সম্প্রতি এক ফেসবুক লাইভে এসে বিস্ফোরক সব মন্তব্য করেছেন যশোর জেলা যুবদলের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক এসকেন্দার আলী জনি। তার দাবি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ভারতে পালাতে সহযোগিতা করেছেন যশোর যুবদল নেতারা। গত মঙ্গলবার তার এ দাবির পর থেকেই বিব্রত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তোলা ছিল এসকেন্দার আলী জনির নিয়মিত কাজ। দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ ও শীর্ষ নেতাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ পোস্ট দেওয়ার অভিযোগেই বহিষ্কৃত হন তিনি। তবুও নিবৃত করা যায়নি তাকে। যার সবশেষ উদাহরণ বহিষ্কারের পর ওবায়দুল কাদেরের দেশত্যাগ নিয়ে তার এই লাইভ।
গত মঙ্গলবার রাতে তিনি ফেসবুক লাইভে অভিযোগ তোলেন, জেলা যুবদলের সভাপতি তমাল আহম্মেদ ও সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা যশোর যুবদলকে যুবলীগে পরিণত করেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলালসহ তার পরিবারের চার সদস্যকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন আনসারুল হক রানা। তার এই লাইভ বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জনি ছিলেন মূলত যশোর জেলা বিএনপি অফিসের কেয়ারটেকার। দলীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সুনজরের সুবাদে পদ পেয়ে যান জেলা যুবদলের প্রচার সম্পাদকের। এরপর দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের করতে থাকেন অবমূল্যায়ন। বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীকে নিয়ে বিষোদ্গার শুরু করেন। তার হাত থেকে রক্ষা পাননি জেলা বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও। জেলা বিএনপি ও যুবদলের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ ডিসেম্বর তাকে বহিষ্কার করে যুবদলের কেন্দ্রীয় সংসদ। বহিষ্কারের পর একের পর এক দলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ পোস্ট করার পাশাপাশি লাইভে এসে গুরুতর নানা অভিযোগ উত্থাপন করতে থাকেন এ বহিষ্কৃত নেতা।
সবশেষ জনির লাইভের পর যশোরে দলের নেতাকর্মীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বিব্রত বোধ করছেন তারা। জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসকের অত্যাচারে ১৫ বছর বাড়িতে রাত কাটাতে পারিনি। বিনা অপরাধে আমাকে অসংখ্য মামলার আসামি করা হয়েছে। জেল খেটেছি, হামলার শিকার হয়েছি অনেকবার। তাই স্বৈরাচারের প্রধান হোতাদের বেআইনিভাবে সহযোগিতা করার মতো নিকৃষ্ট কাজে জড়িত থাকার প্রশ্নই ওঠে না।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদেরকে ভারতে পালাতে সহযোগিতা করা বাবদ অর্থের লেনদেন নাকি সিঙ্গাপুরে বসে করা হয়েছে এবং আমিও সেখানে ছিলাম বলে জনি দাবি করেছে। তার দাবি, যদি এটা সত্যি হয়, তাহলে তো আমার পাসপোর্টে সিঙ্গাপুরের ভিসা থাকবে, তাই না?
জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ বলেন, অভিযুক্ত বহিষ্কৃত যুবদল নেতা মাদক সেবনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এ কারণেই হয়তো সে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপনের মধ্য দিয়ে নেতাদের চরিত্র হরণের চেষ্টা করছে।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, যুবদল থেকে বহিষ্কৃত জনির কর্মকাণ্ডে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিব্রত। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারেও চিন্তা করছি।
তবে বহিষ্কৃত যুবদল নেতা এসকেন্দার আলী জনি বলেন, যোগ্যতা দেখে দল আমাকে প্রচার সম্পাদক করেছে। দলে সবসময় নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। সুবিধা আদায়কারী নেতাদের মুখোশ উন্মোচন করছি বলেই তাদের শত্রু আমি; আমাকে তারা বহিষ্কার করেছে, যা অন্যায়। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জেলা যুবদলের সভাপতি-সম্পাদকের অভিযোগগুলো তদন্তের অনুরোধ জানান।