ওজন করে কোরবানির পশু বিক্রি করা জায়েজ?

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ৩ সপ্তাহ আগে

আমাদের দেশের সাধারণ নিয়ম হলো, ব্যবসায়ীরা গরুর আকার অনুমান করে একটা দাম হাঁকান। ক্রেতারা তাঁদের বাজেট ও পছন্দ অনুযায়ী সেটা কিনে থাকেন।

কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে তরমুজ, কাঁঠালের মতো এখন ওজনে মেপে বিক্রি হচ্ছে জীবন্ত গরু। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোরবানি ঈদের গরু-ছাগল ওজনে বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে।

বেশ কয়েকটি খামারে গিয়ে দেখা গেছে, ওজন মাপার ডিজিটাল স্কেল বসানো হয়েছে। এসব স্কেলের এক পাশ দিয়ে গবাদিপশু প্রবেশ করিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এতে স্কেলে ওই পশুটির ওজন পরিমাপ হয়ে যায়। এরপর আরেক পাশ দিয়ে পশুকে বের করা হয়।

জানা গেছে, ছোট সাইজের গরু কেজিপ্রতি ৩২০-৩৬০ টাকা দরে আর বড় গরু ৪০০-৪৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন খামারিরা। এই ওজনের মধ্যে রয়েছে পশুর শিং, চামড়া, ক্ষুর, হাড়,মাংস ও নারি ভূরি সবই। এভাবে পশুর সর্বমোট কেজির সংখ্যা ও তার দাম বেরিয়ে আসে স্কেলে। ক্রেতারা সন্তুষ্ট হয়ে চুক্তিমতো সেই দামটাই দিয়ে পশু কিনে আনেন।

প্রশ্ন উঠেছে— এভাবে জীবন্ত গরু-ছাগল ওজন করে বিক্রি করা শরিয়তের দৃষ্টিতে কতটা বৈধ? বা অবৈধ কিনা!

এ বিষয়ে ফিকহে হানাফির পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে যদিও জীবন্ত পশু ওজন করে বিক্রিকে নাজায়েজ বলা হয়েছে; কিন্তু পরবর্তী সময় হাঁস-মুরগি ওজন করে বিক্রির প্রচলনের কারণে মুফতিয়ানে কেরাম একে জায়েজ বলে ফতোয়া দিয়েছেন।

আর বর্তমানে জীবন্ত গরু-ছাগলও ওজন করে বিক্রির প্রচলন হয়ে গেছে, বিধায় তাও জায়েজ হবে। উপরন্তু এ পদ্ধতিতে ক্রেতা-বিক্রেতার ধোঁকাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

ওজনে বিক্রির পদ্ধতিটি পশুর মূল্য নির্ধারণের একটি প্রক্রিয়া মাত্র। আগেকার কিতাবসমূহে ওই পদ্ধতিতে পশু বিক্রি নাজায়েজ বলার একটি কারণ এও ছিল যে, চুক্তির সময় পশুর নিশ্চিত চূড়ান্ত মূল্য কারওই জানা থাকে না।

কিন্তু চুক্তির মজলিসেই যখন স্কেল দিয়ে মেপে তার সঠিক পরিমাপ বের করা হয়, তখন তার পুরো মূল্যও উভয়পক্ষের জানা হয়ে যায়। আর এতে বিক্রেতার ও ক্রেতার মাঝে কোনোরূপ ঝগড়া সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা বাকি থাকে না।

ক্রেতা কোনো পশু দেখে পছন্দ করল, গরুটি কেজিপ্রতি কত টাকা দরে বিক্রি হবে তা নির্ধারণ করা হলো। এরপর লাইভ ওয়েট দেখার পর ক্রেতা-বিক্রেতার সম্মতিতে দাম নির্ধারণ করা হলো, তাহলে এই বেচাকেনা জায়েজ হবে।

কারণ এ ক্ষেত্রে ওজন হিসেবে গরু বা ছাগলটির গোশত ক্রয়-বিক্রয় করা হয়নি বরং এটার মূল্য অনুমান করার জন্য গরুটি ওজন করা হয়েছে এবং ক্রেতা গরুটি চেখে দেখেও ওই দামে কিনতে সম্মত হয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের বিখ্যাত ফতোয়া গবেষণা প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া বিন্নুরি টাউনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘আজকাল বিভিন্ন জায়গায় ওজন করে পশু বেচাকেনার প্রচলন দেখা যায়। এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় সাধারণত ভোক্তাদের মধ্যে ঝগড়ার কারণ হয় না।

অতএব, এভাবে কেনা-বেচায় কোনো অসুবিধা নেই। তবে শর্ত হলো, বেচাকেনা পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে হতে হবে। পাশাপাশি টাকা পয়সা বা গোশত ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে বিনিময় প্রদান করবে। (অর্থাৎ, জীবিত গরুকে গোশতের বিনিময়ে বিক্রয় করা যাবে না। ) ওজন করে কেনা পশু দিয়ে কোরবানি আদায় করলে কোরবানি হয়ে যাবে। তবে শর্ত হলো, ওজন করে কেনার সময় গোশত পাওয়াটাই একমাত্র উদ্দেশ্য না হতে হবে। বরং মুখ্য হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। ’ (ফতোয়া নং: ১৪৪৩১০১০০৫১৮)

সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ বিন বাজ (রহ.) বলেন, ‘যেসব প্রাণীর বেচাকেনা বৈধ যেমন—গরু, ছাগল, উট, মহিষ, দুম্বা, ভেড়া—এসব ওজন করে বেচাকেনা করলে শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো অসুবিধা আছে বলে মনে করি না। কেননা, আল্লাহ তাআলা ব্যাপকভাবে ব্যবসাকে হালাল বলেছেন এবং সুদকে হারাম সাব্যস্ত করেছেন। এ ছাড়া এখানে পণ্যে ও মূল্যে কোনো অস্পষ্টতা বা ধোঁকার বিষয় নেই। ’ (ফাতাওয়াল বুয়ু ফিল ইসলাম, পৃ: ৪০)