মো. শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার:
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আমাদের জনশক্তিকে দক্ষভাবে গড়ে তুলতে এবং দেশকে শিল্পোন্নত ও অর্থনৈতিকভাবে সম্পদশালী রুপে গড়ে তুলতে হলে কারিগরি শিক্ষাই আমাদের প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত। সাধারনভাবে আমরা মনে করি অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা কারিগরি শিক্ষা গ্রহন করে যাতে তারা শিক্ষা শেষ করেই চাকুরিতে ঢুকতে পারে। বর্তমান শিল্পায়নের যুগে এ ধারনা সম্পূর্ণ ভূল। কারন কারিগরি শিক্ষা ছাড়া বর্তমান চাকুরি বাজারে টিকে থাকা দ্বায়। শিল্পোন্নোত দেশগুলোতে চাকুরির ক্ষেত্রে কারিগরি দক্ষতা বাধ্যতামূলক, তাই সেখানে ডিপ্লোমা কোর্স এর সর্বাধিক মূল্যায়ন করা হয়। বর্তমানে আমাদের সরকারের বিনিয়োগ বান্ধব নীতি সহায়তার কারনে ইপিজেড গুলোতে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর তাবৎ বড় বড় কোম্পানীগুলো বিনিয়োগ করছে। এজন্যই কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন কর্মীর চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বর্তমান সরকার তাই ২০৫০ সাল নাগাদ কারিগরি শিক্ষাকে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে। যেভাবে উন্নত বিশ্বে কারিগরি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়, আমরাও সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে আমাদের দেশে যারা কারিগরি শিক্ষা নিচ্ছে তারা ভালো করছে, ভবিষ্যতেও আরো ভালো করবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বলেছেন, “শিক্ষায় বিনিয়োগ হচ্ছে শ্রেষ্ঠতম বিনিয়োগ”। আমাদের দেশে বর্তমানে ৫ কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে, যেটি পৃথিবীর অনেক দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশী। এই যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এই সংখ্যাটি ভবিষ্যৎ সম্পদের সংখ্যা। এই সকল শিক্ষার্থীদের সম্পদে রুপান্তর করাই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। তাই কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়নে ও শিক্ষার্থীদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য কয়েকটি বিষয় দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন:
১. কারিগরি শিক্ষার গুনগত মান উন্নত করা ও দক্ষতা অর্জন, কারিগরি ও বৃত্তিমুলক শিক্ষার কৌশল সমুহের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ।
২. শিল্প-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক উন্নয়ন, শিল্পকারখানার চাহিদা অনুযায়ী কোর্স কারিকুলাম প্রণয়ন।
৩. বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহকে ল্যাব স্থাপনে প্রয়োজনীয় আর্থিক অনুদান।
৪. স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী দুই ধরনের কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
৫. কারিগরি শিক্ষার জনসচেতনতা ও ইতিবাচক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী তৈরির জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন।
বর্তমান সরকারের কারিগরি শিক্ষার উপর গুরুত্ব অনুধাবন করে ড: মো: সবুর খাঁন ঢাকা, চাঁদপুর ও চট্টগ্রামে ড্যাফোডিল ইনষ্টিটিউট নামে পলিটেকনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে চট্টগ্রামে রয়েছে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস, আধুনিক ল্যাব সুবিধা, জব প্লেসমেন্ট সেল সহ আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা।
বর্তমানে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠি দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তর হচ্ছে, এরাই হবে দেশের মূল ধারার চালিকা শক্তি। দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নাই। দারিদ্র বিমোচনে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, আত্ম-কর্মসংস্থান উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে কারিগরি ও বৃত্তিমুলক শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম।
দেশে বর্তমানে ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ও ৩৮৭টি বেসরকারী পলিটেকনিক কলেজের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
সর্বশেষ বর্তমান যুব সমাজকে ও বিদেশগামী জনগোষ্ঠিকে দক্ষ করে তুলতে পারে একমাত্র কারিগরি শিক্ষা। আর এই শিক্ষার মাধ্যমে বিদেশে শ্রম বাজার থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব, অন্যদিকে দেশীয় শ্রম বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সহায়তা করে এই কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত কর্মীরা। আমরা সাধারন শিক্ষার পিছনে না দৌড়ে কারিগরি শিক্ষা নিলে নিজের, সমাজের, পরিবারের, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হয়। তাই আমাদের কারিগরি শিক্ষাই প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত।
লেখক:
লেখক ও কলামিষ্ট।
হেড অব অপারেশন ও সহকারী অধ্যাপক
ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি, চট্রগ্রাম।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………… শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার বর্তমান সময়ের একজন অগ্রগণ্য উদীয়মান তরুন লেখক। দেশের নানা পত্রিকায় শিক্ষা সংক্রান্ত ও বিনিয়োগ ভাবনা নিয়ে তার বেশকিছু লেখা প্রকাশ হয়েছে।
দীর্ঘ ২২বৎসরের কর্মজীবনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষকতায় কাটিয়েছেন। বর্তমানে ড্যাফোডিল শিক্ষা পরিবারের চট্টগ্রাম শাখায় শিক্ষকতার পাশাপাশি অপারেশনের প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
তিনি স্নাতক সন্মান ও বিভিন্ন ডিপ্লোমার ছাত্রছাত্রীদের হিসাবশাস্ত্র, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, আয়কর ইত্যাদি বিষয়ে পড়িয়ে থাকেন।
বাণিজ্যে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এ ছাড়াও এমবিএ ফাইন্যান্স, আইন শাস্ত্র ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। তিনি একজন দক্ষ প্রশিক্ষকও।