বাবা মায়ের বিচ্ছেদের পরে বাবার হাত ধরে ঢাকায় আসে আফরিন। ঠিকানা হয় মিরপুরে সৎ মা আর বাবার সংসারে। ছয় বছর বয়সী আফরিনকে যে সেই সৎ মায়ের হাতেই জীবন দিতে সেটা বুঝতে পারেনি কেউ।
আফরিনরা থাকতো ঢাকার মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় একটি টিনশেড বাসায়।
গত ৬ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে নিজেদের বাসার পাশের বাড়ির একটি পানির ট্যাংক থেকে আফরিনকে তোলা হয়। পানি নিতে আসা এক প্রতিবেশী নারী ট্যাংকে শিশুর স্যান্ডেল ভেসে থাকতে দেখে সন্দেহ হলে সেখানে তল্লাশি চালিয়ে মেয়েটিকে ডুবন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমদিকেই আফরিনের সৎ মা ফুলি খাতুনের ওপর সন্দেহ করে। যদিও ফুলি খাতুনের বিরুদ্ধে স্পষ্ট কোনো তথ্য ছিলো না পুলিশের কাছে।
আফরিনের মৃত্যুর ঘটনায় একটা অপমৃত্যুর মামলা হয় সেদিনই। কিন্তু মেয়ে হারানোর বিষয়টি অপমৃত্যু ভাবতে নারাজ আফরিনের মা সোনিয়া খাতুন (২৫)। তিনি বড় মেয়েকে নিয়ে থাকতেন যশোরে। পরে গত ১২ জানুয়ারি রাজধানীর কাফরুল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন তিনি। দুই মামলারই তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন এসআই হোসনা আফরোজ।
মামলার পরপরই আফরিনের সৎ মা ফুলি খাতুনকে তার গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফুলি এই হত্যাকাণ্ডের কথা অকপটেই স্বীকার করেন জবানবন্দী দেন।
কেন হত্যা করলেন এই ছোট মেয়েটিকে?
যদিও আফরিনকে হত্যার কথা এর আগেই তার স্বামী মতিয়ার রহমানের কাছে স্বীকার করেন ফুলি। তিনি বলেন, তার ভুল হয়ে গেছে। পুলিশের কাছে ফুলি জানায়, ফুলির এক ফুফাতো ভাই তাদের বাসায় আসেন। কথাবার্তার একপর্যায়ে তাদের অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে ফেলে শিশু আফরিন। তখন সে ফুলি খাতুনকে বলে, বাবা এলে সব বলে দেবে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ফুলি ও সোহাগ। দুজনে বুদ্ধি করে মেয়েটিকে পানির ট্যাংকে ফেলে দেয়। সোহাগের পরামর্শে পাশের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আফরিনকে ট্যাংকে ফেলে দেন ফুলি খাতুন।
এসআই হোসনা আফরোজ গণমাধ্যমকে বলেন, মেয়েটিকে পানির ট্যাংকে ফেলে নিজের বাসায় চলে আসেন ফুলি খাতুন। কিছুক্ষণ পর তিনি আবার বেরিয়ে পাশের বাড়িতে গিয়ে লোকজনকে বলেন, আফরিনকে তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। আশপাশে মেয়েটিকে খুঁজতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে শারমিন নামের এক প্রতিবেশী নারী ওই ট্যাংক থেকে পানি তুলতে গিয়ে সেখানে শিশুর স্যান্ডেল ভেসে থাকতে দেখেন। এরপর ওই প্রতিবেশী ফুলি খাতুনসহ অন্যদের ডেকে আনেন। তখন তল্লাশি চালিয়ে ট্যাংকের ভেতর থেকে আফরিনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
[প্রিয় পাঠক, পাবলিক রিঅ্যাকশনের প্রায় প্রতিটি বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। আপনার অনুভূতির কথা আমাদের লিখে পাঠান। ছবিসহ মেইল করুন opinion2mail@gmail.com এই ঠিকানায়। যে কোনো খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। পাঠকের লেখা আমাদের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।]