শিরোনামে হয়তো অবাক হচ্ছেন। ভাবছেন লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে বেহায়ার মতো কী লিখছে।
প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ এবং দন্ডনীয়। শাস্তি হিসেবে আর্থিক জরিমানা ও জেল। ধূমপায়ীদের মানুষ ভালো চোখে দেখেও না। বিড়ি-সিগারেট প্রকাশ্যে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। এক্ষেত্রে কেউ লজ্জা পাচ্ছেন না। বরং দেখা যায়, ক্রেতা বুক ফুলিয়ে বিড়ি ধরিয়ে ফুকতে ফুকতে দোকান থেকে বের হয়। অথচ ধূমপান ধর্মীয়ভাবেও বর্জনীয় এবং আইনত দন্ডনীয়।
বিপরীতে জন্মনিরোধক কনডম সম্পন্ন বৈধ। সরকার নারী-পুরুষের যৌনজীবনে ইহা ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। ধর্মীয়ভাবে কোনো বাধা নিষেধও নাই। কনডম অযাচিত গর্ভাবস্থা থেকে রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। ইহা ব্যবহারে এইডস, এইচআইভি, গনোরিয়া, সিফিলিসের মতো যৌন রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। কনডমের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নাই। অথচ কনডম ক্রয়-বিক্রয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে এমন লজ্জাবোধ করেন, যেন তারা গুরুতর অপরাধ করছেন। দোকানি কনডম এতটাই গোপনে প্যাকেট করে ক্রেতার হাতে তুলে দেন যাতে কেউ না দেখে।
পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
নিরাপদ যৌনতা ও অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ রোধের প্রচারে কনডম ব্যবহারে কোনো কোনো কোম্পানি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। এতে অনেকে নানা সমালোচনা করে এটিকে অনৈতিক অভিহিত করে প্রচার বন্ধের আবেদন করে।
অথচ দেশে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণে কত ভ্রুণ নষ্ট করা হয়, সরকারিভাবে নির্দিষ্ট হিসাব থাকলেও বেসরকারিভাবে সঠিক হিসাব নাই। একটি ভ্রুণ নষ্ট করা মানে একটি শিশু হত্যা করা। ইহা ধর্মীয়ভাবে যেমন পাপ তেমনি অপরাধ।
মিডিয়ায় কনডমের বিজ্ঞাপনে যারা নানা সমালোচনা করে অনৈতিক অভিহিত করে প্রচার বন্ধের আবেদন করে, তারা কি কখনো ভ্রুণ নষ্টের মতো পাপ ও অপরাধের ব্যাপারে একবারও প্রতিবাদ ও আবেদন করেছেন? মিডিয়ায় কনডমের বিজ্ঞাপনে তারা লজ্জা পান, ভ্রুণ নষ্টে মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন।
দেশে সম্প্রতি জন্মনিরোধক কনডমের দাম বেড়েছে। কনডমের দাম ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বেড়ে গেছে। যেসব কনডমের দাম কম, সেগুলোরই দাম বেশি বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কনডমের বিক্রি কমে গেছে। কনডমের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমি অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত বেড়ে যাওয়া এবং যৌন রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছি।
বাংলাদেশে ২০১০ সালে গর্ভকালীন মৃত্যুর হার ছিল ১ শতাংশ। তবে ২০১৬ সালে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ শতাংশ। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাতের কারণেই এসব মৃত্যু হয়েছিল।
এর কিন্তু খুব সূদুর প্রসারি খারাপ প্রভাব আমাদের জীবনে ফেলতে পারে। এখন সাধারণত সবাই সন্তান নেওয়ার বিষয়ে সচেতন। দুই সন্তানের বেশি নিতে চান না। তারা বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত এই খরচ কমাতে গিয়ে তাদের যৌনজীবনকে কম্প্রোমাইজ করবেন। অনেকেই পিল ব্যবহার করবেন। সেটা অনেক ক্ষেত্র নারী স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে মানুষ তাদের জীবনের তেল, চিনি, লবণ, মাছ, মাংস, তরকারি বিভিন্ন চাহিদাকে কাটছাঁট করছে।। এখন যৌনজীবনকেও কাটছাঁট করতে হবে। এক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ও গর্ভপাত বেড়ে যাবে। আর যারা কম্প্রোমাইজ করবেন না তারা জনসংখ্যা বাড়িয়ে চলবেন। অধিক জনসংখ্যার ফলে তারা আর্থিক সংকটে পড়বেন।
জন্মনিরোধক কনডমের দাম বৃদ্ধিতে বিক্রি কমে যাওয়ায় অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের আশঙ্কা রয়ে যায়। এই আশঙ্কা বিবেচনা করে দ্রুত পূর্বের দাম বহাল রাখাটাই দেশের জন্য কল্যাণময়।
লেখক: মো. নবী আলম, সাংবাদিক ও উন্নয়ন কর্মী।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।
গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।
Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net