পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক:
রংপুর জেলায় এক জমিতে বছরে চার ধরনের ফসল উৎপাদনে গুরুত্ব বাড়িয়েছে কৃষি বিভাগ। ইতোমধ্যে সফলতার মুখও দেখছেন তারা। এমন উদ্যোগে একই জমি থেকে বছরে চারবার ফসল উৎপাদন করতে পেরে কৃষকরাও বেশ খুশি।
বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে গঙ্গাচড়া উপজেলার গান্নারপাড় চতরা এলাকা ঘুরে একই জমিতে বছরে পর্যায়ক্রমে চার ফসল উৎপাদনে ব্যস্ত সময় কাটানো কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। সফলতার এই গল্প বুনতে কৃষি বিভাগের দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ মেনে চাষাবাদ করছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের গান্নারপাড় চতরা ব্রিজ দোলা ও খামারে ১৫ একর জমির জন্য কয়েকজন কৃষককে এক জমিতে বছরে চার ফসল উৎপাদনে পরামর্শ দেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বেলাল হোসেন। প্রথমে কৃষকদের কাছ থেকে তেমন সাড়া না মিললেও পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম লেবুর সহযোগিতায় ১৫ একর জমির কৃষকদের নিয়ে শুরু হয় ফসল চাষাবাদের কার্যক্রম।
শুরুতেই কৃষকদের বোরো মৌসুমের জন্য ধান বীজ নির্বাচন করে দেন কৃষি বিভাগ। বোরো মৌসুমে ব্রি-২৮ ধান চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে জমিতে রোপন করা হয়। কৃষি বিভাগের লোকজনের পরামর্শ অনুযায়ী সার ও কীটনাশক প্রয়োগের পাশাপাশি অন্যান্য যত্ন নেওয়ায় সঠিক সময়ে ধান কাটতে পেরেছেন কৃষকরা। এরপর ওই জমিতে আউশ মৌসুমে ব্রি-৪৮ ধান জুনের প্রথম সপ্তাহে রোপন করা হয়। দুই মাস পার হওয়ার আগেই আগস্টের শেষ সপ্তাহে ধান কাটা শেষে আমন মৌসুমের জন্য ব্রি- ৮৭ ধান রোপন করা হয়েছিল। চলতি মাসে ওই জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষকরা।
তিন দফায় ধান ঘরে তোলার পর এবার রবি মৌসুমে ওই জমিতেই বারি সরিষা, আলু, ভুট্টাসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ করছে কৃষকরা। সঠিকভাবে সার প্রয়োগসহ অন্যান্য যত্নের মাধ্যমে রোপনের সময় হতে ৭০ থেকে ১শ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হচ্ছে বলে মনে করছেন উপকারভোগী কৃষকরা।
কৃষক শফিকুল, নুর ইসলাম, রেয়াজুল ও আব্দুল কাদের বলেন, আগে আমরা দুইবার ধান চাষ করার পর আলু, ভুট্টাসহ অন্য ফসল রোপন করতাম। কিন্তু কৃষি বিভাগ ও ইউপি চেয়ারম্যানের উৎসাহ, পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায় এবার একই জমিতে তিনবার ধান চাষ করে তা ঘরে তুলতে পেরেছি। ফলনও আশানুরূপ ভালো হয়েছে। এছাড়া ধানের খড় বিক্রি করে মোটামুটি কিছুটা লাভবান হচ্ছি। এখন পছন্দমতো একই জমিতে কেউ ভুট্টা, আলু, সরিষা, মিষ্টি আলুসহ অন্যান্য জাতের ফসল রোপন করছে। আবহাওয়াজনিত কোনো সমস্যা না হলে চতুর্থ ধাপেও ভালো ফলন সম্ভব।
এদিকে সারা বছর এক জমি থেকে চার ধরনের ফসল উৎপাদনের এই প্রচেষ্টা কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। শুধু চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করা নয়, বরং কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি অনেক কৃষককে সরকারের প্রণোদনার বীজ ও সার দিয়ে সহায়তা করছে কৃষি বিভাগ।
গঙ্গাচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম লেবু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাড়ির আনাচে-কানাচেসহ পতিত জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি ও আবাদযোগ্য জমিতে পরিকল্পনা মাফিক চাষাবাদে গুরুত্বারোপ করেছেন। আমি মনে করি দেশের স্বার্থে কৃষিখাতকে আরও সমৃদ্ধ করতে আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত। আমি কৃষি বিভাগের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কৃষকদের পরামর্শ ও উৎসাহ প্রদান করে এই প্রচেষ্টাকে সফল করতে চেষ্টা করছি।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন, সরকারপ্রধান খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ গড়ার লক্ষ্যে কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন। সেগুলো মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য কৃষি বিভাগকে দিকনির্দেশনাসহ দায়িত্ব দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। জমিতে কখন কোন ফসল চাষ করলে ভালো উৎপাদন হবে, এক জমিতে কিভাবে ৩-৪ বার চাষ করা যাবে তা জানাচ্ছি। কৃষক সচেতন হলে এসব বাস্তবায়ন সম্ভব। আমি আমার দায়িত্বরত এলাকায় কয়েকজন কৃষক নিয়ে এক বছরে চার ফসল উৎপাদনের জন্য পরামর্শ দেই। প্রথমে তারা উৎসাহী না হলেও ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় সফল হয়েছি।
গঙ্গাচড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, সরকার কৃষি বিভাগের আওতায় কৃষকদের প্রণোদনা, প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। জমির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ ভালো ফসল ফলনে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে পরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ করে এখন এক জমিতে বছরে চার ফসল ফলানে সম্ভব হচ্ছে।