দুই ক্লাবের খেলোয়াড়-সমর্থকরা লিপ্ত হয় সংঘর্ষে
পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক:
একটা ফুটবল ম্যাচকে কেন্দ্র করে যখন ভেঙে যায় একটি দেশ; জন্ম নেয় একটি নতুন সত্তার, নতুন রাষ্ট্রের। ফুটবলকে যেখানে শুধু একটা খেলাই নয় বরং রাষ্ট্রীয়ভাবেই বিবেচনা করা হয় জাতীয় চেতনা হিসেবে। তবে তার পেছনেও আছে এক অনবদ্য উপাখ্যান।
সময়টা ১৯৯০, ১৩ মে। অস্তমিত সূর্যের মতোই ভাঙনের মুখে তৎকালীন যুগোস্লাভিয়া। যেদিন স্থানীয় লিগে ক্রোয়েশিয়ার ডায়নামো জাগরেবের মুখোমুখি হয়েছিল সার্বিয়ার রেড স্টার বেলগ্রেড। তবে ম্যাচ ছাপিয়ে দুই ক্লাবের খেলোয়াড়, সমর্থকরা লিপ্ত হয় সংঘর্ষে। ঘটনা ভিন্ন দিকে মোড় নেয় যুগোস্লাভীয় পুলিশ ক্রোয়াট সমর্থকদের ওপর চড়াও হলে।
সেই ঘটনার পর ভিন্ন রূপ পায় ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতার আন্দোলন। দাবানলের মতো যা ছড়িয়ে পরে সর্বত্র। ২৫ জুন নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ক্রোয়াটদের প্রথম প্রেসিডেন্ট ফ্রাঞ্জো তুদজম্যান।
এরপর ফুটবল আর ক্রোয়াট জাতীয়তাবোধ মিলেমিশে হয়ে গেছে একাকার। ভাবা যায় মোটে ২২ হাজার বর্গমাইলের একটি দেশ, যার জনসংখ্যা ৪০ লাখের কিছু বেশি, বিশ্ব ফুটবলে তাদের রাজত্বে বিপর্যস্ত পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলও।
অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের কোল ঘেষা বলকান অঞ্চলের এই দেশটি প্রথম বিশ্বকাপে অংশ নেয় ১৯৯৮ সালে। প্রথম আসরেই বাজিমাত, দাভোর সুকের ম্যাজিকে তারা হয় তৃতীয়। সুকের জেতেন গোল্ডেন বুট।
আরও পড়ুন: মসজিদে পশ্চিমাদের ভিড়
২০০২ থেকে ১৮ পর্যন্ত কিছুটা পাদপ্রদীপের নিচেই থাকে ক্রোয়েশিয়ার ফুটবল। ২০১০ সালে তারা কোয়ালিফাই-ই করতে পারেনি বিশ্বকাপে। কিন্তু পাশার দান পাল্টে যায় রাশিয়া বিশ্বকাপে।
মানজুকিচ, প্যারিসিচ, র্যাকিটিচ কিংবা সোনার ছেলে মদ্রিচে ভর করে ব্লেজাররা পায় সোনালি প্রজন্ম। সেবার বিশ্বকে চমকে দিয়ে ফাইনালে ওঠে ক্রোয়েশিয়া। তবে সন্তুষ্ট থাকতে হয় রানার্সআপ হয়েই।
এবারও চলছে ক্রোয়াটদের রূপকথার উপাখ্যান। বেলিয়াম, কানাডা, জাপান আর ব্রাজিলকে বিদায় করে দিয়ে এরই মধ্যে তারা জায়গা করে নিয়েছে সেরা চারে। সেমি ফাইনালে তারা খেলবে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে।
আসুন জানি ক্রোয়েশিয়া সর্ম্পকে
ক্রোয়েশিয়া নামের দেশটি সম্পর্কে এশিয়া মহাদেশের মানুষের তেমন কোনো ধারণা নেই। তাদের এমন কোনো ঐতিহ্য বা ইতিহাস নেই যা মানুষকে মনে রাখতে সহযোগিতা করবে। তবে এবারের রাশিয়ায় ফুটবল বিশ্বকাপে রীতিমতো রূপকথার গল্প রচনা করল ক্রোয়েশিয়া। অপ্রত্যাশিত হলেও সত্য, টুর্নামেন্টজুড়ে উপহার দিল নান্দনিক ফুটবল। লুকা মড্রিচ-ইভান রাকিটিচদের পায়ে ফুটল শৈল্পিক ফুল। যার বদৌলতে রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্রোয়াটরা। ফ্রান্সের বিপক্ষে শিরোপা জিতুক আর না জিতুক বিজয়মাল্য তাদের প্রাপ্য! কিন্তু এ দেশ সম্পর্কে কতটা জানেন আপনি? চলুন সে দেশ সম্পর্কে কিছুটা জেনে আসি।
ক্রোয়েশিয়ার ভূগোল
ক্রোয়েশিয়া ইউরোপ মহাদেশের একটি রাষ্ট্র। এর সরকারি নাম প্রজাতন্ত্রী ক্রোয়েশিয়া। এটির রাজধানী জাগরেব। ক্রোয়েশিয়া দক্ষিণপূর্ব ইউরোপের কেন্দ্রে অবস্থিত। এর উত্তর পূর্ব সীমান্তে হাঙ্গেরি, পূর্বে সার্বিয়া, দক্ষিণ পূর্বে বসনিয়া, হার্জেগোভিনা ও মন্টিনিগ্রো। এটি ৪২ ° এবং ৪৭ ° উত্তর ও ১৩ ° এবং ২০ ° পূর্ব অক্ষাংশে অবস্থিত। দেশটি দেখতে ফালি চাঁদের মত। কেন্দ্রীয় মহাদেশীয় ক্রোয়েশিয়া ও স্লাভোনিয়াতে সমভূমি, হ্রদ ও পাহাড় অবস্থিত। পশ্চিমে রয়েছে দিনারীয় আল্পস পর্বতমালার বৃক্ষ আচ্ছাদিত অংশ। আর রয়েছে আড্রিয়াটিক সাগরের পর্বতসঙ্কুল তটরেখা। এই উপকূলে আরও আছে প্রায় হাজার খানেকের মত বিভিন্ন আকৃতির দ্বীপ। এটি ৫৬.৫৯৪ বর্গ কিলোমিটার (২১,৮৫১ বর্গ মাইল) জুড়ে বিস্তৃত। এর মধ্যে ৫৬.৪১৪ বর্গ কিলোমিটার ভুমি (২১,৭৮২ বর্গ মাইল) এবং ১২৮ বর্গ কিলোমিটার জল ভাগ (৪৯ বর্গ মাইল) রয়েছে।
ক্রোয়েশিয়ার ইতিহাস
১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট হন তুদজম্যান। স্বাধীনতা ঘোষণা করে ১৯৯১ সালে যুদ্ধে জড়িয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। তখন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন, দেশের ক্রীড়াবিদরা হলেন দেশের রাষ্ট্রদূত। বলকান রাজনীতি ও ক্রীড়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ দারিও ব্রেনতিন বলেন, তুদজম্যানের স্পষ্ট দর্শন ছিল, ফুটবল ও ক্রীড়া একটি জাতির গড়ন ঠিক করে। ১৯৯৮ সালে যেদিন বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে উন্নীত হয় ক্রোয়েশিয়া, সেদিন প্রেসিডেন্ট একে স্রেফ ফুটবল দক্ষতা নয় বরং ‘ক্রোয়েশিয়ান চেতনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
ক্রোয়েশিয়ার জনসংখ্যা মাত্র ৪০ লাখ। ১৯৫০ সালে উরুগুয়ের বিশ্বকাপ জয়ের পর, এত কম জনসংখ্যার কোনো দেশ বিশ্বকাপ জেতেনি। কোনো ক্রীড়া পদক জয়ের অর্থনৈতিক প্রভাব কী হবে, তার হিসাব করাটা সহজ কাজ নয়। তবে এটা বলা যায় যে, ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপ জিতলে দেশটি বিশ্বজুড়ে যেই ইতিবাচক প্রচারণা পাবে, তা বছরের পর বছর ধরে চালানো জনসংযোগ প্রচারণার চেয়েও অনেক বেশি মূল্যবান হবে। ১২ জুলাই দেশের পুরো মন্ত্রীসভা যে ফুটবল দলের জার্সি গায়ে বৈঠক করলেন, সেটা তাই খুব বিস্ময়কর কোনো খবর নয়।
২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে ফুটবল গ্যালারিতে ক্রোয়েশিয়ার তখনকার প্রেসিডেন্ট কলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ। রাশিয়া বিশ্বকাপে তিনি বেশ আলোচিত ছিলেন।
ক্রোয়েশীয় ভাষা
‘হ্র্ভাৎস্কি য়েজ়িক্’ একটি দক্ষিণ স্লাভীয় ভাষা। এটি মূলত ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ক্রোয়াট সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে প্রচলিত। ভাষাবিজ্ঞানীরা অনেক সময় এটিকে বৃহত্তর সার্বো-ক্রোয়েশীয় ভাষার অন্তর্গত বলে গণ্য করেন।
ক্রোয়েশিয়ার রাজনীতি
ক্রোয়েশিয়ার রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোতে পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রী একটি বহুদলীয় ব্যবস্থাতে সরকার প্রধান। নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে এবং আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ক্রোয়েশীয় সংসদ বা সাবর-এর হাতে ন্যস্ত। বিচার ভাগ নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন বিভাগ হতে স্বাধীন। ক্রোয়েশিয়ার বর্তমান সংবিধান ১৯৯০ সালের ২২ ডিসেম্বর গৃহীত হয়। দেশটি ১৯৯১ সালের ২৫ জুন প্রাক্তন ইউগোস্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
ক্রোয়েশিয়া জাতীয় ফুটবল দল
স্বাধীন ক্রোয়েশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট ফ্রাঞ্জো তুদজম্যান, যিনি নব্বইয়ের দশকে যুগোস্লাভিয়া তিক্ত ভাঙ্গন ও যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ফুটবলে বিজয় একটি দেশের আত্মপরিচয়কে ততটাই রূপায়ন করে, যতটা করে যুদ্ধ।’ এটা প্রায়ই বলা হয় যে, ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল ১৯৯০ সালের মে মাসের একটি দিন থেকে, যেদিন স্থানীয় ফুটবল ক্লাব জাগরেব ও সার্বিয়ার বেলগ্রেডের ভক্তরা সহিংস সংঘাতে লিপ্ত হন। এই দাবি সত্য নয়, তবে এটি সত্য যে সেদিনের ওই সংঘাতের তাৎপর্য ছিল ভীষণ তীব্র। ওই ম্যাচের দুই সপ্তাহ পর যুগোস্লাভিয়ার জাতীয় ফুটবল দল একই স্টেডিয়ামে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে এসেছিল। সেদিন যুগোস্লাভীয়ার জাতীয় সঙ্গীত চলাকালে কেবল দুয়োধ্বনী দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়ান সমর্থকরা।
ক্রোয়েশিয়ার জাতীয় ফুটবল দল হিসেবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রতিনিধিত্ব করছে। ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলের সর্বোচ্চ পরিচালনা পরিষদ ক্রোয়েশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন কর্তৃক দলটি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৪ সালের মধ্যবর্তী সময়কালে ফিফা স্বীকৃতপ্রাপ্ত দল হিসেবে ব্যানোভিনা অব ক্রোয়েশিয়া এবং স্বাধীন রাষ্ট্র ক্রোয়েশিয়া উনিশটি প্রদর্শনী ক্রীড়ায় অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু ১৯৪৫ সালে ক্রোয়েশিয়া যুগোস্লাভিয়ার সঙ্গে একীভূত হলে দলটি বিলুপ্ত হয়। ১৯৪৫ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে ক্রোয়েশিয়া পৃথক দল হিসেবে প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশগ্রহণ করেনি। তখন ক্রোয়েশীয় খেলোয়াড়েরা যুগোস্লাভিয়া জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল অঙ্গনে অংশগ্রহণ করে।
ক্রোয়েশিয়া জাতীয় ফুটবল দলের ইতিহাস
যুগোস্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরেই আধুনিককালের ক্রোয়েশীয় দল ১৯৯১ সালে গঠন করা হয়। এরপর ১৯৯৩ সালে ফিফা ও উয়েফা’র সদস্যপদ লাভ করে ক্রোয়েশিয়া ফুটবল দল। প্রথমবারের মতো বড় ধরনের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশ নিয়ে তারা তাদের সক্ষমতা প্রদর্শন করে ও ১৯৯৬ সালের উয়েফা ইউরো প্রতিযোগিতায় খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। ১৯৯৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো অংশ নেয় দলটি। প্রতিযোগিতায় তারা তৃতীয় স্থান লাভ করে বিশ্ব ফুটবলে সাড়া জাগায়। দলের পক্ষে ডাভর শুকের শীর্ষ গোলদাতার ভূমিকায় অধিষ্ঠিত হন ও বিশ্বকাপের সোনার বুট লাভ করেন। এরপর থেকেই ক্রোয়েশিয়া দল আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাসমূহে নিয়মিতভাবে অংশ নিলেও ২০১০ সালের ফিফা বিশ্বকাপ ও ২০০০ সালের ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশীপে অংশ নিতে পারেনি।
ক্রোয়েশিয়া জাতীয় ফুটবল দলের অবকাঠামো
নিজেদের মাঠের অধিকাংশ খেলাই জাগরেবের ম্যাকসিমির স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও খেলার মূল্যমান অনুযায়ী স্প্লিতের পোলজাড স্টেডিয়ামসহ রিজেকার স্টেডিওন কানত্রিদা কিংবা অসিজেকের স্টেডিওন গ্রাদস্কি ভিআরটিতে অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ম্যাকসিমির স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতামূলক ৩৬ খেলায় দলটি অপরাজিত ছিল। এ ধারাবাহিকার অবসান ঘটে ২০০৮ সালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে।
ক্রোয়েশিয়া জাতীয় ফুটবল দলের সাফল্যগাঁথা
১৯৯৪ ও ১৯৯৮ সালে ফিফা কর্তৃক প্রকাশিত বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে বছরের সেরা অগ্রসরমান দলের মর্যাদা পায় ও পুরস্কৃত হয়। এ তালিকায় কলম্বিয়া দলও দুইবার স্থান পেয়েছিল। শুরুতে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ক্রোয়েশিয়ার অবস্থান ছিল ১২৫তম। কিন্তু ১৯৯৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপে দূর্দান্ত ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করে ও র্যাঙ্কিংয়ে তৃতীয় স্থানে চলে আসে যা ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে পরিবর্তনশীল দলে রূপান্তরিত হয়। ২০১৮ রাশিয়া ফুটবল বিশ্বকাপে আজ ফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়া।
ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলের অন্ধকার দিক
তুদজম্যান মারা গেছেন আগেই। কিন্তু তার শাসনামলের যেই বৈশিষ্ট্য, অর্থাৎ কর্তৃত্বপরায়ণতা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি, তার ছাপ ক্রোয়েশিয়ায় এখন অবশিষ্ট আছে কেবল ফুটবল জগতে। স্থানীয় ফুটবল জগতের সবচেয়ে বড় কর্তৃত্বপরায়ণ ক্ষমতাধর ব্যক্তিটি ছিলেন জাদ্রাভকো মামিচ। তিনি ছিলেন ডায়নামো জাগরেভ ক্লাবের প্রধান ও জাতীয় ফুটবল ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট। ক্রোয়েশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচের নির্বাচনী প্রচারে অর্থের যোগান দিতে সহায়তা করেছিলেন মামিচ। ৬ জুন মামিচকে একটি দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তিনি এখন প্রতিবেশী বসনিয়ায় পলাতক। একই মামলায় নাম আছে বর্তমান দলের দুই তারকারও: অধিনায়ক লুকা মদ্রিচ ও ডিফেন্ডার দেজান লভরেন। রাশিয়া থেকে দেশে ফিরলে মিথ্যা হলফনামা দেওয়ার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হবেন তারা।
ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলের অন্ধকার দিক এখানেই শেষ নয়। ভক্তরা ‘মাতৃভূমির জন্য! প্রস্তুত হও!’ শ্লোগান দিয়ে আসছেন বহুদিন ধরে। শুনতে সাধারণ জাতীয়তাবাদী শ্লোগান মনে হলেও, এই বিশেষ শ্লোগানের সঙ্গে স¤পৃক্ততা ছিল দেশটির উসতাশা শাসকগোষ্ঠীর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার উসতাশা শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণহত্যা সংঘটনের অভিযোগ সুবিদিত। অতীতেও বর্ণবাদের অভিযোগ উঠেছিল ক্রোয়েশিয়ান ফুটবল ভক্তদের বিরুদ্ধে। নতুন এই শ্লোগানের ফলে ফিফার সাজার মুখোমুখি ক্রোয়েশিয়া দল। তবে এই অন্ধকার দিক সত্ত্বেও, বিশ্বকাপ জিতলে নিশ্চিতভাবেই আনন্দে ফেটে পড়বে পুরো দেশ। ‘ঐতিহাসিক’ শব্দটি ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলে অতিব্যবহৃত একটি শব্দ। তবে সত্যিই যদি বিশ্বকাপ জেতে ক্রোয়েশিয়া, তাহলে এই শব্দের প্রয়োগ হবে যথার্থ।
ক্রোয়েশিয়া জাতীয় ক্রিকেট দল
আইসিসি সদস্যপদ অনুমোদন পায় ২০০১ সালে। আইসিসি সদস্য মর্যাদায় অনুমোদিত সদস্য। আইসিসি উন্নয়ন অঞ্চল ইউরোপ। ক্রোয়েশিয়া ক্রিকেট দলের অধিনায়ক জন ভুজনভিচ এবং কোচ মাইকেল গ্রিজনিক। আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রথম খেলা ২১ আগস্ট ২০০১। প্রথম খেলাটি হয় অস্ট্রিয়ার সিবার্ন ক্রিকেট গ্রাউণ্ডে ফিনল্যান্ডের বিরুদ্ধে।
১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ-ক্রোয়েশিয়া ছিল একই মানের ফুটবল দল
আপনি কী জানেন? দুই যুগ আগে বাংলাদেশ ও ক্রোয়েশিয়া একই মানের দল ছিল। ১৯৯৩ সালে ফিফা র্যাংকিংয়ে ক্রোয়েশিয়ার অবস্থান ছিল ১১৬, বাংলাদেশের ছিল ১১৯। ব্যবধান ছিল মাত্র ৪। ২৫ বছর বছরের ব্যবধানে ক্রোয়াটরা বিশ্বকাপের ফাইনালে। সেখানে বিশ্বকাপ তো দূরের কথা, এশীয় পর্যায়েও বেঙ্গল টাইগারদের দাপট নেই। এশিয়ান কাপে একবারই খেলে তারা। তাও সেই ১৯৮০ সালে। সেবার গ্রুপ পর্বেই বিদায়ঘণ্টা বাজে।
ওই বছরই প্রথম চালু হয় ফিফা র্যাংকিং। পরের গল্পটা কমবেশি সবারই জানা। এরপর শুধুই এগিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। ইউরোপীয় অঞ্চলের নামকরা কয়েকটি দলকে পেছনে ফেলে জায়গা করে নেয় ১৯৯৮-ফ্রান্স বিশ্বকাপে। প্রথমবার খেলতে এসেই সবাইকে চমকে দেয় দলটি। বাঘা বাঘা দলকে টপকে হয় তৃতীয়। পরেও সেই ধারা বজায় থাকে। মাঝে একবার শুধু কোয়ালিফাই করতে পারেনি তারা। সব মিলিয়ে পঞ্চমবারের মতো ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে খেলতে এসে বিশ্বজয় করল দ্য ব্লাজার্সরা।
তবে ক্রোয়েশিয়ার স্বপ্নযাত্রার শুরুটা হয় এরও আগে। ১৯৯৬ সালে তারা স্থান করে নেয় ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে। প্রথম দর্শনেই বাজিমাত। প্রথমবার অংশ নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে তারা। ইউরোপসেরা টুর্নামেন্টেও পাঁচবার খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা পাওয়া দেশটি। ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো শেষ আটে জায়গা করে নেয় তারা।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ শুধু পিছিয়েছে তো পিছিয়েছেই। যোজন যোজন পিছিয়ে পড়েছে ব-দ্বীপের দেশটি। ২০০৮ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন কাজী সালাউদ্দিন। তখন র্যাংকিং ছিল ১৮০। ২০১১ সালে সেটি সর্বোচ্চ ১৩৮ হলেও ক্রমান্বয়ে ফের পিছিয়েছে। পেছাতে পেছাতে এখন তলানিতে। ১৯৪তম স্থান নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে বাংলাদেশ। আর ২০ নম্বরে থেকে বিশ্ব আসরে ফুটবল রোমান্টিকদের মাত করল ক্রোয়েশিয়া।
২০০৩ সালে সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (সাফ) চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত সেটিই সর্বোচ্চ সাফল্য। এরপর আর এগোতে পারেনি। এশীয় পর্যায়ে নিজেদের অবস্থান তৈরি করা দূরে থাক, সাফেও চলে গেছে তলানিতে। একসময় এতে নিয়মিত শেষ চারে খেলত বাংলাদেশ। আর এখন মালদ্বীপ, নেপাল, আফগানিস্তান, এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গেও জিততে পারে না। পড়শি দেশ ভারত চলে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ক্রোয়েশিয়ার ফুটবল এগিয়ে যাওয়া এবং বাংলাদেশের পিছিয়ে যাওয়ার কারণগুলো স্পষ্ট। ইউরোপিয়ান দেশটির ফুটবল অবকাঠামো এবং আমাদের অবকাঠামোর মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তারা তৃণমূল থেকে ফুটবলার খুঁজে বের করেছে। আমরা পুরোপুরি ব্যর্থ। এখন তো জেলাগুলোতেই লিগ হয় না। স্কুল থেকে তো উঠে গেছে বললেই চলে।