ফ্যাকাল্টির ডিন এবং তাঁর কেরানির মাঝে এমন কথোপকথন কি উভয় বাংলার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কল্পনা করতে পারেন? বাংলার কেরানিরা যখন মাছি মারায় ব্যস্ত, তখন ইউরোপ-আমেরিকায় তাঁদেরই স্বগোত্রীয় ভাইয়েরা – ভাই তো নয়, বোনেরা (এ দেশের প্রায় ৯৯ শতাংশ কেরানিই নারী) তাঁদের বস্দের রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন!
‘মাছি মারা’-র অনুষঙ্গ এলেই আমার আরেকটি ঘটনার কথা মনে পড়ে। উনিশশ’ নব্বই দশকের শেষ দিকে কোনো এক গ্রীষ্মের ছুটিতে বাংলাদেশে গিয়েছি। সে বছর আমি ঢাকার নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে তিনটি সামার কোর্স পড়াচ্ছিলাম। একদিন ক্লাসের ফাঁকে বিজনেস স্কুলে একসেমিনারে গিয়ে হাজির হলাম। উপস্থাপকের নামধাম, পরিচয়, এমন কী তাঁর প্রবন্ধের বিষয়বস্তু কী ছিল তাও মনে নেই। শুধু এইটুকু বলতে পারব, ভদ্রলোকের বক্তৃতা শেষ হলে প্রশ্নোত্তর পর্বে কার্যকারিতা (ইফেক্টিভনেস) এবং দক্ষতার (এফিসিয়েন্সি) প্রসঙ্গ এসেছে। তিনি এ দু’টোর পার্থক্য বুঝাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। ওই সময় শ্রোতা-দর্শকদের প্রথম সারি থেকে এক ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আপনি মাছি মারতে যদি হাতুড়ি ব্যবহার করেন, তবে এটা হবে সবচেয়ে ‘কার্যকর’ (ইফেক্টিভ), কিন্তু যদি মাছিতাড়নি (ফ্লাইসোয়াটার) কাজে লাগান তবে সেটা হবে সবচেয়ে দক্ষ (এফিসিয়েন্ট)’। ‘কার্যকারিতা’ এবং ‘দক্ষতা’র তফাৎ নির্ণয়ে এরচেয়ে সহি মিসাল আমি এর আগে আর কারো কাছে শুনিনি। এই উদাহরণটি আমার কাছে এতই জুতসই মনে হয়েছে, এরপর থেকে আমিও ক্লাসে বিষয়টি পড়াতে গেলে আমার ছেলেমেয়েদের এভাবেই বুঝাই।
এ আলোচনা এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারে, তবে আপনাদের আপত্তি না থাকলে আমি বিষয়টির আরেকটু গভীরে যেতে চাই। এ পর্যন্ত আমরা দেখলাম – দুই তরিকায় মাছি মারা যায় – একটি কার্যকর, আরেকটি দক্ষ। এদের মধ্যে আমাদের কাছে কোনটি বেশি বাঞ্ছনীয় ও উপযোগী – কার্যকারিতা, না দক্ষতা? অবশ্যই দক্ষতা। দেখুন, কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে মাছি মারতে আমরা যদি হাতুড়ি ব্যবহার করি, তাহলে মাছি মরুক কি না মরুক, আমরা মাটি, সিরামিক, কিংবা চিনামাটি ও কাচের বাসনকোসন, টেবিল, চেয়ার, কিচেন-কাউন্টার, কাচের দরজা-জানালা, রান্নাঘরের দেয়াল, ছাদ, মোজাইক করা মেঝে, ইত্যাদি সব ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলব। কারণ মাছি তো এ সব জায়গায়ই বসতে পছন্দ করে। আর ও-গুলোকে যদি বাঁচাতে চাই, তাহলে মাছি মৌমাছি হয়ে উড়ে বেড়াবে, তার উপদ্রব থেকে কস্মিনকালেও মুক্তি মিলবে না। অন্য দিকে যদি দক্ষ হাতিয়ার – মাছিতাড়নি ব্যবহার করি, তাহলে মাছিও মরবে, জিনিসপত্রগুলোও অক্ষত থাকবে, অর্থাৎ ‘সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙ্গবে না’।
আপনারা অনেকে হয়তো জানেন, যাঁরা জানেন না – তাঁরা শুনে অবাক হবেন, উচ্চতর অর্থশাস্ত্রের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে মাছি ইতিমধ্যে একটি যথোপযুক্ত সম্মানের জায়গা দখল করে বসে আছে। কেউ যদি ‘পাবলিক ফাইন্যান্স’ গ্র্যাজুয়েট কোর্স নিয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জানেন, ‘ফ্লাইপেপার ইফেক্ট’ কাকে বলে। আমাদের আজকের আলোচনায় সেটা অপ্রাসঙ্গিক বলে এ বিষয়ে আর কথা বাড়াচ্ছি না।
এ বার ফিরে আসি আজকের প্রাসঙ্গিক মাছির কথায়। শুরুতে আমি যে মাছির কেচ্ছা-কাহিনির চাদর বিছিয়েছিলাম, ইচ্ছে করেই সে চাদর ভাঁজ করে তুলে রাখিনি। আজ বৃহস্পতিবার, কিন্তু খাবার টেবিলে ওই মাছিটিকে আমি প্রথম বসা দেখেছি গত সোমবার। তারপর ব্যস্ততার কারণে মঙ্গল এবং বুধবার আমার নাস্তা খাওয়াই হয়নি, ফলে কিচেন টেবিলে বসারও দরকার পড়েনি। সেই দু’দিনই তাড়াহুড়ার মাঝে সকালে একটি করে কলা হাতে নিয়েই বেরিয়ে পড়েছি। সামারের ছুটি চলছে, ক্লাস এখনো আরম্ভ হয়নি। আজ অফিসে যাব না, ঠিক করেছি বাড়িতে বসেই জমে থাকা পুরনো কাজগুলো সব সেরে ফেলব। তাই একটু আরাম করে নাস্তা খেতে টেবিলে গিয়ে বসা। বসতেই চোখ পড়ল সেই মাছির দিকে। আশ্চর্য হলাম, তিন দিন ধরে একটি মাছি এক জায়গায় ঠায় বসে আছে! মাছিটি কি আসলেই বসা…?