কালশী ফ্লাইওভার: উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় যুক্ত হলো আরেকটি পালক

::
প্রকাশ: ২ years ago

প্রায় ২০ মিলিয়ন জনবসতির নগরী ঢাকার অন্যতম প্রধান সমস্যা হল পূর্ব ও পশ্চিমাংশের মধ্যকার দূর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা। সরু রাস্তা, দ্বিমুখী-ত্রিমুখী রাস্তা ও দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থার কারণে ঢাকাবাসী প্রায়ই তাদের গন্তব্যের তুলনায় বেশি সময় ব্যয় করেন যানবাহনে। ফলে যানজট লাঘব করতে একটি সাধারণ ইউ-লুপ বা ফ্লাইওভার প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছিলো দীর্ঘদিন থেকেই। এই পরিকল্পনাতেই মিরপুর, বনানী ও উত্তরার সাথে রাজধানীর পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ আরও সহজ ও দ্রুততর করতে গত সপ্তাহে কালশী ফ্লাইওভারটি খুলে দেওয়া হয়।

পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানী ঢাকাকে একটি স্মার্ট সিটিতে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলাচলের জন্য ছয় লেনের কালশী ফ্লাইওভার উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার রাজধানীতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। যদিও যানজট নিরসনে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিলেও এই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার পুরোপুরি সমাধান এখনো সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে ফ্লাইওভার কিংবা একমুখী রাস্তার প্রকল্পগুলো এলাকাকেন্দ্রিক যানজট কমাতে সমর্থ হবে এবং ঢাকাবাসীর যাতায়াত সহজ করতে সাহায্য করবে।

কালশী ফ্লাইওভার নির্মাণ
কালশী ফ্লাইওভার প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক দ্বারা ৯ জানুয়ারী ২০১৮ সালে অনুমোদিত হয়েছিল, যার অধীনে ইসিবি স্কয়ার থেকে কালশী পর্যন্ত ২.৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটি নির্মিত হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৩.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ছয় লেনের রাস্তা, ৭.৪০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন এবং সসার ড্রেন, ১.৭৮ কিলোমিটার আরসিসি পাইপ ড্রেন, একটি সাইকেল লেন, ছয়টি বাস স্টপেজ এবং যাত্রী আশ্রয়কেন্দ্র, একটি গার্ডার ব্রিজ, একটি পাবলিক টয়লেট এবং দুটি পুলিশ বক্স নির্মাণ করা হয়েছে। একই সাথে ফ্লাইওভারের পাশে উন্নত এস্কেলেটরসহ দুটি ওভারহেড ফুটব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।
কালশী ফ্লাইওভার এবং সংশ্লিষ্ট রাস্তা প্রশস্তকরণের মাধ্যমে মিরপুর, ডিওএইচএস, পল্লবী, কালশী, মহাখালী, মাটিকাটা, ভাষানটেক, বনানী, উত্তরা এবং বিমানবন্দর এলাকায় যোগাযোগ সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যের হবে। নবনির্মিত ছয় লেনের সড়কটি মিরপুর থেকে উত্তরার একটি নতুন বিভাজিত অংশ হয়ে বিমানবন্দর এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত যা মিরপুরবাসীকে মাত্র ১৫ মিনিটে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে সক্ষম করবে। প্রসঙ্গত, প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ জানুয়ারি ২০১৮ সালে শুরু হয়েছিল এবং সময়সীমার চার মাস আগেই শেষ হয়েছে।
প্রায় এক হাজার ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিএনসিসি ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কালশী ফ্লাইওভার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে ডিএনসিসি। ইংরেজি অক্ষর “Y” এর আকারে ডিজাইন করা ফ্লাইওভারটি যাত্রীদের যাতায়াতকে সহজ করবে। কারণ, আগে যেখানে রাস্তাগুলো ৪ লেনের ছিলো, সেখানে বর্তমানে তা ছয় লেনে প্রশস্ত করা হয়েছে। প্রধান ফ্লাইওভারটি ইসিবি চত্বর থেকে কালশী এবং মিরপুর ডিওএইচএস পর্যন্ত বিস্তৃত। মাঝে একটি দুই লেনের বিভাজন কালশী মোড়ে নেমে গেছে। মিরপুর ডিওএইচএস এবং ইসিবি স্কয়ার থেকে যানবাহন ফ্লাইওভারে উঠতে পারে তবে নামতে পারে কেবল কালশী প্রান্তে।

কালশী ফ্লাইওভারের সুফল
ঢাকা উত্তরের জনগণ ইতিমধ্যে নবনির্মিত ২.৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ কালশী ফ্লাইওভারের সুফল পাচ্ছে এবং ইসিবি স্কোয়ার থেকে কালশী পর্যন্ত তাদের যাতায়াতের সময় বাঁচছে। এয়ারপোর্ট রোড থেকে মিরপুরে প্রবেশের প্রধান সড়কটি তীব্র যানজটে স্থবির থাকায় দীর্ঘদিন ধরে কালশীতে ফ্লাইওভারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন মিরপুরবাসী। যানজট এড়াতে যাত্রীরা সাধারণত ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিকল্প পথ বেছে নিত। এখন ফ্লাইওভারটি চালু হওয়ায় তাদের অযথা পথ ঘুরে আসার দরকার নেই। এছাড়াও মিরপুর থেকে ঢাকার অন্যান্য স্থানে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে এই ফ্লাইওভারটি বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গত ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলের দিয়াবাড়ী-আগারগাঁও সেকশন উদ্বোধনের পর দীর্ঘদিন ধরে মিরপুরবাসীর ভোগান্তি অনেকাংশে লাঘব হয়েছে, নতুন ফ্লাইওভারটি তাদের যাতায়াতকে আরও সহজ করবে। ফ্লাইওভারটি উদ্বোধনের আগে, একই রুট দিয়ে যাতায়াত করতে প্রায় ২০ মিনিট এবং ভারী যানবাহনের ক্ষেত্রে তা প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগত। বিগত কয়েক বছর ধরে চলা উন্নয়ন কাজের জন্য কালশী এলাকার বাসিন্দারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করলেও এখন নতুন রাস্তা, চওড়া ফুটপাথ, সাইকেল লেন, ফ্লাইওভার দেখে উচ্ছ্বাসিত তারা। বাসের যাত্রী মোঃ ইকবাল বলেন, “আগে সড়কগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, জলাবদ্ধতা এবং যানজটের কারণে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এখন আমি ফ্লাইওভারের মাধ্যমে মাত্র পাঁচ মিনিটে পূর্বের ৩০ মিনিটের দীর্ঘ যাত্রা করতে পারি।”
যানজটের ফলে যাতায়াত ও যোগাযোগে দীর্ঘসূত্রীতা তৈরি হয়, যা সকলের উৎপাদনশীলতা নষ্ট করে। যানজট সমস্যায় আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতি ভুগছে, যা একটি দেশের সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বাঁধা। যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নতি না হলে একটি দেশ উন্নত হতে পারে না। তাই দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তাই না, একটি সহজ ও নির্ঝঞ্ঝাট যাতায়াত ব্যবস্থা জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। এই প্রেক্ষিতেই বলা যায়, কালশী ফ্লাইওভার নিশ্চিতভাবে উক্ত এলাকায় বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করবে। মেট্রো রেলের পর এই ফ্লাইওভারটি পূর্ব-পশ্চিমের জনগণের যাতায়াত আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় ও সংক্ষিপ্ত করে তুলবে বলে ঢাকাবাসীর চাওয়া।

লেখিকা: ইরিনা হক, গবেষক এবং ফ্রিল্যান্স কলামিস্ট।


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।


Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net