কম্পিউটারে হাতেখড়ি | মো. নবী আলম

::
প্রকাশ: ৬ মাস আগে

কম্পিউটার সম্পর্কে আমার বিস্তর ধারণা আগেও ছিল না, এখনো নাই। কলেজে যখন পড়ি তখন তপনদের বাসায় কম্পিউটার আনা হয়। তপন সম্পর্কে একটু বলি। ও আমার বাল্য বন্ধু, খেলার সাথী, সহপাঠী সবচেয়ে বড় কথা আমরা ভাই। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে তপনের সাথে। কত দুষ্টুমি, মারামারি, বড়শি দিয়ে মাছ ধরা, একসাথে ঘুমানো, খেলাধুলা, ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি নানান স্মৃতি। এসব বলে বা লিখে শেষ করা যাবে না। বন্ধু আমার এখন অনেক বড়। কাজে-কর্মে সারাক্ষণ ডুবে থাকে। ফোনে কথা বলার সময়টুকুও নেই। এরমানে এটা নয় আমাদের মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। একেবারেই ফোনে কথা হয় না সেটাও নয়, বছরে কয়েকবার হয়। তবুও সেটা ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কাজের ব্যস্ততায় সব ভুলে গেলেও ব্র্যান্ডের এক্সপোর্ট ইমপোর্ট শার্ট, গেঞ্জি গিফট দিতে কখনো ভুলে না।

যে কথা বলছিলাম, কম্পিউটারে হাতেখড়ি। ১৯৯২-তে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হলাম। ফার্স্ট ইয়ার শেষে সম্ভবত সেকেন্ড ইয়ার হবে। তখন কম বেশি বন্ধুদের অনেকে পড়ার ফাঁকে কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল ইত্যাদি শিখতো। কারণ কর্মর্জীবনে ইহার খুবই গুরুত্ব। তপনদের সাথে আমাদের ঘনিষ্ঠতা ছিল, বলা যায় একই পরিবার। নতুন কম্পিউটার পেয়ে তপন আর খেলতে আসে না। আমি একটু বিরক্ত হই। খেলার চেয়ে ওর কাছে এখন কম্পিউটারই বড়ো হয়ে গেল। একদিন বাসায় ডাকতে গিয়ে দেখি কম্পিউটারে গেম খেলছে। কীভাবে খেলে পাশে বসে দেখতে লাগলাম। আমাকে বলে তুইও খেল। আমি বলি, ওটা আমার দ্বারা হবে না। জটিল বিষয়। তপন বলে আরে পারবি, এটা তেমন কঠিন কিছু না। এক প্রকার জোর করেই গেম খেলতে বাধ্য করে। খেলে বেশ মজা পেলাম। যখন তপন বাসায় থাকতো না তখন তো কম্পিউটারে গেম খেলতে পারতাম না। ও বাসায় আসা না পর্যন্ত বসে থাকতাম। বাসায় এসে দেখতো আমি কম্পিউটারের সামনে বসে আছি। বলতো বসে আছিস কেনো, গেম তো খেলতে পারিস। আমি বললাম, ওটা তো আমি চালাতেই পারি না। কম্পিউটার কীভাবে অন করতে হয় দেখিয়ে দেয়। তপন বাসায় না থাকলেও কম্পিউটার অন করে গেম খেলি। এভাবে গেম খেলার মাধ্যমে কম্পিউটারে হাতেখড়ি।

তপন কম্পিউটারে বাঙলা, ইংরেজি দ্রুত টাইপ করতে পারতো। তপন কীবোর্ড এর বাটন না দেখেই টাইপিস্টদের মতো করতে পারে। আমারও কৌতুহল টাইপ শিখবো। তপনকে বললাম। ও তখন বললো তরে একটা গেম দিচ্ছি এই গেম প্র্যাকটিস করবি তাহলে সহজেই টাইপ শিখে যাবি। তখন একটা গেম ছিল ইংরেজি অক্ষরগুলো এলোমেলোভাবে দ্রুত নিচের দিকে পড়তো। অক্ষরগুলো নিচে পড়ার আগেই কীবোর্ড এর অক্ষরে টিপ দিয়ে মেরে ফেলতে হতো। যত দ্রুত যত বেশি অক্ষর মারতে পারতাম তত নম্বর যোগ হতো। এরমানে ছিল টাইপ স্পিড। এভাবেই বাঙলা, ইংরেজি টাইপ শিখা। এরপর এক্সেল, পেইজ সেটআপ, প্রিন্ট দেওয়া ইত্যাদি শিখি। যা আজ আমার জীবনে অনেক কাজে লাগছে। সেদিন যদি তপন জোর করে কম্পিউটার না শিখাতো তাহলে হয়তো আজও অজানাই থাকত। এ জন্য বন্ধুকে কখনো ধন্যবাদ জানানো হয় নাই। ধন্যবাদ দিলে তো আর বন্ধুত্ব থাকে না। বন্ধুত্বে কোনো স্বার্থ থাকে না, থাকে শুধু ভালোবাসা।