অর্থ-সম্পদসহ সবকিছুই করেছি আমার স্ত্রীর নামে, কুয়েতে “রেসিডেন্সি” আকামা জটিলতার কারণে টানা এক যুগ দেশে যেতে পারিনি, কষ্টার্জিত সব টাকা স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছি। এখন আমি নিঃস্ব,আমার সব টাকা-পয়সা নিয়ে যুক্তরাজ্যে পালিয়েছে আমার স্ত্রী। স্ত্রী কর্তৃক প্রতারণার স্বীকার ৫০ বছর বয়সী কুয়েত প্রবাসী মো. আব্দুল কাইয়ূম তালুকদার এসব কথা বলেন।
প্রায় ৩১ বছর আগে মৌলভীবাজার জেলা সদরের ৫নং আখাইলকুড়া ইউনিয়নের বেকামুড়া গ্রামের মরহুম মাওলানা আব্দুল মুহিবের ছেলে মোঃ আব্দুল কাইয়ূম তালুকদার কুয়েতে আসেন। প্রবাস জীবনের প্রথম দিকে আলতালিয়া নামে একটি কোম্পানিতে কাজ করেন তিনি। পরে নিজের শ্রম আর দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সোফা ব্যবসা শুরু করেন।
এরপর প্রবাসী কাইয়ুম ব্যবসায়িক সফলতা পান,অনেক টাকা উপার্জন করেন। পাকা ঘর নির্মাণ সহ বেশ কিছু জায়গা জমিও কেনেন কাইয়ুম।
২০০৪ সালের শেষের দিকে কাইয়ুম বাংলাদেশে ছুটিতে যান। ১৬ জানুয়ারি ২০০৫ সালে পারিবারিক ভাবে বিয়ে করেন হবিগঞ্জ জেলা, নবিগঞ্জ উপজেলার ১০ নং দেবপাড়া ইউনিয়নের জালালসাব গ্রামের মোহাম্মদ সাদিক মিয়ার মেয়ে শিউলী আক্তারকে।
কুয়েত প্রবাসী মোঃ আব্দুল কাইয়ূম তালুকদার এর ভাষ্যমতে, বিয়ের পর স্ত্রী শিউলীকে নিয়ে দাম্পত্যজীবন বেশ সুখের ছিল।কখনো স্ত্রী তার সাথে প্রতারণা করবে সেটি কল্পনাও করতে পারেননি কাইয়ুম।
বিয়ের প্রায় ৩ মাস পর কাইয়ুম চলে আসেন কর্মস্থল কুয়েতে। প্রায় বছর খানেক পর স্ত্রী শিউলী কাইয়ুমকে জানান শশুর বাড়ি একাকী জীবনযাপন তার পক্ষে সম্ভব না,তিনি তার পিতার বাড়িতে ততদিন থাকবেন; যতদিন না কাইয়ুম দেশে যাবেন। কাইয়ুম স্ত্রীকে বুঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে একপর্যায়ে স্ত্রীকে অনুমতি দেন তার পিতার বাড়িতে যেতে।
পুত্র সন্তানের জনক হন কাইয়ুম,সেসময়ও স্ত্রীকে অনুরোধ করেন তার বাড়িতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু স্ত্রী শিউলী স্বামীর সংসারে দেখাশুনার কেউ নেই বলে কারণ দেখান এবং যেতে অনীহা প্রকাশ করেন।
এভাবেই বছরের পর বছর কুয়েত প্রবাসী কাইয়ুমের স্ত্রী শিউলী পিতার বাড়িতে ছিলেন।
কাউয়ুম কুয়েত থেকে প্রতি মাসে ৫০/৬০ হাজার টাকা খরচ বাবদ স্ত্রীকে দিয়ে আসছিলেন, কখনো নানান কারণ দেখিয়ে আরো টাকা চেয়ে নিতেন স্ত্রী শিউলী।
১৯ বছরের বিবাহিত জীবনে কাইয়ুম একবারই বাংলাদেশে গিয়েছিলেন।কুয়েতে ‘রেসিডেন্সি’ আকামা জটিলতার কারণে দীর্ঘ সময় কাইয়ুম দেশে যেতে পারেননি।
প্রায় ১ যুগ পর ২৬মে ২০২৪ ইং তারিখে যখন কাইয়ুম বাংলাদেশে গিয়েছিলেন; তখনও তার স্ত্রী পিতার বাড়িতে ছিলেন।
পরে ২৭ মে কাইয়ুম স্ত্রীকে নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য শশুর বাড়ি যান,কিন্তু স্ত্রী শিউলী কিছুতেই শশুর বাড়িতে আসবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
অনেক অনুরোধ করেও যখন স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে ব্যর্থ কাইয়ুম, তখন স্থানীয় মুরব্বী- জনপ্রতিনিধিদের শরণাপন্ন হন। কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ হন কাইয়ুম।
এর কয়েকদিন পর স্ত্রী শিউলী ২জুন ২০২৪ইং তারিখে নোটারি রেজিস্ট্রকৃত ১৩৪৭ নং ১টি তালাকের হলফনামা প্রেরণ করেন।
এমতাবস্থায় প্রবাসী কাইয়ুম এর মনে হয় যেনো জীবনের সব অর্জন এখানেই শেষ হয়ে গেছে, জীবনের মূল্যবান সময় যাদের সুখের জন্য প্রবাসে কাটিয়েছেন কাইয়ুম, আজ সেই কাইয়ুম এর অনুভবে এসবই ছিল ভুল।
কিছুদিন পর কাইয়ুম তার স্ত্রীকে বিদেশ থেকে প্রেরিত প্রায় দেড় কোটি টাকা সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু স্ত্রী শিউলী উক্ত টাকা ফেরত দেবেন না বলে জানান এবং ভবিষ্যতে উক্ত টাকার জন্য স্ত্রীর বাড়িতে গেলে প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়।
এদিকে হঠাৎ একদিন স্থানীয় মানুষদের মাধ্যমে কাইয়ুম জানতে পারেন যে, তার স্ত্রী পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন। পরে সংবাদটির সত্যতাও পাওয়া গেছে।
পরবর্তীতে কুয়েত প্রবাসী কাইয়ুম মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪০৬/৪২০/৩৪ দঃ বিঃ একটি মামলা করেন।
ওই মামলাতে কাইয়ুম উল্লেখ করেন, ৩০,০৭,৭০০/- (ত্রিশ লক্ষ সাত হাজার সাতশত) টাকাসহ আরো প্রায় ১ কোটি টাকা এবং ২৭ বড়ি স্বর্ণালংকার যার মুল্য প্রায় ২৯,৭০,০০০/- টাকা প্রতারণামূলক ভাবে আত্মসাৎ করেন তার স্ত্রী শিউলী আক্তার।
কুয়েত প্রবাসী মোঃ আব্দুল কাইয়ূম তালুকদার প্রবাসের কষ্টার্জিত সব টাকা স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছিলেন, স্ত্রী শিউলী আক্তার স্বামীর অর্থ আত্মসাৎ করে পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রবাসী জীবনে সুখে থাকলেও,কুয়েত প্রবাসী মোঃ আব্দুল কাইয়ূম তালুকদার হয়েছেন সর্বস্বহারা।প্রবাসে জীবনের সবটুকু সময় কাটিয়ে উপার্জিত সব অর্থ হারিয়ে দিশেহারা কাইয়ুম এখন চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর দুশ্চিন্তায় সময় কাটাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে কুয়েত প্রবাসী মোঃ আব্দুল কাইয়ূম প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এর কাছে বিনীত আবেদন জানিয়েছেন, যেন তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার সুবিচারের জন্য তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।