কোটা আন্দোলন বন্ধ করতে কঠোর হচ্ছে সরকার

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ৪ মাস আগে

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন বন্ধ করতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। আপিল বিভাগের রায়ের পরও এই আন্দোলন অব্যাহত থাকায় এর উদ্দেশ্য নিয়ে সরকারের মধ্যে সন্দেহের দেখা দিয়েছে।

সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর বুধবার (১০ জুলাই) স্থিতাবস্থার (স্ট্যাটাসকো) আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

এর ফলে আপাতত কোটা বাতিল করে দেওয়া পরিপত্র বহাল থাকবে অর্থাৎ নিয়োগ পদ্ধতিতে আপাতত কোটা পদ্ধতি প্রয়োগ হবে না। আগামী ৭ আগস্ট এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে। আদালতের এ রায়ের পরও শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে তৈরি হওয়া জনভোগান্তিও তীব্র হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলন যাতে আর অগ্রসর না হয় – সেই পদক্ষেপের দিকে যাচ্ছে সরকার।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। বুধবার আপিল বিভাগের রায়ে আপাতত কোটা প্রয়োগ না করার কথা বলা হলেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ কোনো কোনো স্থানে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষের মতো ঘটনা ঘটেছে। আদালতের রায়ের পরও এ পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক মনে করছে না সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন সরকারবিরোধী ও রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে সরকার ও আ.লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। শিক্ষার্থীদের এই অরাজনৈতিক আন্দোলনকে বিএনপির সমর্থন এবং আদালতের রায়ের পরও কর্মসূচি অব্যাহত রেখে জনদুর্ভোগ তৈরির চেষ্টা; এসব কিছুর মধ্যে একটা উদ্দেশ্য থাকতে পারে এমন ধারণাও করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা না হলে একটা অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করা হতে পারে বলে তারা মনে করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে আরও জানা যায়, ইতোমধ্যেই সড়ক অবরোধ ঠেকাতে এবং যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলারক্ষা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় সেজন্য আইন-শৃঙ্খলারক্ষা বাহিনীকে কঠোর হতে বলা হয়েছে। সরকার প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও সতর্ক থাকারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, শিক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি করে কোনো মহল যদি দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়; তাহলে সরকারকে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো কোনো অশুভ মহল দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ব্যাহত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই আন্দোলনকে বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দিতে চায়। অরাজনৈতিক এই আন্দোলনকে কেউ যদি রাজনৈতিক ফাঁদে ফেলতে চায় তাহলে আমরা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করব।

এদিন সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, (আন্দোলনকারীরা) যখন অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংস করতে যাবে, যখন জানমালের অনিশ্চয়তা তৈরি হবে তখন পুলিশ বসে থাকবে না। তাদের (শিক্ষার্থীদের) চাহিদা আমরা শুনব। কিন্তু শোনারও একটা সীমা বোধহয় থাকে। তারা বোধহয় তা অতিক্রম করে যাচ্ছেন।

একইদিন এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমরা তাদের আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়েছি। তবে আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থী সমাজকে জিম্মি করে জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করলে ছাত্রলীগ তা রুখে দেবে।