গণতন্ত্র মঞ্চে ভাঙনের সুর

::
প্রকাশ: ২ years ago

পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক: 
আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গণতন্ত্র মঞ্চ নামে একটি রাজনৈতিক জোট আত্মপ্রকাশ করে চলতি বছরের আগস্টে। সাতটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত এ জোটের নেতৃত্বে রয়েছেন জেএসডি, সভাপতি আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, জোনায়েদ সাকি, ড. রেজা কিবরিয়াসহ অনেকে। জোট গঠনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন জোট নেতারা। এরই মধ্যে বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনেও একমত হয়েছে জোটটি।

কিন্তু জোটের শরিক দল নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ নিয়ে অন্যদের মধ্যে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। জোট নেতারা বলছেন, রেজা কিবরিয়া ও নুরের মধ্যেকার দ্বন্দ্বের প্রভাব গণতন্ত্র মঞ্চেও পড়ছে। সর্বশেষ জোটের কয়েকটি প্রোগ্রামে অংশ নেননি নুররা। শুধু তাই নয়, জোটের অন্য শরিকদের সঙ্গে নুরদের দ্বন্দ্ব দিনদিন আরও স্পষ্ট হচ্ছে। যা গণঅধিকার পরিষদ ও গণতন্ত্র মঞ্চের মধ্যকার দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ রকম মতবিরোধ নিয়ে আগামীতে পথচলা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতে চাচ্ছে না কোনো পক্ষই।

গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকরা বলছেন, এ জোট গঠন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই যুক্ত হতে আগ্রহী ছিল মোস্তাফা মহসিন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। কিন্তু সে সময় রেজা কিবরিয়া ও নুরের আপত্তির কারণে তাদের মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত করা যায়নি। এছাড়া ওই সময় মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হতে আরও কয়েকটি দল আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। তাদের ব্যাপারেও নূরদের আপত্তি ছিল। শুধুমাত্র নুরের দলের ‘ইয়াং ফোর্সে’র বা যুব শক্তির বিষয়টি বিবেচনা নিয়ে তাদের আপত্তিটা মেনে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন নুর ও রেজা কিবরিয়ার মধ্যকার দ্বন্দ্বের জেরে তাদের দলের মধ্যেই হ-য-ব-র-ল অবস্থা। এ কারণে মঞ্চের সর্বশেষ কয়েকটি প্রোগ্রামে রেজা কিবরিয়া কিংবা নুর কেউ অংশ নেননি। এর বাইরে নুরের দলের যারা প্রোগ্রামে অংশ নেন তাদের মধ্যে সামনে ‘ফোকাস’ হওয়ার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। সব মিলিয়ে নুরদের নিয়ে মঞ্চের অন্য শরিকদের এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।

গণতন্ত্র মঞ্চের একটি সূত্রের দাবি, নুরের দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের আবেদন করার পর থেকে তাদের মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। এই পরিবর্তনের মূল কারণটা কী এখনও পরিষ্কার নয়। আসলে তারা নিবন্ধন পাওয়ার আশায় সরকারবিরোধী অবস্থান থেকে কিছুটা বিরতি নিতে চাচ্ছে কী-না, সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। নাকি তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে? সেটা সময় আসলেই স্পষ্ট হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণ-অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক নুর বলেন, এটা ঠিক যে গণতন্ত্র মঞ্চের গত কয়েকটি পোগ্রামে আমি যুক্ত হতে পারিনি। আসলে আমরা এখন গণতন্ত্র মঞ্চের চেয়ে নিজের সংগঠনকে বেশি ফোকাস করার চেষ্টা করছি। সংগঠনকে শক্তিশালী করার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। নির্বাচন কমিশনে আমরা নিবন্ধনের আবেদনের সময় আমাদের সারা দেশে ৪০টি জেলা কমিটি ছিল। এরপর আরও ৫টি জেলায় আমাদের নতুন করে কমিটি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের যারা শরিক আছেন, আমাদের প্রত্যেকের মাঠের ম্যান পাওয়ার কম। তাই এখন আমরা সংগঠনের দিকে বেশি নজর দিচ্ছি। কারণ সামনে একটা গণআন্দোলন বা গণঅভ্যুত্থান হবে। সেখানে মাঠের শক্তি না থাকলে লাভ হবে না। তাই আমরা এখন থেকে সংগঠনকে গুছিয়ে আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি।

নুর বলেন, আমরা খুব আন্তরিকতা নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ গঠন করেছি। ফলে সেটাকেও যে অবহেলা করছি, বিষয়টি এমন নয়। আমি না গেলেও গণতন্ত্র মঞ্চের প্রোগ্রামে আমাদের পরের স্তরের নেতা-কর্মীরা যাচ্ছেন।

অনেক সময় নুরের দলের নেতাদের আচরণ এমনও হয় যে, গণতন্ত্র মঞ্চের অন্য শরিকরা তাদের চাইতে অনেক ছোট। সব জায়গায় তাদের সামনে ফোকাস হওয়ার একটা প্রবণতা দেখা দেয়। আবার এখন তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার পর থেকে তাদের আচরণও সন্দেহজনক লাগে। তারপরও এখনি তাদের নিয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে যাব না। এছাড়া ইদানীং নুরকে বিভিন্ন অ্যাম্বাসিতে যাতায়াত করতেও দেখা যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জোট নেতা বলেন।

দলের সভাপতি রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে দূরত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে নুর বলেন, আসলে রেজা ভাই ওই রকম রাজনীতিবিদ নন। তিনি দৃশ্যমান রাজনৈতিক প্রোগ্রামেও তেমন অংশ নেন না। তারপরও আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। দেখা যাক কী হয়।

গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নুরুল হকের দল নিয়ে আমাদের মধ্যে তেমন কোনো অস্বস্তি নেই। তবে মঞ্চের গত কয়েকটি প্রোগ্রামে তারা অংশ নেয়নি, এটা নিয়ে একটু ‘ইয়ে-তো’ আছেই। তাদের দলের মধ্যকার সমস্যা সেটা তারা সমাধান করবে। সেখানে তো আমাদের কিছু করার নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক একটি দলের শীর্ষ নেতা বলেন, আসলে নুরদের দলের বয়স বেশি নয়। বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের নেতারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন। ফলে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা বেশিদিন এক থাকতে পারে না। আবার সেখানে সবাই নেতা। এ কারণে কারও একক নেতৃত্ব মেনে নিতে তাদের মধ্যে প্রায়ই সময় সমস্যা দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, অনেক সময় নুরের দলের নেতাদের আচরণ এমনও হয় যে, গণতন্ত্র মঞ্চের অন্য শরিকরা তাদের চাইতে অনেক ছোট। সব জায়গায় তাদের সামনে ফোকাস হওয়ার একটা প্রবণতা দেখা দেয়। আবার এখন তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার পর থেকে তাদের আচরণও সন্দেহজনক লাগে। তারপরও এখনি তাদের নিয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে যাব না। এছাড়া ইদানীং নুরকে বিভিন্ন অ্যাম্বাসিতে যাতায়াত করতেও দেখা যাচ্ছে।

এ নেতা আরও বলেন, সর্বশেষ গত ১৫ নভেম্বর বিএনপির সঙ্গে মঞ্চের বৈঠকে নুর অংশ নেননি। তাদের দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ওমরা করেত যাবেন নুর। এ জন্য তাকে ওই সময় একটি অ্যাম্বাসি যেতে হবে। এরপর নারায়ণগঞ্জে মঞ্চের সমাবেশেও অংশ নেননি নূর।

গণ-অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক নুর বলেন, এটা ঠিক যে গণতন্ত্র মঞ্চের গত কয়েকটি পোগ্রামে আমি যুক্ত হতে পারিনি। আসলে আমরা এখন গণতন্ত্র মঞ্চের চেয়ে নিজের সংগঠনকে বেশি ফোকাস করার চেষ্টা করছি। সংগঠনকে শক্তিশালী করার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। নির্বাচন কমিশনে আমরা নিবন্ধনের আবেদনের সময় আমাদের সারা দেশে ৪০টি জেলা কমিটি ছিল। এরপর আরও ৫টি জেলায় আমাদের নতুন করে কমিটি হয়েছে।