বিজনেস ডেস্ক:
এনজিও বা বেসরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা বা আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে ফাণ্ড সংগ্রহ। এ সংক্রান্ত সঠিক ধারণা থাকলে ফাণ্ড সংগ্রহ খুবই সহজ একটি কাজ। কারণ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা এনজিওগুলোকে ফান্ড দেয়। কিন্তু এ বিষয়ে ধারণা না থাকলে ফাণ্ড করা যেমন কঠিন, এনজিও কার্যক্রম পরিচালনাও খুব দুরূহ হয়ে পড়ে।
এই আর্টিকেলে আমরা ক্ষুদ্র এনজিওগুলোর ফান্ড সংগ্রহের পাঁচটি উপায় সম্পর্কে বর্ণনা করব।
১. নতুন ওয়েবসাইট খুলুন, যা মুঠোফোন অপ্টিমাইজড:
দেশের নামকরা ভালো এনজিওগুলোর সাধারণত নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকে। কখনো আবার দেখা যায়, কোনো ক্ষুদ্র এনজিও বেশ ভালো,গোছানো,রেস্পন্সিভ কিন্তু নিজেদের ওয়েবসাইট নেই; থাকলেও আপডেটেড না কিংবা ওয়েবসাইটগুলো কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম দ্বারা তৈরি করা হয় না, সেক্ষেত্রে যোগাযোগব্যবস্থায় বেশ ঝামেলা পোহাতে হয় তাদের। আর কার্যকরীভাবে তহবিল সংগ্রহ করতে হলে একটি ক্ষুদ্র এনজিও’র নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকা আবশ্যক, যা তাদেরকে একটি ভালো ইম্প্রেশন এনে দেয়।
Wix, Weebly বা Squarespace এর মতো টুলগুলো একটি ক্ষুদ্র এনজিও’র ওয়েবসাইটকে আধুনিকভাবে উপস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং ওয়েবসাইটকে মুঠোফোনে সহজতরভাবে ব্যবহার উপযোগী করে তোলে এবং আপডেট করতে সাহায্য করে।
ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন না করালে প্রতি মাসে সাধারণত ৮ ডলারের মতো খরচ পরতে পারে (ওয়েবসাইটের টেম্পলেট এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমসহ)। আপনি চাইলে ওয়েবসাইটের সিএমএস হিসেবে wordPress.org ব্যবহার করতে পারেন এবং মুঠোফোন-অপ্টিমাইজড ওয়েবসাইট ব্যবহারের জন্যে বিনামূল্যে বা কম-খরচের থিম নির্বাচন করতে পারেন। সেটা করতে হলে আপনাকে ওয়েব-হোস্টিংয়ের প্রয়োজন হবে যেমন; bluehost.com।
এছাড়া এতে যদি আপনি কোনো প্রতিবন্ধকতা অনুভব করেন, তবে WordPress.com থেকেও বিনামূল্যে ব্লগ ওয়েবসাইট খুলতে পারেন, যা আপনাকে অগণিত সহজতর মোবাইল উপযোগী টেম্পলেট দিবে। যদি আপনি WordPress.com এ থাকতে চান, তবে একটি. org ওয়েবসাইট ইউআরএল ক্রয় করতে হবে এবং তা WordPress.com এ প্রেরণ করতে হবে।
সবশেষে, যদি আপনার মনে হয়, এই ওয়েবসাইটটিকে সাজাতে কাস্টম গ্রাফিক্স প্রয়োজন বা নিজস্ব একটি লোগো লাগবে এবং সেমুহূর্তে আপনার কাছে যথেষ্ট অর্থ নেই একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার ভাড়া করার বা আপনার নিজেরও যথেষ্ট সামর্থ্য বা জ্ঞান নেই সেটা নিজে নিজে করা, সেক্ষেত্রে আপনি আপনার আশেপাশের কোনো ইউনিভারসিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে ভাড়া করতে পারেন যিনি ডিজাইনে বা এই রিলেটেড কোনো সাব্জেক্টে পড়ালেখা করছে।
তাকে বলতে পারেন, আপনি এই কাজের বিনিময়ে তার কাজকে ভালোভাবে উপস্থাপন করবেন এবং আপনার ফেসবুক বা সামাজিক অন্যান্য মাধ্যমে তার ছবি পোস্ট করতে পারেন; তাকে ভলান্টিয়ার বা কন্ট্রিবিউটর হিসেবে ট্যাগলাইন দিয়ে এবং সেটি আপনি Idealist.org, CraigstList বা লিংকডইনের গ্রুপে শেয়ার করতে পারেন।
২. ই-নিউজলেটার শুরু করুন:
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ই-নিউজলেটারগুলি উন্নত দেশগুলিতে অনলাইন তহবিল-সংগ্রহের পিছনে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। যদি ক্ষুদ্র এনজিওগুলো সময় এবং অর্থকে মাসিক অন্তত দুইবার ই-নিউজলেটার প্রকাশ করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে থাকে, তবে সেটা তহবিল সংগ্রহে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
ওয়েবভিত্তিক ই-মেইল সার্ভিস যেমন- iContact, Constant Contact, MailChimp এর বদৌলতে ই-নিউজলেটারের গ্রহণযোগ্যতা আরো বেড়ে গেছে এবং ৫০০ বা তার কম জন ইমেইল সাবস্ক্রাইবারে নূন্যতম ১৫ ডলার খরচ হতে পারে মাসিক। কিছু ক্ষুদ্র এনজিওর জন্য এটি আর্থিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, যদিও এটি একটি বিনিয়োগ সুশৃঙ্খলব্যবস্থা (বিশেষত যদি আপনার উন্নত দেশগুলির দাতব্য সংস্থাগুলোর দাতা-অর্জনের লক্ষ্য হয়)।
যদি তহবিল সীমিত হয়, তাহলে আপ্নারা একটি বড় দাতাসংস্থাকে অফার করতে পারেন যে, তারা তাদের ব্যবসা বা পরিষেবা প্রচারের বিনিময়ে একটি বছরের জন্য আপনার ই-নিউজলেটার স্পন্সর করবে কিনা। এক্ষেত্রে যদি কোনো সংস্থাকে রাজি করানো যায়, তবে লাভ কিন্তু আপনার-ই হচ্ছে।
৩. অনলাইনে ফান্ড গ্রহণ:
অনলাইনে ফান্ড গ্রহণ করা অনেকগুলো ক্ষেত্রে বেশি ঝামেলাপূর্ণ ও জটিল হতে পারে। নিয়মাবলিগুলি একেক দেশে একেক রকম। অনেক দেশের এনজিও কখনো অনলাইনে দাতব্য সাহায্য গ্রহণ করতে পারে না সীমিত আকারে অনলাইন ব্যাংকিং পরিকাঠামো ব্যবস্থা থাকায় এবং অনুমিত সন্ত্রাসী হুমকির আশংকা থাকায়।
যদি আপনার এনজিও’র পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট চালু করেন (যদিও সেটা সকলদেশে অনুমোদিত না),সেক্ষেত্রে অনলাইন ফান্ডগুলি গ্রহণ করতে পারবেন, যদিও আপনাকে বেশ ক্লান্তিকর এবং সময়সাপেক্ষিক অবস্থায় পড়তে হবে সেগুলো গ্রহণ করতে। এছাড়া Ammado.com রয়েছে, যেটির মাধ্যমে অনলাইন ফান্ড গ্রহণ করা যায় প্রায় ৭৬ টি মুদ্রায়।
সবশেষে, আপনার এনজিও অনলাইন দান গ্রহণে প্রস্তুত হলে, আপনাদের ওয়েবসাইট ও সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ‘Donate Now’ ধরণের বাটন যুক্ত করুন এবং ডোনেট করতে কি কি প্রক্রিয়া রয়েছে, তা পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করতে আরেকটি ‘ডোনেট পেইজ খুলুন।
বিকল্পভাবে, যদি আপনার এনজিও উন্নত কোনো দেশের কোনো প্রখ্যাত সংস্থার সাথে দীর্ঘমেয়াদী দ্বিপক্ষীয় কোনো চুক্তি বা সম্পর্কে গিয়ে থাকেন, তবে তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও আপনি অনলাইনে ফান্ড গ্রহণ করতে পারেন।
৪. বড় এনজিওগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও অনুকরণ করুন:
বড় বড় এনজিওগুলির অনলাইন তহবিল সংগ্রহ ও সামাজিক মিডিয়ায় প্রচারাভিযানগুলি অধ্যয়ন করে অনেক কিছু শিখতে পারেন। তাদের ওয়েবসাইট এবং অনুদান পৃষ্ঠাগুলি বিশ্লেষণ করুন, তাদের ই নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন, এবং সামাজিক মিডিয়াতে তাদের অনুসরণ করুন; এতে অনেক না-জানা তথ্য জানতে পারবেন ও সেগুলো কাজে লাগাতে পারবেন।
৫. ফেসবুক পেজ খুলুন:
এখনকার যুগে সামাজিক মাধ্যমে এগিয়ে না থাকলে আপনি যে আপনার পায়ে কুড়াল মারছেন, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। আর এই ভুল-ই অনেক ছোট এনজিও করে থাকে। খুব সহজেই আপনি আপনার ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে আপনার এনজিও’র পেজ খুলতে পারবেন।
শুরু করে দিন আপনাদের সমসাময়িক ঘটে যাওয়া ইভেন্ট বা ঘটনা বা কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরা। চেষ্টা করুন ফেসবুকে প্রতিদিন নিত্যনতুন কন্টেন্ট পোস্ট করার মাধ্যমে পেজটিকে সচল রাখার, মডারেটর নির্বাচন করুন এক বা দুই জনকে, যারা প্রতিদিন একটিভ থেকে পেজটিকে নির্বাহ করবেন।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট, এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকাশনা।