দেশে তাপপ্রবাহ সাধারণত মে এবং জুন মাসে বাড়ে। কিন্তু এবার এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই ঢাকা-সহ দেশের মোট চারটি বিভাগের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়েই মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়েছে। আর এই কয়েকদিনে তাপপ্রবাহের কারণে সতর্কবার্তা বা ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বিবিসি চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে একটি বিশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করে বাংলাদেশের আবহাওয়া নিয়ে। সেখানে আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন, এ বছরের তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তিকাল বিগত বছরগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। বিবিসিকে বলেন আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, “বিদ্যমান তাপপ্রবাহের কারণে বাতাসে এখন জলীয় বাষ্পের আধিক্য থাকবে। এতে করে মানুষের শরীরে অস্বস্তিবোধ বৃদ্ধি হতে পারে,”।
তিনি মনে করেন. আগামীতে তাপমাত্রা ছাড়াতে পারে ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কেন এবছর বেশি তাপপ্রবাহ বইতে পারে এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক মনে করেন,বাংলাদেশের একদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যের অবস্থান। কিন্তু এইসব প্রদেশের তাপমাত্রা অনেক বেশি। এসব জায়গায় বছরের এই সময়ে তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাঝে ওঠানামা করে। ড. মল্লিক বলেন যে গত বছর ভারতের ওইসব অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
“যেহেতু ওগুলো উত্তপ্ত অঞ্চল, তাই ওখানকার গরম বাতাস চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং তা আমাদের তাপমাত্রাকে গরম করে দেয়।”
এই আন্তঃমহাদেশীয় বাতাসের চলাচল ও স্থানীয় পর্যায়েও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে দেশব্যাপী এবছর তাপপ্রবাহ তুলনামূলক বেশি থাকতে পারে বলে মনে করছেন ড. মল্লিক।
“বিগত বছরের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে এটা প্রতীয়মান হচ্ছে যে ২০২৪ সাল উত্তপ্ত বছর হিসেবে যাবে। আমরা এ বছর তাপপ্রবাহের দিন এবং হার বেশি পেতে যাচ্ছি”, বলেন তিনি।
তিনি মনে করেন, এর কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। বাংলাদেশের তাপমাত্রার উর্ধ্বগতিতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ছোঁয়া লেগেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোর ক্ষেত্রে ২০১৪, ২০১৬, ২০১৯, ২০২২ ও ২০২৩ সাল ছিল উত্তপ্ত বছর। কিন্তু এগুলোর মাঝে ২০২৩ সালের কথা আলাদাভাবে উল্লেখযোগ্য।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেন, গত বছর চরম তাপপ্রবাহ ছিল। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সারা দেশে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় জুড়ে তাপপ্রবাহ ছিল। শুধু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে না, সারা বিশ্বেই ২০২৩ সাল উষ্ণতম বছর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। এরকম পরিস্থিতি এবারও হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মি. মল্লিক বলেন, ২০২৩ সালে তাপপ্রবাহকে ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি’ তাপপ্রবাহ বলে। গতবছর বাংলাদেশে একটানা ২০ থেকে ২৩ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। এবছর এপ্রিল চলছে। আরও দুইমাস বাকি। ফলে তাপপ্রবাহ আরও বাড়ার সম্ভাবনাই রয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ জিনাত নিশান বলেন, যেভাবে সারাদেশে বৃক্ষ নিধন হচ্ছে, নদীভরাট হচ্ছে তাতে জলবায়ুর ক্ষতি হচ্ছে। স্বাভাবিক চরিত্র জলবায়ু হারাচ্ছে।