কোটা আন্দোলন ঘিরে সিলেট রণক্ষেত্র, নিহত এক, আহত ২০

::
প্রকাশ: ৩ মাস আগে

কোটা আন্দোলনকে ঘিরে ছাত্রদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সিলেট নগরী রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। একজন নিহতসহ আহত হয়েছেন কমপেক্ষে ২০ জন।

শুক্রবার (২ আগস্ট) বিকেল ৪টার থেকে সন্ধ্যা অবধি চলে এই সংঘর্ষ।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র সমাজ সিলেট শহরের আখালিয়ায় বিকেলে রাজপথে প্রতিবাদি ভাষায় শ্লোগান দিয়ে গণমিছিল বের করে। এসময় পুলিশ তাদের বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলে ছাত্রজনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পুলিশ টিয়ারসেল, গুলি, সাউন্ড গ্রেনেট ছুঁড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৮ জনকে আটক করে। ঘটনাস্থলে শিশু, ছাত্র, সাংবাদিকসহ আাহত হয় কমপক্ষে ২০ জন।

স্থানীয় জনতা ও পুলিশ জানান, পুলিশ ছাত্রদের উত্তেজনামূলক বিক্ষোভ মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়।

আন্দোলনকারী ছাত্ররা জানান, শুক্রবার মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া, কবর জিয়ারত, মন্দির, গির্জাসহ সব প্রার্থনালয়ে প্রার্থনা করা হয় শহিদদের স্বরণে। কর্মসূচিতে ‘ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ শীর্ষক কর্মসূচি ছিল। এরই অংশ হিসেবে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা শাবিপ্রবির প্রধান ফটকে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করেন। সেখানে পুলিশের বাধার মুখে পড়ায় আন্দোলনকারীরা জমায়েত হতে পারিনি। এক পর্যায়ে আখালিয়া এলাকার মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চাইলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়তে থাকেন।

প্রায় চার ঘন্টার ব্যাপী চলে ছাত্র-পুলিশের রণক্ষেত্রের সংঘর্ষ। সংঘর্ষে একজন শিশু, একজন সাংবাদিক, পাঁচজন পুলিশ, ছাত্র ও পথচারীসহ ২০জন আহত হয়। আহত শিশুকে উদ্ধার করে স্থানীয় বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ জানান, ছাত্র ও পুলিশের সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে আটজন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ তৈরি করলে পুলিশ তাদের যেতে বলে। তবে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে।

এ ঘটনায় আটজনকে পুলিশ আটক করেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

এদিকে হবিগঞ্জ শহেরর বোর্ড মসজিদ এলাকার শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। এ সময় এর পাশে পূর্ব টাউন হল এলাকায় ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরাও অবস্থান করেন। এক পর্যায় ছাত্রসমাজের মিছিলে ছাত্রদলসহ অন্যান্য দলের নেতা কর্মীরা সংহতি প্রকাশ করে মিছিলে যোগ দিলে সেখানে সংঘর্ষ বেধেঁ যায়। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু জাহিরের বাসায় ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পুলিশ ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া করতে থাকে। সংঘর্ষের সময় মোস্তাক মিয়া (২৪) নামে একজন শ্রমিক নিহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান, মোস্তাক জুতা কিনতে এসে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যায়। এ সময় তার শরীরে গুলি লেগে যায়। হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক বলেন, মোস্তাকের হাতে বড় ধরনের আঘাত ছিল। সেটা গুলি কি না, পরে জানানো যাবে। তবে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ বিষয়ে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান বলেন, সংঘর্ষে একজন মারা গেছে এই খবর এখনো জানতে পারিনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

সিলেট/অমিতা সিনহা/ ২ আগস্ট ২০২৪ ইং