আজ সোমবার (৫ আগস্ট)। বাঙালি জাতির স্মরণীয় একটি দিন। টানা ১৫ বছর পর পরাজয় হলো ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। কোটা আন্দোলনের জেরে দেশ ছাড়তে বাধ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। এএফপির খবরে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা গণভবন থেকে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন।
সরকারের পদত্যাগের দাবিতে চলমান অসহযোগ আন্দোলন সফল করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লং মার্চ টু ঢাকা ছিল আজ সোমবার (৫ আগস্ট)। এর আগে দুইদিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গড়ে ওঠা এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পুরো জুলাই মাসজুড়ে চলে এই আন্দোলন। একপর্যায়ে সরকার কোটা সংস্কার করে। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার জেরে এক দফা দাবি উঠে শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আজ বেলা ১১টার পর থেকে ঢাকার পথে ঢল নামে মানুষের। কারফিউ উপেক্ষা বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে শুরু করেন তারা। এক পর্যায়ে শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখা পেশ করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আন্দোলন ঘিরে গ্রেফতার হওয়া সব বন্দীর মুক্তির দাবি জানিয়েছে তারা। সোমবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
ভারতের উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করেছেন শেখ হাসিনা। এরপর বিকেলে তিনি দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অবগত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
জানা গেছে, দ্রুত ভারত থেকে লন্ডন যাবেন শেখ হাসিনা। এর আগে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে গণভবন ছাড়েন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনার কথা জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর মন্ত্রিসভার অন্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা পদত্যাগ করেছেন বলে গণ্য হবে। এতে মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা দায়িত্ব চালিয়ে যেতে পারবেন বলেও সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হইবে, যদি- (ক) তিনি কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন।
অন্য মন্ত্রীদের পদের মেয়াদ নিয়ে সংবিধানের ৫৮ (৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করিলে বা স্বীয় পদে বহাল না থাকিলে মন্ত্রীদের প্রত্যেকে পদত্যাগ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে; তবে এই পরিচ্ছেদের বিধানাবলি-সাপেক্ষে তাহাদের উত্তরাধিকারীগণ কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাহারা স্ব স্ব পদে বহাল থাকিবেন। ‘মন্ত্রী’ বলিতে প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রী অন্তর্ভুক্ত।
গত বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামী লীগ। এরপর ১১ জানুয়ারি গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। ওই মন্ত্রিসভায় সদস্য ছিল প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ জন। পরে ১ মার্চ আরও সাতজন প্রতিমন্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। পাঁচ বছরের জন্য মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। তবে এ মন্ত্রিসভা প্রায় সাত মাসের মাথায় বিলুপ্ত হলো।
কোটা সংস্কার ও সরকার পতনের আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
সোমবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টুয়েন্টিফোরকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেল ‘জাবির ইন্টারন্যাশনালে’ অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এতে দগ্ধ হয়ে ছয়জন নিহত ও ২০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
শাহীন চাকলাদারের হোটেল ছাড়াও তার শহরের কাজীপাড়া কাঠালতলার বাসভবন, কাজীপাড়ায় যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের বাসা, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, শেখ রাসেলের ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
এসময় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কোনো সদস্যকে রাস্তায় দেখা যায়নি। ফোন করলেও কেউ ফোন ধরেননি। এছাড়া চাঁচড়ায় যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
সোমবার সন্ধ্যায় যশোরের ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাশেদ খান বলেন, অনেকদিন ধরে যশোরে আন্দোলন করে আসছি। যশোরে কোথাও সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। আজ আমাদের বিজয়ের দিনে এমন ঘটনা ঘটেছে, সেটি দুঃখজনক। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসব ঘটনা ঘটায়নি। যারা করেছে, তাদের রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে।
কিশোরগঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার বিকেলে শহরের খরমপট্টি এলাকায় বাসভবনে শত শত মানুষ প্রধান ফটক ভেঙে বাসায় ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
স্থানীয়রা জানায়, উত্তেজিত জনতা বাসার কিছু মালামাল বাইরে এনে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া বাসার বিভিন্ন মালামাল মানুষ হাতে হাতে করে নিয়ে যায়।
এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসা ভাঙচুর করা হয়। বাসাটি থেকে বিভিন্ন ধরনের মালামালও হাতে হাতে করে নিয়ে যায় সাধারণ মানুষ। এছাড়া ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের খরমপট্টি এলাকার বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে। হামলা হয়েছে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনের বাসভবন ও ব্যক্তিগত চেম্বারে। শহরের কালীবাড়ি মার্কেটে অবস্থিত সময় টেলিভিশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ অফিস, প্রেস ক্লাবে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় হামলা হয়েছে। এসব স্থাপনায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেছে উৎসুক ছাত্র-জনতা।
সোমবার বিকেল ৫টার দিকে হাজারো মানুষ এ ভাস্কর্য ভাঙচুর করে। এছাড়া একই সময় বিমানবন্দরের ভেতর আওয়ামী লীগের এক নেতার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
রাজধানীর গুলিস্তানে পুলিশ সদর দপ্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ভবনে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এসময় দুটি ভবনে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। সোমবার রাত পৌনে ৮টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ডিউটি অফিসার রোজিনা আক্তার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সদর দপ্তরের ভেতরে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পুলিশ সদর দপ্তরে আগুন দেওয়া হয়েছে।
এসময় তিনি সেনাবাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।
তবে এই মুহূর্তে পুলিশ দপ্তরে আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন উপস্থিত নেই বলে জানা গেছে।
রাজপথ থেকেই চূড়ান্ত বিজয় ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। সোমবার সন্ধ্যায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি-২৪ এ উপস্থিত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি অলি আহমদ। সোমবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান।
অলি আহমদ বলেন, হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা আজ পুনরায় স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ছাত্র-ছাত্রী এবং সাধারণ জনতার।
তিনি বলেন, আন্দোলনের সাফল্যের জন্য আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এখন আপনাদের সবাই ধৈর্যের সঙ্গে থাকতে হবে। দেশের সম্পদের কোনো ক্ষতিসাধন করা যাবে না।
এলডিপির সভাপতি বলেন, এখন একটি সুন্দর জাতীয় সরকার গঠন সময়ের দাবি। এই সরকারে কোনো অদক্ষ, দুর্নীতিবাজ, দাগি, নীতি-নৈতিকতাহীন, দেশদ্রোহী, অবৈধ সরকারের সুবিধাভোগী কাউকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।
তিনি বলেন, স্বৈরশাসককে পদত্যাগে বাধ্য করতে গিয়ে যেসব ছেলে-মেয়ে/ভাই-বোন শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, তাদের এবং তাদের পরিবারের পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে গেছেন শেখ হাসিনা। সেখান থেকে তার লন্ডন যাওয়ার কথা রয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার মা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না।
জয় বলেছেন, শেখ হাসিনা এতটাই হতাশ যে তার কঠোর পরিশ্রম করার পরও কিছু লোক তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছেন।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসকে জয় বলেন, গতকাল থেকেই তার মা পদত্যাগের কথা চিন্তা করছিলেন। তিনি দেশ ছেড়েছেন তার নিরাপত্তার জন্য।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। সোমবার একটি মিনিবাসে বঙ্গভবনে যান তারা।
বঙ্গভবনে আরও যারা গেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির মির্জা আব্বাস, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু, জাপা নেতা আনিসুল হক, হেফাজত নেতা মামুনুল ইসলাম, মাহাবুবুর রহমান, মুফতি মনির কাসেমী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, জাকের পার্টির শামিম হায়দার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করিম, জামায়াতে ইসলামীর শেখ মো. মাসুদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা জালাল উদ্দীন আহমদ, মেজর জেনারেল ফজলে রাব্বি (অব.) এবং আশরাফুল আলম।
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শিগগিরই ছাত্র–শিক্ষক প্রতিনিধির সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসবেন। সোমবার সন্ধ্যায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম ছয় ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকবে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর গণভবনে ঢুকে পড়েন অসংখ্য মানুষ। গণভবন থেকে গরু, মাছ, হাঁস, মুরগি, আসবাবপত্র, ফ্রিজ, এসিসহ নানা পণ্য নিয়ে যেতে দেখা গেছে মানুষকে। এদিকে সংসদ ভবনে জনতার স্রোত লক্ষ্য করা গেছে। সংসদ ভবনের ভেতর থেকে মানুষকে জিনিসপত্র নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
রাজধানীর ধানমণ্ডির সুধা সদনে বিকেলে ভাঙচুর করে আগুন দেন বিক্ষোভকারীরা। বাড়ি থেকে জিনিসপত্র বের করে যে যার মতো নিয়ে চলে যান।
প্রধান বিচারপতি বাসভবনে ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারীরা। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বেশ কিছু মানুষ দেয়াল টপকে রাজধানীর ১৯ হেয়ার রোডে অবস্থিত প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ঢুকে পড়েন। তখন নিরাপত্তা রক্ষী ছিলেন না। বাসভবন ভাঙচুরের পাশাপাশি বাসভবনে থাকা বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যান লোকজন। এর কিছুক্ষণ আগে প্রধান বিচারপতি বাসভবন থেকে বের হন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দেশ ছাড়েন। সোমবার এমন খবর জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
বিবিসির খবর, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। বিবিসির স্থানীয় প্রতিনিধির বরাতে এ খবর দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বিবিসি জানিয়েছে, শেখ হাসিনা ‘নিরাপদ আশ্রয়ের’ জন্য দেশ ছেড়েছেন। সঙ্গে শেখ রেহানাও আছেন।
দেশবাসীকে শান্ত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার এক বার্তায় তিনি বলেন, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে আজকের বৈঠক সুন্দর হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছেন আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানানোর জন্য।
বিকেলে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভকারীরা নানা স্লোগান দিচ্ছিল।
ধানমণ্ডির ৩/এ–তে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার কার্যালয়ে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা। বিকেল ৪টার দিকে আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে আগুন দেন বিক্ষোভকারীরা।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ধানমণ্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করেন আন্দোলনকারীরা। বাড়ির ভেতর থেকে ধোয়াও বের হতে দেখা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সোমবার সেনাপ্রধান বলেন, এখন রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল চলছে। একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। সব হত্যার বিচার হবে। সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখেন। আমরা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি।
জনগণের উদ্দেশে সেনাপ্রধান বলেন, ‘দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখেন। আপনারা আমার ওপর আস্থা রাখেন, একসাথে কাজ করি। দয়া করে সাহায্য করেন। মারামারি সংঘাত করে আর কিছু পাব না। সংঘাত থেকে বিরত হোন। সবাই মিলে সুন্দর দেশ গড়েছি।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে ওনার সঙ্গে কথা বলব। তাঁর সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করা হবে।’
কোন কোন রাজনৈতিক দল সঙ্গে বৈঠক করেছেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, ‘বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের ইসলামীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। শিক্ষক আসিফ নজরুল ও জোনায়েদ সাকিও বৈঠকে ছিলেন। তিনি বলেন, ছাত্রদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি। ছাত্ররা শিক্ষক আসিফ নজরুলকে শ্রদ্ধা করেন। তাকে অনুরোধ করেছেন যোগাযোগ করতে। ইতিমধ্যে আসিফ নজরুল একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন।
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, আমরা এখন বঙ্গবভনে যাব। সেখানে অন্তবর্তী সরকার গঠনের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হবে। তিনি ছাত্রদের শান্ত হওয়ার পরামর্শ দেন।
সমস্ত হত্যা ও অন্যায়ের বিচার হবে উল্লেখ করে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আপনারা সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখেন। আমরা সমস্ত দায়দায়িত্ব নিচ্ছি। আপনাদের কথা দিচ্ছি, আশাহত হবেন না। যত দাবি আছে, সেগুলো আমরা পূরণ করব। দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিয়ে আসব। আমাদের সহযোগিতা করেন। প্রতিটি হত্যার বিচার হবে।’
ভাঙচুর, হত্যা, সংঘর্ষ ও মারামারি থেকে জনগণকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আপনারা যদি কথামতো চলেন, একসঙ্গে কাজ করি। নিঃসন্দেহে সুন্দর পরিণতির দিকে অগ্রসর হতে পারব। মারামারি ও সংঘাত করে আর কিছু পাব না। তাই দয়া করে ধ্বংসযজ্ঞ, অরাজকতা ও সংঘর্ষ থেকে বিরত হন। সবাই মিলে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হব।’
গণভবনে ঢুকে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। তারা গণভবনের মাঠে উল্লাস প্রকাশ করেন। এ সময় অনেকের হাতে গণভবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস দেখা যায়।
আজ সোমবার দুপুর আড়াইটায় একটি সামরিক হেলিকপ্টার শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাত্রা করে। এ সময় তার সঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহানা ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তারা হেলিকপ্টারে ভারতের উদ্দেশে রওনা হন।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা গণভবন থেকে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। শেখ হাসিনা যাওয়ার আগে একটি ভাষণ রেকর্ড করে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি সে সুযোগ পাননি।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সেনা সদর দপ্তরে বৈঠক করেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বৈঠকে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
একদিন বন্ধ থাকার পর সোমবার দুপুর ২টার পরে মোবাইল ইন্টারনেট চালু হয়েছে। এর আগে সোমবার সকালে কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হয়।
দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর উত্তরা থেকে বনানীর দিকে যান আন্দোলনকারীদের একটি দল। শিক্ষার্থী–অভিভাবক ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মিছিলে অংশ নেন।
সোমবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হয়। তবে মোবাইল ইন্টারনেট চালু হয়নি।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আজ সোমবার দুপুর ২টায় জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সে সময় পর্যন্ত জনসাধারণকে সহিংসতা পরিহার করে ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ জানায় আইএসপিআর।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মেরুল বাড্ডায় মূল সড়কে অবস্থান নিয়ে নানা ধরনের স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। রামপুরা ব্রিজের কাছ থেকে পুলিশ এসে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। তখন বিক্ষোভকারীরা গলির ভেতরে ঢুকে যায়।
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সোমবার সেনাপ্রধান বলেন, এখন রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল চলছে। একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। সব হত্যার বিচার হবে। সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখেন। আমরা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি।
জনগণের উদ্দেশে সেনাপ্রধান বলেন, ‘দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখেন। আপনারা আমার ওপর আস্থা রাখেন, একসাথে কাজ করি। দয়া করে সাহায্য করেন। মারামারি সংঘাত করে আর কিছু পাব না। সংঘাত থেকে বিরত হোন। সবাই মিলে সুন্দর দেশ গড়েছি।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে ওনার সঙ্গে কথা বলব। তাঁর সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করা হবে।’
কোন কোন রাজনৈতিক দল সঙ্গে বৈঠক করেছেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, ‘বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের ইসলামীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। শিক্ষক আসিফ নজরুল ও জোনায়েদ সাকিও বৈঠকে ছিলেন। তিনি বলেন, ছাত্রদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি। ছাত্ররা শিক্ষক আসিফ নজরুলকে শ্রদ্ধা করেন। তাকে অনুরোধ করেছেন যোগাযোগ করতে। ইতিমধ্যে আসিফ নজরুল একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন।
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, আমরা এখন বঙ্গবভনে যাব। সেখানে অন্তবর্তী সরকার গঠনের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হবে। তিনি ছাত্রদের শান্ত হওয়ার পরামর্শ দেন।
সমস্ত হত্যা ও অন্যায়ের বিচার হবে উল্লেখ করে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আপনারা সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখেন। আমরা সমস্ত দায়দায়িত্ব নিচ্ছি। আপনাদের কথা দিচ্ছি, আশাহত হবেন না। যত দাবি আছে, সেগুলো আমরা পূরণ করব। দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিয়ে আসব। আমাদের সহযোগিতা করেন। প্রতিটি হত্যার বিচার হবে।’
ভাঙচুর, হত্যা, সংঘর্ষ ও মারামারি থেকে জনগণকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আপনারা যদি কথামতো চলেন, একসঙ্গে কাজ করি। নিঃসন্দেহে সুন্দর পরিণতির দিকে অগ্রসর হতে পারব। মারামারি ও সংঘাত করে আর কিছু পাব না। তাই দয়া করে ধ্বংসযজ্ঞ, অরাজকতা ও সংঘর্ষ থেকে বিরত হন। সবাই মিলে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হব।’
সকাল ১১টার পর ঢাকার উত্তরায় বিএনএস সেন্টারের সামনে হাজারো আন্দোলনকারী রাস্তায় অবস্থান নেন।
ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় হাজারো মানুষ রাস্তায় অবস্থান নেন। যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় অবস্থান নেয় পুলিশ। সাঁজোয়া যানসহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেখা গেছে সেখানে। বেলা ১১টায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।
সরকারের নির্দেশে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইন্টারনেট টোটাল শাটডাউন করা হয়। এর আগে সাত দিনের মাথায় গতকাল রোববার ফোর-জি নেটওয়ার্ক বন্ধ করা হয়।
সকাল ১০টার আগে ও পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও জনতা। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলি করে তাদের সরিয়ে দেন।
সকাল ১০টার পর থেকে কারফিউ ভঙ্গ করে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় নেমে আসে ছাত্র-জনতা।
সকাল থেকে চলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ও সরকারের ডাকা অনির্দিষ্টকালের কারফিউ। রোববার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ এক বিবৃতিতে আজই সারা দেশের ছাত্র-জনতাকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করার আহ্বান জানান।
একইসঙ্গে তিনদিনের (৫, ৬ ও ৭ আগস্ট) সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এ অবস্থায় সকাল থেকে রাজধানীর সড়কগুলো ছিল ফাঁকা। মূল সড়কে মানুষের চলাচল ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।