ওবায়দুল কাদেরের হ্যাট্রিক সাধারণ সম্পাদক হওয়ার নেপথ্যে

::
প্রকাশ: ২ years ago

পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট:
আবারও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে হ্যাটট্রিক করেছেন ওবায়দুল কাদের। আগামী মেয়াদের (তিন বছর) জন্য এ পদে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় সর্বসম্মতিক্রমে তাকে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত করেন কাউন্সিলররা। আর, টানা দশমবারের মতো দলের সভাপতি হয়েছেন জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা।

ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে দলের নেতাকর্মীদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তৃতীয়বাবেরর মতো এই পদে নির্বাচিত হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে তার পরিশ্রম এবং দলীয় সভাপতির আস্থা আর বিশ্বাস। গত কয়েকবছরে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, এলিভেডেট এক্সপ্রেস ওয়ে, শত সেতু, শত মহাসড়কসহ সড়ক ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে, তাতে রয়েছে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে ওবায়দুল কাদেরের গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা ও একনিষ্ঠতা। এজন্য তৃতীয় মেয়াদে তার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়া দলীয় প্রধান পুরস্কার হিসেবে বর্ননা করেছেন তারা।

এজন্য ওবায়দুল কাদেরের কাজের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। ওবায়দুল কাদের দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় দক্ষভাবে সামাল দিচ্ছেন বলেও বিভিন্ন সময়ে প্রশংসা করেছে শেখ হাসিনা।

গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে বঙ্গবন্ধু টানেলের একটি টিউবের কাজের সমাপ্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন শেখ হাসিনা। সেখানে তার সঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও ছিলেন। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার একপর্যায়ে ওবায়দুল কাদেরের ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের, তার মতো কর্মঠ লোক খুব কম আছে। তাকে পার্টির সেক্রেটারি করার পর আমার চাপ অনেক কমে গেছে।’

 

ওবায়দুল কাদেরের রেকর্ড:
তৃতীয়বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পদে দায়িত্ব পেয়ে আওয়ামী লীগের ইতিহাসে নতুন করে নাম লেখালেন ওবায়দুল কাদের। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতা তাজউদ্দিনের পাশে নাম লেখালেন তিনি।

এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ৯ জন। সবচেয়ে বেশি চারবার করে হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিল্লুর রহমান। তিনবার করে সাধারণ সম্পাদক হলেন তাজউদ্দিন আহমেদ এবং ওবায়দুল কাদের।

এছাড়া আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দুইবার করে, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, আবদুল জলিল একবার করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

 

ওবায়দুল কাদেরের রাজনৈতিক উত্থান:
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে মুজিব ফোর্সের কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন কাদের। ছয় দফা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানেও ভূমিকা ছিল তার। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বিরূপ সময়ে দুই দফায় ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী ওবায়দুল কাদের এক সময় দৈনিক বাংলার বাণীতে কাজ করতেন।

২০০০ সালে সংস্কৃতি ও শিক্ষা সম্পাদক পদের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পান তখনকার যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কাদের। ২০০৯ সালে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হওয়ার আগে তিনি সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদেও ছিলেন।

এর আগে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছিলেন সে সময় দলের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৫ (কোম্পানিগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া কাদের।

শেখ হাসিনার তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর ২০১৩ সালে ওবায়দুল কাদের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তার সময়ে মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তিত হয় ’সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়’ নামে।

২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের চতুর্থ মেয়াদের সরকারেও ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দ্বিতীয়বারের মত কাদেরকে দেন শেখ হাসিনা।

ওবায়দুল কাদেরর বসুরহাট সরকারি এএইচসি হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি মেধাতালিকায় স্থান পান।

ওবায়দুল কাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কলেজজীবন থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হন ওবায়দুল কাদের। ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। ওবায়দুল কাদের একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি মুজিব বাহিনীর কোম্পানীগঞ্জ থানার কমান্ডার ছিলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বিয়োগান্ত ঘটনার পর ওবায়দুল কাদের কারাবরণ করেন। আড়াই বছর তিনি কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।

 

আ. লীগের জাতীয় কমিটি-উপদেষ্টা পরিষদ-মনোনয়ন বোর্ডে যারা
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সঙ্গেই দলের জাতীয় কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ, সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের নামও ঘোষণা করা হয়েছে।

শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে দলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ হাসিনা এসব নাম ঘোষণা করেন।

সম্পাদকমণ্ডলী:
সম্পাদকমণ্ডলীতে শ্রমবিষয়ক সম্পাদক, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক এবং উপ-প্রচার সম্পাদকের পদ ফাঁকা রাখা হয়েছে। এসব পদ পরবর্তী সময়ে পূরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।

অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এমপি, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা।

সাংগঠনিক সম্পাদক:
সাংগঠনিক পদে আগের মতোই রয়েছেন আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম এমপি, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। বাদ পড়েছেন সাখাওয়াত হোসেন শফিক। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন সুজিত রায় নন্দী।

উপ-সম্পাদক পদে অপরিবির্তত আছেন সায়েম খান।

কার্যনির্বাহী সদস্য : দলের পরবর্তী সভাপতিমণ্ডলীর সভায় নতুনভাবে কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হবে।

জাতীয় কমিটি:
আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ড. মশিউর রহমান, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মির্জা এম এ জলিল, আকবর আলী মর্জি, ড. আনিসুল হক, জাহিদ মালিক স্বপন, অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, শাহজাহান কামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুস, চন্দ্রীজগল পাল, শ্রী রমেশ চন্দ্র, নুরুল ইসলাম নাহিদ, হারুনুর রশিদ এবং হাবিবুর রহমান সিরাজ।

সংসদীয় বোর্ড:
সংসদীয় বোর্ডও অনুমোদন হয়েছে সম্মেলনে। সংসদীয় বোর্ডের ৫ সদস্য মারা গেছেন। পরে সেগুলো পূরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। সংসদীয় বোর্ডের প্রধান হিসেবে নিয়ম অনুযায়ী থাকছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সদস্যরা হলেন- আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, কাজী জাফর উল্লাহ, রমেশ চন্দ্র সেন, ওবায়দুল কাদের, মো. রাশিদুল আলম এবং ড. দীপু মনি।

স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড:
শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, কাজী জাফর উল্লাহ, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান, শ্রী রমেশ চন্দ্র সেন, ওবায়দুল কাদের, মো. রাশিদুল আলম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মো. আব্দুর রহমান, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ এবং ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ।

উপদেষ্টা পরিষদ:
আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ড. মশিউর রহমান, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, রাজীউদ্দিন আহমেদ রাজু, ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, শ্রী সতীশ চন্দ্র রায়, অধ্যাপক ড. আব্দুল খালেক, অধ্যাপক ডা. রুহুল হক এমপি, কাজী আকরাম উদ্দীন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান, ড. অনুপম সেন, অধ্যাপক ড. হামিদা বানু, অধ্যাপক ড. মো. হোসেন মনসুর, অধ্যাপক সুলতানা শফি, এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী, অ্যাম্বাসেডর জমির, গোলাম মওলা নকশাবন্দি, ড. মির্জা এমএ জলিল, ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া, মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ মল্লিক, অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান খান, ড. গওহর রিজভী, অধ্যাপক খন্দকার বজললু হক, মো. রশিদুল আলম, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, কাজী সিরাজুল ইসলাম, চৌধুরী খালেকুজ্জামান, মোজাফফর হোসেন পল্টু, সালমান এফ রহমান, এনাম আহমেদ চৌধুরী, আতাউর রহমান, একেএম রহমাতুল্লাহ, মো. শাহাবুদ্দিন টিপু, অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, ড. শামসুল আলম, মতিউর রহমান খান, অ্যাডভোকেট জহিরুল হক, শ্রী রমেশ চন্দ্র সেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান, হারুনুর রশিদ এবং হাবিবুর রহমান সিরাজ।