কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েদের অসময়ের বিয়ের অন্যতম কারণ ‘অভাব’

:: অমিতা সিনহা ::
প্রকাশ: ৪ সপ্তাহ আগে

একটি শিশু জন্ম মানে আনন্দের বার্তা। খুশীর বার্তা। কিন্তু যুগের পর যুগ অভাবে বেঁধে দেওয়া পরিবারগুলোতে একটি শিশুর জন্ম মানেই কিছুটা দুশ্চিন্তা। কন্যা সন্তানদের বেশিদিন লালন পালনের সামর্থ্য নেই তাদের। যে কারণে উপযুক্ত বয়সের আগেই অভাবের তাড়নায় অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়।

এমনি সব ঘটনা ঘটে চা জনগোষ্ঠিদের মাঝে।

সিলেট বিভাগে চা- বাগান আছে ১৩৪টি। প্রায় প্রত্যেকটি চা বাগানে নিন্মে ৩ থেকে ৫ হাজারের ঊর্দ্ধে কৃষ্ণাঙ্গ পরিবার রয়েছে। প্রত্যেক পরিবারে সদস্য সংখ্যা নিন্মে ৪ জন থেকে ঊর্দ্ধে ১২ জনের। যার অর্ধেকের ঊর্দ্ধে রয়েছে নারী।

সিলেটের চা বাগানের কৃষ্ণাঙ্গদের সাথে কথা হলে প্রতিবেদককে জানান, পরিবারে সন্তান আসা মানেই তো খুশীর সংবাদ। পরিবার আরও আনন্দে ভরে উঠে। ছেলে বা মেয়ে হউক সন্তান তো সন্তানই হয়। কিন্তু মেয়ে সন্তানদের লালনপালন আমরা ঠিকভাবে করতে পারি না। তাদের মৌলিক চাহিদা মাফিক প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক দিতে অক্ষম। তাই কিশোরী থাকা অবস্থায় অধিকাংশ মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়। যদিও বর্তমানে অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। তবুও অনেকেই প্রেমের সম্পর্ক করে বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে করছে। নেওয়া হয় না কোনো আইনী পদক্ষেপ।

কেননা অতি অভাব ওদের আইনী প্রক্রিয়ার জন্য বড় বাধাঁ হয়ে দাড়াঁয় বলে জানান, মৌলভীবাজার জেলার শমশেরনগর চা বাগানের বাসিন্দা গৃহিনী শান্তা রাজ বর্মণ।

তিনি বলেন, আমি ১৮/১৯ বয়সে বিয়ে করেছি। ছোট ছোট দুই সন্তান আছে। যদিও আমি বাগানে কাজ করি না, তবে আমার শাশুরি চা বাগানে সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাজ করে দিন শেষে ১৭০ টাকা মজুরি পান। তার মধ্যে বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য বিষয়ের জন্য টাকা কেটে নেওয়া হয়। এদিকে আমাদের ৮ সদস্যের পরিবার। এটা দিয়ে কি সংসার চলা যায়? খুব কষ্ট করে খাবার দাবার যোগান দিতে হয়। তাই অল্প বয়সে যারা বিয়ে করে কিংবা প্রেম করে বিয়ে করে, তাদের তেমন একটা তদারকি করা হয় না। এছাড়া আইনী কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না। কেননা আমাদের সমাজে বিয়ে একবার হয়। সেখানে কোনো জটিলতা থেকে গেলে সুরাহা করার মতো সামর্থ্য কারো নেই শুধু মাত্র আর্থিক অবস্থানের জন্য। তাই অল্প বয়সে কেউ বিয়ে করলেও কোনো আইনী পদক্ষপ নেওয়া হয় না।

একই বিষয়ে চুনারুঘাটের চাঁনপুর চা বাগানের বাসিন্দা সন্ধ্যা ভৌমিক (৪৬) প্রতিবেদককে বলেন, হাঁড় ভাঙা কাজ করেও ন্যায্য মজুরি পাই না। তাই অভাব আমাদের পিছু ছাড়েনা। বাধ্য হয়ে কন্যা সন্তানদের স্বামী সংসারে সুখের জন্য বিয়ে দিয়ে দেই। সময়ের পরিক্রমায় এখন অল্প বয়সে বিয়ে অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। তবে এখনো চলমান আছে।

একই জেলার কমলগঞ্জে উপজেলার কোরমা চা বাগানের সমাজকর্মী গীতা রাণী প্রতিবেদককে বলেন, সব মানুষের ভাগ্য বদলায়। কিন্তু আমাদের আর বদলায় না। সেকালের সেই শাসন শোষনের মধ্যেই আছি আমরা। বাগানের নারীরা অভাব অনটনের মধ্যে সব সময় নিরাপত্তাহীনতায় থাকে। তাই অভিভাবকেরাও চিন্তিত থাকে সর্বদাই। তাই পরিবারে কন্যা সন্তান জন্ম দিলে একটু দুশ্চিতার মধ্যে পরেন।