কবিতা ও আমি | এস এম আবুল বাশার

::
প্রকাশ: ২ years ago

আজ কয়েকদিন ধরে মনে হচ্ছে, কবিতাই আমার সব, লেখালেখিই আমার সব। লেখালেখি ও কবিতাকে ঘিরে দীর্ঘ ৭০ বছর বসবাস করছি। লেখালেখির সুবাদে গোটা বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ঘুরেছি। নানান জায়গায় কবি ও কবিতার আড্ডায় গিয়েছি। তবে বেশ কয়েকবছর যাবত যেখানেই দাওয়াত পাচ্ছি, ফিরাচ্ছি না কাউকে, যদিও একদিকে বাঁধক্য অন্যদিকে প্রিয়তমা স্ত্রী ভাগ্যতের নেছার ইন্তেকালের পর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও বসি না, বেশি জরুরী না হলে তেমন বাসা থেকেও বের হই না।

মাঝে মাঝে মনে হয় কবিতার জন্য শরীরটাকেও শপে দিয়েছি। শরীর যতক্ষন সুস্থ থাকবে ততক্ষন যেখানেই ডাক পড়বে, লোকেশন জানা থাকবে, সেখানেই ছুটবো, কবিতার কথা বলবো। কবির কথা বলবো। কেননা কবিতাই হলো আমার বেচেঁ থাকা। কবিতার জন্য ৩১ অক্টোবর’১৭ সোমবার গিয়েছি কুমিল্লার লাকসাম সাপ্তাহিক লাকসাম পত্রিকা অফিসে। সেখানে কবিতা পাঠের আসরের আয়োজন করেছে জাতীয় কবিতা মঞ্চ কুমিল্লা জেলা শাখা।

সংগঠনটির তখনকার সময় সভাপতি আমি ছিলাম, তাই সভাপতির দায়িত্বে আমি থাকলেও পুরো কমিটির ৪১ জন সদস্যই কর্মঠ ও বিচক্ষন হওয়ায় তেমন গুরু দায়িত্ব আমার নেই বললেই চলে। তবে সবার সাথে সবার একটা ভালো যোগাযোগ রয়েছে সেটা বলার দাবি রাখে। কেননা সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদুল হাসান নিজামী তো আমার অনুজপ্রতিম কবি বন্ধু। যাক কমিটির অনেকেই লাকসাম থানা রোডের সাপ্তাহিক লাকসাম পত্রিকা অফিসে আসতে লাগলো। সেখানেই আসরের মধ্যমণি ভাষাসৈনিক আবদুল জলিলের সাথে দেখা হয়ে গেলো। যে আমার খুব কাছের বন্ধু। দীর্ঘ ৪০ বছরের সর্ম্পক যার সাথে। সে হলো আসরের প্রধান অতিথি। খুবই ভালো লাগলো। তবে কবিতা ও কবির খোঁজে আমি চারদিকে যেমন ঘুরতে পছন্দ করি, জলিল ও তেমন। সত্যি সে একটি প্রতিষ্ঠান। কেননা সে তো একাধারে একজন পত্রিকার সম্পাদক, সাবেক শিক্ষক, সংগঠক, লেখক, ভাষাসৈনিক, সাংবাদিক, কবি ও মুক্তিযোদ্ধের স্বপক্ষের লোক। তার মতো ব্যক্তি লাকসাম তথা কুমিল্লার গর্ব।

আবদুল জলিল আমাদের অহংকার। বাংলা সাহিত্যের অহংকার। সে আজ আর নেই। সবই অতীত। সে ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারী চলে গেলেও অনেক কৃতি ও স্মৃতি রেখে গেছে। মনে আছে, সেদিন তার সাথে কবি ও কবিতা সর্ম্পকে দীর্ঘ আলাপ হলো। সে বললো তার এখনো অনেক লেখা বাকি। তাকে যে আরো অনেক বেশি লিখতে হবে। আমি ও তাকে আশ্বাস দিলাম। সে লিখুক, তার লেখাতে জাতি ও সমাজ উপকৃত হোক। আমরা একজন সচেতন ও সহজ সরল মনের অধিকারী কবি জলিলকে পাবো। তবে কবি আবদুল জলিল আমার মতোই থানা সদরে একদম গ্রামের মানুষের মতো বসবাস করে বলে খুব ভালো লাগে। কেননা আমি তো মাঝখানে ২৭ বছর বাদ দিলে বাকি ৬১ বছরই গ্রামে আছি। ১৯৫২-১৯৭৯ সময়কাল ঢাকায় ছিলাম। সংগঠন করেছি, লেখালেখি করেছি। ব্যবসা করেছি। মানুষের সাথে মিশেছি। অনেক মানুষের উথান পত্তন দেখেছি। অনেকের সাথে পরিচয় হয়েছে।

এস এম আবুল বাশার রচিত দুটি বইয়ের প্রচ্ছদ

লেখালেখি করতে গিয়ে, লেখালেখির আড্ডায় গিয়ে নানান শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, সবকিছু ছাড়তে পারলেও গ্রাম ছাড়া আমার পক্ষে কখনো কেন জানি সম্ভব হয়নি। গ্রামকে আমি আকঁড়ে ধরে আছি। যাক সবিশেষ কথা হলো, গত কয়েকবছওে আজাদ সরকার লিটনের আমন্ত্রণে বি-বাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার কোল্লাপাথর, সাহিদা সাম্য লীনা-ফজলুল মল্লিক-আল হাফিজের আমন্ত্রণে ফেনী জেলার ফেনী সদরে, মরহুম কবি শাহীন বানু-এইচ এম আজিজুল হক-ইমরান মাহফুজের আমন্ত্রণে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বসকরায়, আবদুল আউয়াল সরকার-একিউ আশিক-শাহাদাত ইসলাম সবুজের আমন্ত্রণে কুমিল্লা টাউন হলে কুমিল্লা কবি ফোরামের মাসিক কবিতা পাঠের আসর, আজাদ সরকার লিটন-তাসলিমা লিয়ার আমন্ত্রণে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠান, জয়দেব ভট্টাচার্য ভুলু-শফিকুল্ ইসলাম ঝিনুকের আমন্ত্রণে কবি ফখরুল হুদা হেলালের জন্মদিন, সৈয়দ ওয়ালী উল্যাহর মৃত্যুবার্ষিকী, কবি ফররুখ আহমেদের স্মরণে কবিতা পাঠের আসর, কবি শামসুর রাহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে কবিতা পাঠের আসরসহ বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে গিয়েছি। সবগুলোতেই কবিতা পাঠ কিংবা আলোচনা করেছি। অন্য কবিদের কবিতা পাঠও মনোযোগ সহকারে শুনার চেষ্টা করেছি। কবিতা আমাকে স্বপ্ন দেখায়, যে কবিতা আমি লিখতে লিখতে আলমারি ও শোকেজ পুরিয়ে ফেলেছি।

প্রায় কয়েক ডজন টালি খাতায় লিখে ভরিয়ে তুলেছি প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কবিতা, গল্প, স্মৃতিকথা, ভ্রমণকাহিনী, ইতিহাস, বিজ্ঞান, রম্য রচনা, আমার জীবনী, বেশ কয়েকজন কবি,লেখকের জীবনী, ৪৭ এ ভারত ভাগের কাহিনী (কিছু অংশ), নাঙ্গলকোটের ইতিহাসসহ প্রায় ৪ শতাধিক গ্রন্থ। আরো লিখেছি আল্লামা ইকবাল-ওমর খৈয়াম-জালাল উদ্দিন রুমী-শেখ সাদী (র) এর জীবনী, রাসূলের সাহাবীদের জীবনী, কবি নজরুল, কবি আল মাহমুদের জীবনী, আবুল খায়ের মুসলেহ উদ্দিনের জীবনী লিখেছি। লেখাতে সবর্দা রেখেছি এই দেশের মান-সম্মান,অভিমান, নারী-পুরুষ, মা মাটিসহ প্রাকৃতিক দৃশ্যসহ ভাঙ্গা-গড়ার কাহিনী। সত্যিই সাহিত্যের উপজীব্য করে তোলার চেষ্টা করেছি। আমি যেমন খ্যাতিমান ও বড় কবিদের সানিধ্য পেয়েছি তেমনি বর্তমান সময়ের এই দশকের কবিদের সম্মান ও স্নেহ করতে কুন্ঠাবোধ করি না। কেননা তারাই তো আগামীদিনের বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল প্রদীপ।

বর্তমানে চলছে ফেসবুকে কবিতা চর্চা। এর বিপক্ষে কোন মন্তব্য না করে শুধু বর্তমান সময়ের তরুন কবি ছড়কারদের বলবো নকল ও অনুসরণ করে কিংবা কপি করে বড় হওয়া যায় না। তাই চুরি করার বদঅভ্যাস বাদ দিতে হবে। এতে জায়গা মতো নয়তো ধরা খেতে হবে। কেননা ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না। সাহিত্যেরও একটা মাপকাঠি আছে। সেই মাপকাঠি অনুসারে সাহিত্যের নিয়মকানুন কলা কৌশল মেনে চলতে হবে। এতে করে সাহিত্যের একজন হয়ে উঠতে যে কাউকে সাহায্য করবে। যাক মোট কথা হলো কবিও কবিতার সানিধ্যে থেকে এই জীবনটাকে উপভোগ করেছি। বেশ ভালোই কাটালাম সময়গুলোকে। বহু তরুন কবিদের সম্মানসহ বহু মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও কোন ধরণের আফসোস নেই আমার। কেননা আমার কলামের শিরোনামের কথাটি আবার উল্লেখ করে বলবো কবিতাই হলো আমার বেঁচে থাকা। লেখালেখি ও কবিতাকে আমি ভালোবাসি…

লেখক: সভাপতি, নাঙ্গলকোট সাংবাদিক ফোরাম এবং সহ-সভাপতি, জাতীয় কবিতা মঞ্চ,কেন্দ্রীয় কমিটি।