ক্যান্সারে আক্রান্ত বাবা, পরিবারের হাল ধরেছে ১০ বছরের মেয়ে

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ৮ মাস আগে

দশ বছরের মেয়ে শিশু জেমি আক্তার। যে বয়সে ইউনিফর্ম পরে বই হাতে স্কুলের যাওয়ার কথা, সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুলমাঠে ছুটোছুটি করার কথা, সেই বয়সে নেমেছে রোজগার করতে।

চালাতে হচ্ছে সংসার। টানা ১৩ ঘণ্টা বাবার একমাত্র সম্বল দোকানটি পরিচালনা করে সংসারের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে ছোট্ট জেমি।

পঞ্চগড় পৌরসভার উত্তর জালাসী এলাকার দম্পতি জাহিরুল ইসলাম ও গোলাপী আক্তারের মেয়ে জেমি আক্তার। দুই বোনের মধ্যে সে বড় সে। তার ছোট বোনের বয়স মাত্র চার।

জানা গেছে, মোলানি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণির ছাত্রী জেমি। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে বাবা ক্যান্সারে অসুস্থ থাকায় দোকানটা তাকেই দেখতে হয়। যে কারণে স্কুলে যেতে পারছে না সে। পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদের সামনে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেডিয়ামের পাশে উপজেলা পারিষদের মার্কেটে ‘জেমি ও জুঁই স্টোর’ নামে দোকানে দিনরাত বেচাবিক্রিতে শৈশব কেটে যাচ্ছে জেমির।

স্থানীয়রা জানান, পরিবারটি একটা সময় হাসি-খুশি থাকলেও হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন জহিরুল। এর পর ডাক্তারের পরামর্শে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করলে ক্যান্সারের বিষয়টি অবগত হন তিনি। বাড়িতে থাকা গরু-ছাগল বিক্রি করে চিকিৎসা শুরু করেন তিনি। এর মাঝে ভারতে চিকিৎসা শুরু করলেও টাকার সংকট দেখা দেয়। খাবারসহ টাকার সমস্যার কারণে গত দেড় বছর ধরে বাবার একমাত্র দোকানটি পরিচালনা করছে শিশু জেমি। মাঝে মধ্যে মাকে দোকানে রেখে স্কুলে গেলেও দায়িত্বের কারণে অনেক সময় যাওয়া সম্ভব হয় না তার। আর এই দোকান দিয়ে যা আয় হচ্ছে তা দিয়েই কোনোমতে বাবার চিকিৎসাসহ পরিবার চালিয়ে যাচ্ছে জেমি।

জেমির মা গোলাপী আক্তার বলেন, স্বামীর চিকিৎসার পেছনে সব শেষ হয়ে গেছে আমাদের। এখন এই মেয়েটি ও দোকানটি আমাদের একমাত্র ভরসা। তবে এর মাঝে আমরা খুব মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। সহায়তার খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে আমাদের।

স্থানীয় সমাজকর্মী শাহজালাল বলেন, বাচ্চা মেয়েটিকে দেখে খুব কষ্ট লাগছে, আমার ছেলের বয়সী। সে যে বয়সে দোকান পরিচালনা করে পরিবারটি চালাচ্ছে, সে বয়সে স্কুল ও খেলার মাঠে থাকার কথা তার। সে জানে না ভবিষ্যতে আরও অনেক কষ্ট করতে হবে তাকে। তবে আমি মনে করি এই পরিবারটি পাশে বিত্তবান ও সরকার এগিয়ে এলে তারা কিছুটা ভালো থাকতে পারবে। তাই তাদের পাশে দাঁড়ানো অতি জরুরি হয়ে পড়েছে।