চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এক দফার দাবিতে লাগাতার কর্মসূচিতে যাওয়ার চিন্তা করছে বিএনপি। ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আগামী অক্টোবরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। এর আগেই এক দফার দাবি নিয়ে একটি যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছতে চায় বিএনপি।
এই কর্মসূচি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্ব পরাশক্তিগুলোর দৃষ্টিভঙ্গিকেও বিবেচনায় রাখছে এ দল।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই কর্মসূচি ও কর্মপন্থা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এরপর বন্ধু দলগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে বিএনপি নতুন কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকের প্রেক্ষাপট
গত জুলাইয়ে বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো আন্দোলন বেগবান করে তুলতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে প্রাথমিকভাবে আলোড়ন তুললেও শেষ পর্যন্ত সরকারকে চাপে ফেলতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে দলের সাধারণ স্তরে একধরনের হতাশাও দেখা দেয়। এমন প্রেক্ষাপটে গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে বিএনপির সিনিয়র নেতারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই আন্দোলনকে সফল করে তোলার বিষয়ে আলোচনা করেন দলটির নেতারা। এ আলোচনার মধ্য দিয়ে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে লাগাতার কর্মসূচি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব কর্মসূচির আলোচনায় আদালত, সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের মতো পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ও উঠে আসে। তবে কোনো অবস্থাতেই হঠকারী কোনো কর্মসূচি না নেওয়ার মতামত দেন বৈঠকে অংশগ্রহণকারী নেতারা।
এ ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা আন্দোলনের মধ্যেই আছি। একের পর এক কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
সম্ভাব্য কর্মসূচি যেমন হতে পারে
বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে তারা আদালতকেন্দ্রিক কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নিতে পারেন। কেননা সরকার আদালতকে ব্যবহার করে এরই মধ্যে পুরোনো মামলায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিচারকাজ শুরু করেছে। দলটির কেন্দ্রীয় নেতা আমান উল্লাহ আমানকে গতকাল রবিবার এক মামলায় সাজা দিয়ে জেলেও পাঠানো হয়েছে। এর আগে জেলে গিয়েছেন তার স্ত্রী সাবেরা আমানও। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং এলডিপি নেতা ড. রেদোয়ান আহমদকেও এরই মধ্যে সাজা দেওয়া হয়েছে। মির্জা ফখরুলসহ আরও কয়েকজন নেতার বিচারকাজ শুরু হয়েছে। কয়েক দিন আগে বিএনপি মহাসচিব এ বিষয় উল্লেখ করে আশঙ্কা প্রকাশ করেন, আর এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে আমানের মতো তাকেও কারাগারে যেতে হবে।
এ ব্যাপারে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানান, তারা যৌথ আন্দোলনের এ পর্যায়ে আদালতকেন্দ্রিক কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা করছেন। অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচির বিষয়ও সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় আছে। তারা চাইছেন ছাত্র-যুব ও শ্রমিকদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে এবং তাদের মধ্য থেকেই কর্মসূচি তুলে আনতে। তিনি বলেন, এরপর ২০ সেপ্টেম্বরের পর থেকে লাগাতার এ কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা রয়েছে। বিএনপির সঙ্গে শিগগিরই এসব নিয়ে বৈঠক হবে। এ ব্যাপারে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও কর্মসূচি প্রণয়ন-সংক্রান্ত লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, “আমরা আন্দোলনে আছি। আন্দোলনে ‘স্টিম’ কখন আসে, তা তো বলা যায় না। এখন যে কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে, তা বাস্তবায়নের কোনো এক পর্যায়ে হয়তো আন্দোলন বেগবান হয়ে উঠবে।” আজ সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘আমরা বন্ধু সংগঠনগুলোর সঙ্গে দ্রুতই বসব। তাদের পরামর্শ নিয়ে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।’ এদিকে মিত্র দলগুলো চাইছে, লাগাতার কর্মসূচি যেন সাত থেকে দশ দিনের বেশি না হয়।
সূত্র জানায়, ১৫ সেপ্টেম্বর মামলা-সাজার প্রতিবাদে ঢাকায় সমাবেশ করবে বিএনপি। আর ১৬ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে তারুণ্যের রোডমার্চ করবে তারা।
আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিও বিবেচনায় নিচ্ছে বিএনপি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, বিভিন্ন পরাশক্তির তৎপরতাও ততই বাড়ছে এই ভূখণ্ড ঘিরে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং রাশিয়ার তৎপরতাও এ ক্ষেত্রে দেখার মতো। নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। ফ্রান্সের এমানুয়েল মাখোঁও বর্তমানে এখানে অবস্থান করছেন।
এসব দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির মিত্র দল জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার জানান, এক দফা দাবি আদায়ে চূড়ান্ত কর্মসূচি তো নিতে হবে। তবে আন্তর্জাতিক সিচুয়েশনটাও দেখা হচ্ছে। দেখেশুনে কর্মসূচি নেওয়া হবে।
সৌজন্যে: দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ