দেশের একমাত্র নারী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎকার

::
প্রকাশ: ২ years ago
দেশের একমাত্র নারী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সালমা রহমান

প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিমুক্ত রাখব, সুষম বণ্টনের মাধ্যমে উন্নয়নকাজ করব

পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক:
পিরোজপুরে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন সালমা রহমান। তিনি দেশের একমাত্র নারী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। তিনি পিরোজপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানের স্ত্রী এবং ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পিরোজপুরে প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনকারী ছাত্রলীগ নেতা ওমর ফারুকের বোন। রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে তাঁর যুক্ততা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে তাঁর সঙ্গে।

দেশের একমাত্র নারী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে আপনি নারীদের জন্য বিশেষ কী করবেন?

সালমা রহমান: আমি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার আগে জাতীয় মহিলা পরিষদের পিরোজপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে আসছি। সেখানে নির্যাতনের শিকার নারীদের নিয়ে আমরা কাজ করেছি। আমার ইচ্ছা আছে, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অসহায় নারী, বিশেষ করে বিধবা ও স্বামী যাঁদের ছেড়ে চলে গেছেন, তাঁদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেব। এ জন্য তাঁদের প্রশিক্ষণসহ আর্থিক সহায়তা দেব, যাতে তাঁরা নিজেরা ক্ষুদ্র ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

নারীদের স্বাবলম্বী করা বা নারী উদ্যোক্তা তৈরির ব্যাপারে জেলা পরিষদের তহবিল আছে কি?

সালমা রহমান: হ্যাঁ, জেলা পরিষদের উদ্যোগে নারীদের সেলাইয়ের প্রশিক্ষক দিয়ে তাঁদের সেলাই মেশিন বিতরণের প্রকল্প এর আগে পরিষদ নিয়েছিল। আমি প্রকল্পটি চালিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি আরও যাতে বেশি নারীকে সম্পৃক্ত করা যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগী হব। জেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিলের আয় থেকে প্রকল্প নেব। সেখানে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে আমি প্রয়োজনে নিজের টাকা দিয়ে কাজ শুরু করব।

নারীবান্ধব কর্মসূচির পাশাপাশি আপনি আর কী কী কাজ করতে চান?

সালমা রহমান: আমি আসলে চাইছি নারী-পুরুষের সমতা। তবে নারীরা যেহেতু পিছিয়ে আছেন, তাই তাঁদের দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে চাই। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে উন্নয়নমূলক কাজ করতে চাই। পিরোজপুর শহরের নাব্যতা হারানো খালগুলোয় পনিপ্রবাহ বাড়ানো এবং খালের দুই পাড় দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলার ইচ্ছা আছে।

পিরোজপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ আপনাকে বেছে নিল কেন?

সালমা রহমান: আমি রাজনৈতিক পরিবারের। আমার বড় ভাই শহীদ ওমর ফারুক পিরোজপুর মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। আমার বিয়ে হয় পিরোজপুরের একটি রাজনৈতিক পরিবারে। আমার শ্বশুর একরাম আলী খলিফা ৪০ বছর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। আমার স্বামীর বড় ভাই এ কে এম এ আউয়াল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি দুবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। আমার স্বামীর মেজ ভাই হাবিবুর রহমান চারবার পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র। আমার স্বামী মুজিবুর রহমান খালেক আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে উপজেলা পরিষদের পরপর দুবারের চেয়ারম্যান। আমি নিজে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। দলের দুঃসময়ে নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার পারিবারিক ঐতিহ্য ও আমার সামাজিক কাজগুলো মূল্যায়ন করে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী আপনার ওপর আস্থা রেখে দলের মনোনয়ন দিয়েছেন। আপনি চেয়ারম্যান হয়েছেন। এখন আপনি এই সুযোগ কীভাবে কাজে লাগাবেন?

সালমা রহমান: আমার কাজ হবে জেলা পরিষদকে দুর্নীতিমুক্ত রাখা। জনকল্যাণমূলক একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা। আমি সুষম বণ্টনের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কাজগুলো স্বচ্ছভাবে করতে চাই, যাতে সাধারণ মানুষ উন্নয়নের সুফল পান।

জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। পরে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। সে ক্ষেত্রে আপনি জেলা পরিষদ পরিচালনার ক্ষেত্রে যথাযথ সহযোগিতা পাবেন বলে মনে করেন?

সালমা রহমান: মহিউদ্দিন মহারাজ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার পর বলেছিলেন, ‘দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধা রেখে দল–সমর্থিত প্রার্থী শহীদ পরিবারের সন্তান সালমা রহমানের প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলাম।’ তাঁর এই বক্তব্যর পর আমি বিশ্বাস করি, তিনি আমাকে সহযোগিতা করবেন।

আপনার পরিবারের সদস্যরা উপজেলা ও পৌরসভার শীর্ষ পদে আছেন। এটা আপনার জন্য সুবিধা না চাপ হবে?

সালমা রহমান: আমি পরিবারের সহযোগিতা পেয়ে আজ এ পর্যন্ত এসেছি। আমার পরিবারের সদস্যরা উপজেলা ও পৌরসভার শীর্ষ পদে থাকা কোনো চাপ নয়; বরং তাঁদের কাছ থেকে সব সময় সহযোগিতা পাব বলে মনে করি।

 

কৃতজ্ঞতা: দৈনিক প্রথম আলো।