কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন মামুনুল হক

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ৭ মাস আগে

গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক।

শুক্রবার (৩ মে) সকাল ১১টায় তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা।

সুব্রত কুমার বালা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে জামিনের কাগজ কারাগারে পৌঁছে। অনেকগুলো মামলা থাকায় তা যাচাই বাছাই করা হয়েছে। যাচাই শেষ শেষ করতে সময় লেগে যায় এবং গোয়েন্দাদের প্রতিবেদন না পাওয়ায় তাকে রাতে মুক্তি দেওয়া হয়নি। শুক্রবার সকাল ১১ টায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, তার মুক্তির খবরে শত শত ভক্তরা ভিড় করেন কারা ফটকের সামনে।

গত ৪ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় করা ধর্ষণ মামলায় জামিন পান মামুনুল হক। নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালত এ জামিন মঞ্জুর করেন।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। খবর পেয়ে হেফাজতের স্থানীয় নেতাকর্মীরা রিসোর্টে গিয়ে ভাঙচুর চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। ঘটনার পর থেকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় অবস্থান করেন মামুনুল হক।

১৫ দিন পর ১৮ এপ্রিল ওই মাদ্রাসা থেকে মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় তার বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের মামলা করেন তার সঙ্গে রিসোর্টে অবরুদ্ধ হওয়া নারী। যদিও ওই নারীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে আসছেন মামুনুল হক। এরপর ওই মাসেই দেশের বিভিন্ন স্থানে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহসহ অর্ধশতাধিক মামলা হয়। পরে সেসব মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।গ্রেপ্তারের পর থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।

মওলানা মামুনুল হক এখন সারাদেশে আলোচিত নাম
একসময়ের আলোচিত ধর্মীয় নেতা ও সহিহ বুখারির প্রথম বাংলা অনুবাদক শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের ছেলে মামুনুল হক। ১৩ ভাই-বোনের মধ্যে চতুর্থ তিনি। ১৯৭৩ সালের নভেম্বরে ঢাকার আজিমপুরে জন্মগ্রহণ করেন মামুনুল হক। ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা শেষে শিক্ষকতা শুরু করেন। সর্বশেষ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব ছিলেন তিনি। নানান সময় সাহসী বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে হয়ে ওঠেন আলোচিত।

তিন ডজনের বেশি মামলা থাকা হেফাজতের সাবেক এই নেতা শুক্রবার সকালে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় কারাগারে থাকা মওলানা মামুনুল হক এখন সারাদেশে আলোচিত নাম। ২০২১ সালের এপ্রিলে পুরাতন একটি মামলায় (২০১৩ সালের মামলা) তাকে মোহাম্মদপুরের মাদরাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তার বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা হয়। বিশেষ করে সেসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর বন্ধ করতে চারটি জেলায় তাণ্ডবসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামুনুলের বিরুদ্ধে মামলাগুলো হয়। এর আগেও তার বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা ছিল বলে জানায় হেফাজতে ইসলাম।

জানা গেছে, ঢাকার আজিমপুরে জন্মগ্রহণ করা মামুনুল হক তার বাবা আজিজুল হকের কাছে লেখাপড়া শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে মামুনুল হক লালবাগ চানতারা জামে মসজিদ মাদ্রাসায় কোরআনের হেফজ (মুখস্থ) শেষ করেন। ১৯৮৬ সালে ভর্তি হন ঢাকার জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ায়। ১৯৯৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর স্নাতক এবং দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। পাশাপাশি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স করেন।

এরপর পাঁচ বছর সিরাজগঞ্জ জামিয়া নিজামিয়া বেথুয়া মাদ্রাসা এবং দুই বছর মিরপুর জামিউল উলুমে শিক্ষকতা করেন। ২০০০ সাল থেকে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ায় ‘শায়খুল হাদিস’ হিসেবে দায়িত্বরত।

২০১৫ সালে তিনি মাহাদুত তারবিয়্যাতুল ইসলামিয়া নামে একটি উচ্চতর ইসলামি শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের খণ্ডকালীন অধ্যাপক এবং বায়তুল মামুর জামে মসজিদের খতিব ছিলেন।

হেফাজতের দায়িত্বে
মামুনুল হক ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও ১৫ নভেম্বর হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব নির্বাচিত হন। একই বছরের ২৬ ডিসেম্বর হেফাজতের এক সভায় তাকে ঢাকা মহানগরীর মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠিত হেফাজতের আন্দোলনে নেতৃত্বের জন্য ১২ মে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এসময় তিনি ‘কারাগার থেকে বলছি’ নামক একটি বই রচনা করেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের দুদিন আগে তাকে পুনরায় গ্রেপ্তারের অভিযোগ ছিল।

বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামুনুল হক আলোচনায় আসেন মূলত হেফাজতে ইসলামকে কেন্দ্র করেই। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনার পর তিনি গ্রেপ্তার হন। বেশ কয়েক মাস কারাভোগ করে বের হওয়ার পর তিনি সারাদেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। এরপর থেকেই মূলত দেশব্যাপী বিভিন্ন মাহফিলে তার চাহিদা বেড়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে তার মাঠ গরম করা কিছু বক্তৃতায় তিনি সরকারবিরোধী বলয়ের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা পান।

হেফাজত সূত্র জানায়, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর আগে মামুনুল হক বাবুনগরী বলয়ের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। হেফাজতের নতুন কমিটিতে তিনি কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবের পদ পান। এছাড়া তাকে ঢাকা মহানগরীর কমিটির মহাসচিবও করা হয়।

মামুনুল হক রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিং এলাকার একটি ভবনে প্রায় একযুগের বেশি সময় ধরে পাঁচ ভাই মিলে থাকছেন। ভবনটির মালিক তারা নিজেরাই।