বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কানাডার বাজারে আরও ১০ বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। দেশটিতে সম্প্রতি নতুন অর্থবিল অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তাতে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত দেশটিতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে কোনো শুল্ক দিতে হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এসব তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, জেনারেল প্রেফারেনশিয়াল ট্যারিফ (জিপিটি) স্কিমের আওতায় কানাডা উন্নয়নশীল দেশগুলোকেও শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে।
স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কানাডার বাজারে কোটামুক্ত ও শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে আসছে। এ সুবিধা জিপিটির আওতায় পড়ছে, যা প্রতি ১০ বছর পর পর নবায়ন করা হয়। জিপিটির বর্তমান সুবিধার মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালে।
বাংলাদেশের জন্য ভালো খবর হচ্ছে, কানাডার সংসদ সম্প্রতি নতুন একটি অর্থবিলের অনুমোদন দিয়েছে, যেখানে জিপিটি ব্যবস্থায় প্রাপ্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা ২০৩৪ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
এতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কানাডা সরকার জিপিটির আওতায় আরেকটি স্কিম চালু করেছে, যেটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘জিপিটি প্লাস’। এই প্রস্তাবে জিপিটির আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে উন্নয়নশীল দেশগুলো। যেসব উন্নয়নশীল দেশ তাদের পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার মানায় উন্নতি দেখাতে পারবে এবং পরিবেশগত মানদণ্ড মেনে চলবে, সেসব দেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে, যা জিপিটি প্রগ্রামের বাইরে বাড়তি সুবিধা হিসেবে দেওয়া হবে। এটি মূলত কানাডার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) সুবিধার সঙ্গে মিল রেখে করা হয়েছে।
এতে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেও ২০৩৪ সাল পর্যন্ত কানাডার বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়াটি যাতে সহজ হয় এ জন্য বড় বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে বিজিএমইএ। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য থেকে সাড়া পাওয়া গেছে, একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া সরকারের কর্মকর্তারাও ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘যুক্তরাজ্য ও কানাডা বাংলাদেশের পোশাকের অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধার সময় বাড়িয়েছে। ফলে ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর শুল্কমুক্ত সুবিধা হারানোর যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল তা থেকে বের হয়ে আসা যাচ্ছে। ’
তিনি বলেন, ‘কানাডা আরো ১০ বছর বাড়িয়ে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত অগ্রাধিকার সুবিধা দিয়েছে। ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যাবে ইউরোপের বাজারে। আরো তিন বছর বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়াও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। ’
ফারুক হাসান বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা ছাড়াও বৈশ্বিক বাজারে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরির বিজিএমইএর উদ্যোগ কাজে লেগেছে। ’ তবে বায়ারদের কাছে পোশাকের দাম বাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া শিল্পের বৃহত্তর স্বার্থে দেশের উদ্যোক্তাদের মধ্যে কম দাম দিয়ে কাজ নেওয়ার প্রতিযোগিতা না করার পরামর্শ দিয়েছেন।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম বৃহৎ বাজার কানাডা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কানাডায় তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ১.৫৫ বিলিয়ন ডলারের, যেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ১.৩৩ বিলিয়ন ডলারের। এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয় ১৬.৫৫ শতাংশ। যদিও বাংলাদেশ থেকে কানাডার আমদানির হিস্যা মাত্র ১৩.৯৫ শতাংশ। এর অর্থ হচ্ছে কানাডার বাজারে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের আরো অনেক বড় সম্ভাবনা রয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাবে বাংলাদেশ।